মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সিভি আনন্দ বোস (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
আটকে থাকা বিল নিয়ে এত দিন রাজভবনকে দায়ী করে আক্রমণ করেছিল শাসকদল। এ বার আটকে থাকা বিল নিয়ে রাজ্য সরকার এবং বিধানসভার সচিবালয়কে একযোগে পাল্টা চিঠি পাঠালেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। সম্প্রতি রাজভবন থেকে জোড়া চিঠি পাঠানো হয়েছে নবান্ন এবং বিধানসভার সচিবালয়ে। সেই চিঠিতে জানতে চাওয়া হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় পাশ হওয়া ১২টি বিল নিয়ে রাজভবন যে ব্যাখ্যা তলব করেছিল তা কোন অবস্থানে রয়েছে? সূত্রের খবর, রাজভবনের বিশেষ সচিব ওই চিঠি পাঠিয়েছেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে। চিঠির সঙ্গে ১২টি বিলের প্রতিলিপিও পাঠানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। আটকে থাকা বিলে রাজ্যপাল সম্মতি দেওয়ার আগে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বিলগুলিতে ছাড়পত্র দিতে রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিদের জরুরি ভিত্তিতে আলোচনার ব্যবস্থা করতেও আবেদন করা হয়েছে। রাজভবনের প্রশ্নের ব্যাখ্যা মিললে বিলগুলিকে অনুমোদন দেওয়া হতে পারে বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে ওই চিঠিতে। সম্প্রতি রাজভবনে নিজের এক বছরের কার্যকাল পুরো করেছেন সিভি আনন্দ বোস। বর্ষপূর্তির দিনেই রাজ্য সরকারকে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করার বার্তা দিয়েছিলেন তিনি। এক্ষেত্রে রাজভবনের একাংশের ব্যাখ্যা, যাতে দ্রুত ওই ১২টি বিলে ছাড়পত্র দিয়ে রাজ্য সরকারের কাজের পথ প্রশস্ত করা যায় সেই লক্ষ্যেই চিঠিটি পাঠানো হয়েছে।
এ বছর নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, সাড়ে ১২ বছরে ২২ বিল আটকে রয়েছে রাজভবনে। তাঁর দাবি ছিল, ১৫তম বিধানসভায় ২০১১-১৬ পর্যন্ত রাজভবনে আটকে রয়েছে তিনটি বিল। ১৬তম বিধানসভায় ২০১৬-২০২১ পর্যন্ত চারটি বিল আটকে রয়েছে। আর ২০২১-২৩ সালে মাত্র আড়াই বছরে ১৫টি বিল আটকে রয়েছে। বিধানসভায় পাশ হওয়া গণপিটুনি বিল, হাওড়া পুরসভা সংক্রান্ত দুটি বিল, বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত একঝাঁক বিল এখনও আটকে রয়েছে রাজভবনে। এই সাড়ে ১২ বছরে এমকে নারায়ণন, কেশরীনাথ ত্রিপাঠী, জগদীপ ধনখড়, লা গণেশন এবং বর্তমান রাজ্যপাল আনন্দ বোসের আমলে রাজভবনে এই বিল আটকে থাকাকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছিলেন স্পিকার বিমান। পর দিনই রাজভবন থেকে সেই অভিযোগের ‘জবাব’ দেওয়া হয়। রাজভবন থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়, কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল যে, ১২ বছরে ২২টি বিল আটকে রয়েছে রাজভবনে। অভিযোগটি খতিয়ে দেখতে বুধবারই রাজভবনে একটি বৈঠক ডেকেছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। সেই বৈঠকে যাবতীয় বিষয় খতিয়ে দেখার পর বিবৃতি দিয়ে রাজভবন জানায়, কোনও বিল রাজভবনের জন্য আটকে নেই।
২০১১-২৩ সাল পর্যন্ত যে ২২টি বিল আটকে থাকার কথা স্পিকার জানিয়েছিলেন, সেই বিলগুলি কোন পর্যায়ে রয়েছে, তার ফিরিস্তিও বিবৃতিতে তুলে ধরেছিল রাজভবন। ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রোটেকশন অফ ইন্টারেস্ট অফ ডিপোজ়িটার্স ইন ফিন্যান্সিয়াল এস্টাবলিশমেন্টস বিল ২০১৩’ শর্তসাপেক্ষে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পাওয়ার পর তা ২২ এপ্রিল ২০১৫ সালে রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি, জেসপ এবং ডানলপ অধিগ্রহণ নিয়ে বিধানসভায় পাশ হওয়া দু’টি বিল ২০১৬ সাল থেকে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য পদে রাজ্যপালকে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে বসানোর জন্য বেশ কয়েকটি বিল পাশ করা হয়েছিল ২০২২ সালে। সেই সব ক’টি বিলকেই বিচারাধীন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এমন বিলের সংখ্যা সাত। ১২টি বিল প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। এ বার সেই ১২টি বিলের বিষয়ে রাজ্য সরকার এবং বিধানসভা সচিবালয়ের অবস্থান জানতে চেয়ে পাল্টা রাজ্যকে প্রশ্নের মুখে ফেলার কৌশল নিয়েছে রাজভবন, এমনটাই মনে করছে নবান্নের একটি সূত্র। তবে রাজ্য সরকার বা বিধানসভা থেকে এখনও রাজভবনে কোনও জবাব পাঠানো হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy