তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। ছবি রাজ্যপালের টুইটার থেকে।
সারদা-কাণ্ডে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে গ্রেফতারের দাবি নিয়ে রাজ্যপালের কাছে গিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধিদল। তাঁদের বক্তব্য শোনার আগে রাজ্যপালই উল্টে রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে তাঁর ক্ষোভের ঝাঁপি খুলে বসলেন! রাজভবন থেকে বেরিয়ে তৃণমূলের নেতারা প্রথমে ‘ইতিবাচক আলোচনার’র কথা বললেও পরে রাজ্যপালের বিবৃতি শুনে তাঁদেরও পক্ষপাতিত্বের পাল্টা অভিযোগ তুলতে হল।
পূর্বনির্ধারিত সূচি মেনে মঙ্গলবার মন্ত্রী ব্রাত্য বসুর নেতৃত্বে তৃণমূলের একটি প্রতিনিধিদল গিয়েছিল রাজভবনে। সেই দলে ছিলেন মন্ত্রী শশী পাঁজা, বিধায়ক তাপস রায়, ফিরোজা বিবি, সাংসদ অর্জুন সিংহ, দলের নেতা কুণাল ঘোষ, সায়নী ঘোষ ও বিশ্বজিৎ দেব। সূত্রের খবর, ব্রাত্যেরা পৌঁছতেই রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় তাঁদের বলতে শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী কী ভাবে তাঁকে অসম্মান করছেন, শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা তাঁকে লাগাতার আক্রমণ করছেন, প্রশাসনিক কর্তারা কথা শুনছেন না ইত্যাদি যাবতীয় প্রসঙ্গ। বেশ কিছু সময় এই বক্তব্য চলতে থাকার পরে তৃণমূল নেতারা রাজ্যপালকে বলেন, তাঁরা এ দিন নির্দিষ্ট একটি বিষয়ে কথা বলতে এসেছেন। সূত্রের খবর, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনে রাজ্যপাল প্রথমে বলেন, মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ শুনে ব্যবস্থা নিতে বলতে পারেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তাঁর কী করণীয় আছে? রাজ্যপালকে বলা হয়, তিনি অন্তত প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করতে পারেন। রাজ্যপাল বিষয়টি দেখবেন বললেও তাঁর ওই আশ্বাস তৃণমূলের প্রতিনিধিদলকে তেমন কোনও ভরসা জোগায়নি বলেই সূত্রের দাবি। তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘দাবি জানাতে গেলাম আমরা। আর ‘মন কী বাত’ শুনতে হল রাজ্যপালের!’’
রাজভবনের বাইরে তৃণমূল নেতা কুণাল অবশ্য বলেন, ‘‘বহু বছর পরে রাজ্যপালের সঙ্গে তৃণমূলের প্রতিনিধিদের দীর্ঘ বৈঠক হল! বৈঠক ইতিবাচক হয়েছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে কেন্দ্রের তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে রাজনৈতিক কারণে অপপ্রয়োগ করছে বিজেপি। এ কথা রাজ্যপালকে জানিয়েছি আমরা। যাঁরা বিজেপিতে গিয়ে নাম লেখাচ্ছেন, তাঁদের নিয়ে তদন্ত হচ্ছে না। বিজেপি গণতন্ত্র বিরোধী চক্রান্ত করছে। এ কথা বিস্তারিত ভাবে জানানো হয়েছে। সুদীপ্ত সেনের লিখিত বিবৃতিতে এমন নেতার নাম রয়েছে, যিনি পরবর্তী সময়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।’’ বিজেপিতে গিয়েছেন বলেই কি শুভেন্দুকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না, এই প্রশ্নও তাঁরা তুলেছেন বলে কুণাল জানান।
কিন্তু এর পরে দেখা যায় তাঁর ভিডিয়ো বিবৃতিতে রাজ্যপাল ধনখড় বলছেন, ‘‘তৃণমূলের প্রতিনিধিদল বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। কিন্তু সংবিধানের কোন সংস্থানে রাজ্যপাল এই ক্ষেত্রে পদক্ষেপ করতে পারেন, তা তাঁরা বলতে পারেননি। তবে আমি ওঁদের দাবির বিষয়টি দেখব বলেছি।’’ এর পরেই রাজ্য পরিচালনা সংক্রান্ত একগুচ্ছ অভিযোগের কথা রাজ্যপাল বলেন, যা তাঁর মুখে হামেশাই শোনা যায়। ফের তিনি অভিযোগ করেন, রাজ্যে আইনের শাসন নেই। চলছে শাসকের আইন।
রাজ্যপালের এমন বক্তব্য জানার পরে মন্ত্রী ব্রাত্য আবার বলেন, ‘‘উনি তো রাজ্যপাল, কোনও একটি দলের প্রতিনিধি নন। আমরা একটা প্রতিনিধিদলের হয়ে কিছু বক্তব্য জানিয়ে এলাম। সেই বিষয়ে শব্দ খরচ না করে উনি যদি এক তরফা ভাবেই টুইটে লিখতে থাকেন, তা হলে খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আইনের শাসন আমরাও চাই। সেই সঙ্গেই চাই, উনি সকলের রাজ্যপাল হোন!’’
রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাটার্য অবশ্য বলেন, ‘‘গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে যে কেউ যে কোনও বিষয়ে প্রতিবাদ করতেই পারে। কিন্তু মনে রাখতে হবে আদালতের নির্দেশে, আদালতের নজরদারিতে সিবিআই তদন্ত করছে। কোনও অসঙ্গতি থাকলে আদালতে গিয়ে বলা উচিত। এখানে রাজ্যপাল বা অন্য কারও কিছু করার নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy