Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

পড়ুুয়া বিক্ষোভে বিদায়, কিন্তু আজও যাদবপুর যাবেন, বললেন ধনখড়

ছাত্রছাত্রীদের ক্ষোভ‌ সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে ধনখড়ের অবস্থানের বিরুদ্ধেই। তার জেরে রাজ্যপাল এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্টের বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেননি। পড়ুয়াদের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিদায় নেন।

ছাত্র বিক্ষোভে গাড়িবন্দি রাজ্যপাল।—নিজস্ব চিত্র।

ছাত্র বিক্ষোভে গাড়িবন্দি রাজ্যপাল।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:৪০
Share: Save:

তাঁকে ঘিরে ছাত্র-ক্ষোভ ধূমায়িত হচ্ছিল বেশ কিছু দিন ধরে। সোমবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে প্রবল ছাত্র-বিক্ষোভেরই মুখে পড়লেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। তার পরেও তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, আজ, মঙ্গলবার সমাবর্তনে তিনি আবার যাবেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছাত্র নেতৃত্ব ডিগ্রি প্রাপক পড়ুয়াদের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, সমাবর্তনে রাজ্যপালের হাত থেকে কেউ যেন ডিগ্রি না-নেন।

ছাত্রছাত্রীদের ক্ষোভ‌ সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে ধনখড়ের অবস্থানের বিরুদ্ধেই। তার জেরে রাজ্যপাল এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্টের বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেননি। পড়ুয়াদের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিদায় নেন।

এ দিন কোর্ট বৈঠকে যোগ দিতে বেলা ২টোর কিছু আগে যাদবপুরে পৌঁছন রাজ্যপাল। কিন্তু অরবিন্দ ভবনের সামনেই তাঁর গাড়ি ঘিরে কালো পতাকা হাতে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন পড়ুয়ারা। অনেক পোস্টারে লেখা, ‘বিজেপি অ্যাক্টিভিস্ট গভর্নর গো ব্যাক’, ‘পদ্মপাল, গো ব্যাক’, ‘সিএএ মানছি না, এনআরসি মানব না’। অরবিন্দ ভবনের বাইরে চলে আসেন উপাচার্য সুরঞ্জন দাস এবং সহ-উপাচার্যেরা। ঘেরাও অবস্থাতেই রাজ্যপালের গাড়ি এক নম্বর গেটের দিকে চলে যায়। সেখানে ছাত্রদের একাংশ রাজ্যপালকে জানান, কিছু প্রশ্ন আছে। তৃণমূল-সমর্থক পড়ুয়া ও শিক্ষাকর্মীরা রাজ্যপালকে অরবিন্দ ভবনে ঢুকতে দিতে রাজি হচ্ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত প্রবল স্লোগানের মধ্যে ওই ভবনে ঢোকেন ধনখড়। যেখানে কোর্ট বৈঠক হয়, সেই কমিটি রুমের আগে ‘এমপ্লয়িজ ওয়েলফেয়ার’ দফতরে ঢুকে একটি চেয়ারে বসে পড়েন তিনি। উপাচার্যও সেখানে পৌঁছে যান। তৃণমূল-সমর্থক পড়ুয়া ও শিক্ষাকর্মীরা তখনও বাইরে ধনখড়-বিরোধী ধ্বনি দিয়ে চলেছেন। কিছু পরে রাজ্যপাল জানান, তিনি কোর্ট বৈঠকে থাকছেন না। পড়ুয়াদের প্রশ্নের উত্তর দিয়েই চলে যাবেন।

আরও পড়ুন: পড়ুয়াদের যৌথ প্রতিবাদ, একই পথে বড়রাও

পড়ুয়ারা প্রথমেই ‘অসাংবিধানিক’ সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে প্রশ্ন করেন। উত্তর না-দিয়ে এই নিয়ে আলোচনার জন্য পড়ুয়াদের রাজভবনে আমন্ত্রণ জানান ধনখড়। পড়ুয়ারা দাবি তোলেন, সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের ক্যাম্পাসে আসার দিন এবিভিপি যে ইউনিয়ন রুম ভাঙচুর করেছিল, রাজ্যপাল তার নিন্দা করুন। সেই বিষয়েও স্পষ্ট কিছু বলেননি ধনখড়। পড়ুয়ারা জামিয়া মিলিয়া ও আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি হামলার বিষয়ে প্রশ্ন করলে ধনখড়ের জবাব: তিনি জানেন না। সিএএ-বিরোধী আন্দোলনে প্রাণহানি সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবেও এক কথা: তিনি জানেন না। পড়ুয়ারা হায়দরাবাদ ধর্ষণ কাণ্ডে এনকাউন্টারে চার অভিযুক্তের মৃত্যুর প্রসঙ্গ তুললে তিনি জানান, বঙ্গের বাইরের বিষয়ে তিনি মতামত দেবেন না। রাজ্যের এসসি, এসটি বিল কেন আটকে রেখেছেন তিনি? ধনখড় জানান, সরকার বললেও তিনি বিলে সায় দেবেন না। বিষয়টি তাঁকে বোঝাতে হবে। তার পরে প্রবল বিক্ষোভের মধ্যে বেরিয়ে যান ধনখড়।

আরও পড়ুন: ছেলেদের কথা শুনে ভেঙে পড়েছেন বৃদ্ধ

ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির বিদায়ী ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক অভীক দাস বলেন, ‘‘কোনও বিষয়েই রাজ্যপালের কাছে কোনও উত্তর ছিল না। সিএএ-বিরোধী আন্দোলনে মৃত্যুর ঘটনা নাকি উনি জানেন না! তাঁর এই সংবেদনহীন মনোভাব আমাদের অবাক করেছে।’’ অভীক এবং আর্টস ফ্যাকাল্টির বিদায়ী ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক দেবরাজ দেবনাথ প্রত্যেক ডিগ্রি-প্রাপক পড়ুয়ার কাছে আবেদন জানান, সমাবর্তনে রাজ্যপালের হাত থেকে কেউ যেন ডিগ্রি না-নেন। এই আচার্যকে বয়কট করা হোক, সমাবর্তনকে নয়। তবে সিএএ-র প্রতিবাদে বেশ কিছু পড়ুয়া ইতিমধ্যেই এই সমাবর্তনে ডিগ্রি না-নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

পরে রাজ্যপাল টুইটে এবং উপাচার্যকে ফোনে জানান, তিনি সন্ধ্যায় রাজভবনে কোর্ট বৈঠক ডাকছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈঠকে যেন কোনও প্রস্তাব পাশ করা না-হয়। কিন্তু উপাচার্যের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্ট বৈঠক শুরু হয়ে যায়। ছাত্র-বিক্ষোভ এড়াতে সমাবর্তনের বিশেষ পর্ব স্থগিত রাখার যে-সিদ্ধান্ত শনিবার কর্মসিমিতির বৈঠকে নেওয়া হয়েছিল, তা অবৈধ বলে জানিয়েছিলেন রাজ্যপাল। এ দিন বৈঠক শেষে উপাচার্য অবশ্য জানান, সমাবর্তনের বিশেষ পর্ব (স্পেশাল কনভোকেশন) স্থগিত থাকছে। আজ, মঙ্গলবার সমাবর্তন হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি উল্লেখ করে তিনি জানান, কর্মসমিতির বৈঠক অবৈধ নয়। উপাচার্য বলেন, ‘‘আচার্য চাইলে সমাবর্তনে আসতে পারেন। তিনি এলে পৌরোহিত্য করবেন।’’ বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তনের অনুষ্ঠান সূচি পাঠিয়ে দিয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অভিভাবক যদি পরিবারে সেপাই নিয়ে ঢোকেন, সেটা যেমন আশ্চর্যের, তেমনই যাদবপুরের আচার্য যদি অভিভাবকত্ব দাবি করেন, তা হলে তিনি এটা ঠিক করছেন কি না, সেটা তাঁর উপরেই ছেড়ে দিলাম। তিনিই উত্তর দেবেন।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy