Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

‘দৃষ্টিবিভ্রম’-এর ব্যাখ্যা চান রাজ্যপাল

রাজভবন সূত্রের খবর, সরকার বিষয়টিকে ‘অপটিকাল ইলিউশন বা দৃষ্টিবিভ্রম’ বলে ব্যাখ্যা করেছে। কিন্তু রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় এতে সন্তুষ্ট নন। তিনি বিষয়টি আরও বিশদ জানতে চান।

রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।—ফাইল চিত্র।

রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।—ফাইল চিত্র।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:৪৮
Share: Save:

একই বিলের দু’টি বয়ান কেন? এই প্রশ্নে ঝুলে রয়েছে গণপিটুনি প্রতিরোধ বিলে রাজ্যপালের অনুমোদন।

রাজভবন সূত্রের খবর, সরকার বিষয়টিকে ‘অপটিকাল ইলিউশন বা দৃষ্টিবিভ্রম’ বলে ব্যাখ্যা করেছে। কিন্তু রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় এতে সন্তুষ্ট নন। তিনি বিষয়টি আরও বিশদ জানতে চান। তাই এই বিলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির আধিকারিকদের ডেকে পাঠিয়েছেন রাজ্যপাল। এই প্রশ্নের মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত তিনি বিলটি নিয়ে আর কোনও পদক্ষেপ করতে রাজি নন। ফলে দু’মাস কেটে গেলেও গণপিটুনি সংক্রান্ত বিলটির আইনে পরিণত হওয়া কার্যত বিশ বাঁও জলে। এ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে রাজ্যপাল ধনখড় অবশ্য বলেন, ‘‘আমার কাছে বিধানসভার কাজ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। তাতে বিলম্বের কোনও অবকাশ নেই।’’

গত অগস্টে বিধানসভায় দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল (প্রিভেনশন অব লিঞ্চিং) বিলটি পাশ হয়। রাজভবন সূত্র জানাচ্ছে, বিল নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা, আর রাজ্য বলছে ‘দৃষ্টিবিভ্রম’। তাই এ ব্যাপারে সরকার নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট না করা পর্যন্ত রাজ্যপাল কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। তাই ইতিবাচক পদক্ষেপ করে বিলের বিলম্ব দূর করতে হবে রাজ্য সরকারকেই। বিষয়টি ইতিমধ্যেই নবান্নকে জানিয়েছে রাজভবন।

জটিলতা কী নিয়ে? রাজভবন সূত্রের ব্যাখ্যা, বিধানসভায় পেশ করার আগে বিধায়কদের সংশ্লিষ্ট বিলটি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যে বিলটি বিধানসভায় শেষ পর্যন্ত পেশ করা হয়, সেটি ছিল আগেরটির থেকে ভিন্ন। কারণ, প্রথম বিলটিতে সর্বোচ্চ সাজা ছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আর দ্বিতীয়টিতে সর্বোচ্চ সাজার প্রস্তাব দেওয়া হয় মৃত্যুদণ্ড। অথচ এর জন্য বিধানসভায় কোনও সংশোধনী দেওয়া হয়নি। উপরন্তু এই দু’টি বিলের নম্বরও এক। বিষয়টি নিয়ে বিরোধীরা লিখিত ভাবে আপত্তি জানিয়েছিলেন রাজ্যপালের কাছে। তার পরেই গত সেপ্টেম্বরে রাজ্যপাল বিধানসভার সচিবালয়ে চিঠি দিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান। কিন্তু রাজভবন সূত্রের খবর, বিধানসভার সচিবালয়ের উত্তরে রাজ্যপাল ‘সন্তুষ্ট’ হননি। এর পরে তিনি চিঠি পাঠান স্বরাষ্ট্র দফতরে। স্বরাষ্ট্র দফতরও ‘ছাপার ভুলের দায়’ চাপায় অন্য দফতরের ঘাড়ে। এর পর রাজ্যপাল আইন দফতরকে চিঠি দিয়ে ব্যাখ্যা চান।

সেই চিঠির উত্তরে গত ১৮ অক্টোবর ‘অপটিকাল ইলিউশন’ বা দৃষ্টিবিভ্রমের ব্যাখ্যা দেয় আইন দফতর। এত বড় ঘটনায় দৃষ্টিবিভ্রম কী ভাবে ঘটল এবং কোন অর্থে এবং কেন দৃষ্টিবিভ্রম বলা হচ্ছে, তা-ই জানতে চেয়েছেন রাজ্যপাল। যদিও এই ব্যাখ্যা এখনও পৌঁছয়নি রাজ্যপালের কাছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের বক্তব্য, ‘‘পরস্পরের ঘাড়ে দায় চাপানোর বদলে দফতরগুলির নিজেদের মধ্যে সমন্বয় রাখলে বিষয়টি নিয়ে অযথা বিলম্ব এড়ানো যেত।’’

রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের কাছে বুধবার বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘‘পুরো ফাইল না দেখে শব্দ ধরে ধরে বলা সম্ভব নয়। তবে রাজ্যপাল অফিসারদের ডেকে পাঠালে নিশ্চয় তাঁদের পাঠানো হবে। এত দিন ছুটি ছিল, কাল থেকে কাজ শুরু হবে।’’ প্রসঙ্গত, গণপ্রহার সংক্রান্ত একটি মামলার প্রেক্ষিতে দেশের সব ক’টি রাজ্যকে সুসংহত পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তার পর পৃথক আইন তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য।

বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, সংবিধানের ২০৭ ধারা অনুযায়ী গণপিটুনি প্রতিরোধের যে বিলটি বিধানসভায় পেশ করার ছাড়পত্র দিয়েছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়, সেটিকে নিয়েই একাধিক আপত্তি তুলেছেন বিরোধীরা। তাই অনুমোদন দেওয়ার আগে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে চাইছেন রাজ্যপাল।

রাজভবন সূত্রের বক্তব্য, এ ধরনের ক্ষেত্রে রাজ্যপাল বিলটিতে অনুমোদন দিতে পারেন অথবা সংশোধনের প্রস্তাব করে রাজ্য সরকারকে তা ফেরত দিতে পারেন। তৃতীয় বিকল্প হিসেবে রাষ্ট্রপতির মতামতও চাইতে পারেন। সরকারের স্পষ্ট ব্যাখ্যা রাজ্যপাল পেলে তবেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত।

বিলটিতে সর্বোচ্চ সাজা হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান সংযুক্ত করা নিয়েও আপত্তি তুলেছেন বিরোধীরা। তাঁদের বক্তব্য, এই বিধান আইন কমিশনের মনোভাবের পরিপন্থী এবং তা পশ্চাদ‌্গামিতার লক্ষণ। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রের বক্তব্য, নতুন কোনও আইনে মৃত্যুদণ্ডের প্রস্তাব করা যাবে না, এমন কোনও বাধা দেশের সংবিধানে নেই। ফলে বিধানসভা সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের প্রস্তাব করে সংবিধান অমান্য করেনি। আবার বিরোধীদের মতামতও রাজ্যপাল এখনই উড়িয়ে দিতে চান না। ‘দৃষ্টিবিভ্রম’ বিষয়ে সরকারের স্পষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়ার পরে অন্য দিকগুলি খতিয়ে দেখা হবে।

সংবিধান বিশেষজ্ঞ সুভাষ কাশ্যপের বক্তব্য, ‘‘সংবিধানে বলা রয়েছে, রাজ্যপাল রাজ্যের মন্ত্রী পরিষদের পরামর্শ মেনে চলবেন। কিন্তু তাঁর নিজস্ব বিবেচনার ভিত্তিতে বিশেষ ক্ষমতা তিনি প্রয়োগ করতে পারেন। রাজ্যপাল যদি মনে করেন, রাজ্যের বিষয় হলেও সামগ্রিক ভাবে রাজ্য বিধানসভায় পাশ হওয়া কোনও বিলের প্রভাব সারা দেশে পড়তে পারে, তা হলে তিনি রাষ্ট্রপতির মতামত চাইতেই পারেন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বিলে সম্মতি প্রদানের সিদ্ধান্ত ঝুলিয়ে রাখা যথাযথ কি না, তার পিছনে রাজনীতি রয়েছে কি না, এ সব প্রশ্ন তোলা যেতেই পারে। কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী রাজ্যপালের বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy