বাঁ দিক থেকে বুদ্ধদেব সাউ, সিভি আনন্দ বোস। — ফাইল ছবি।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউকে অপসারণ করলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন। আচার্য বোস যদিও তাতে অনুমতি দেননি। সমাবর্তন নিয়ে সেই জটিলতার মধ্যেই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন রাজ্যপাল। রাজভবন থেকে উপাচার্যকে জানিয়ে দেওয়া হয়, তাঁকে তাঁর কর্তব্য থেকে অব্যাহতি দেওয়া হল। এর পরেই প্রশ্ন উঠছে, রবিবার কি আদৌ যাদবপুরে হবে সমাবর্তন? পাশাপাশি, আরও একটি প্রশ্ন তুলেছে শিক্ষামহল। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, উপাচার্য নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে রাজ্যপালের কোনও ভূমিকা থাকবে না। তার পরেও কি অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্যকে সরানোর ক্ষমতা রয়েছে রাজ্যপালের? এ নিয়ে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করে রাজ্যপালকে একহাত নিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তিনি লেখেন, রাজ্যের উচ্চশিক্ষার আবহ ‘ধ্বংস’ করছেন তিনি। একটি সংবাদ মাধ্যমে বুদ্ধদেব জানিয়েছেন, ‘মুক্ত’ লাগছে তাঁর। তিনি আড়াই হাজার পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে লড়েছেন।
রবিবারের সমাবর্তন নিয়ে জানতে আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসুকে ফোন করা হয়। তবে তাঁর মোবাইল সুইচড অফ ছিল। অপসারিত উপাচার্য বু্দ্ধদেবকেও ফোনে পাওয়া যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অমিতাভ দত্ত জানান, সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তনের কাজ চলেছে। তিনি তা দেখেশোনা করেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বার হন। পরে তিনি ফোনে জানতে পারেন উপাচার্যের অপসারণের কথা। যদিও সরকারি ভাবে এই নিয়ে কিছু জানতে পারেননি তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, আচার্যের অনুমতি ছাড়া সমাবর্তন যাদবপুরের ইতিহাসে নজিরবিহীন। শিক্ষকদের একাংশ বলছেন, সমাবর্তনে তাঁদের আমন্ত্রণও জানানো হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের রীতি অনুযায়ী, আচার্যের সম্মতি ছাড়া হয় না সমাবর্তন। তার পরেও কী ভাবে তা হচ্ছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে। ইসি (কর্মসমিতি)-র বৈঠকে প্রস্তাব ওঠে, সমাবর্তন করে পড়ুয়াদের হাতে ডিগ্রি তুলে দেওয়া হোক। উপাচার্য জানিয়েছিলেন, পড়ুয়াদের স্বার্থেই তাই সমাবর্তন করা হচ্ছে। এ বার সেই উপাচার্যই অপসারিত। নতুন করে প্রশ্ন উঠছে, রবিবার কি হবে সমাবর্তন?
বিভিন্ন মহলে এই প্রশ্নও উঠছে যে, রাজ্যপাল কি আদৌ উপাচার্যকে অপসারণ করতে পারেন? কারণ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, তিনি আর কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনও উপাচার্যকে নিয়োগ বা অপসারণ করতে পারেন না। তিনি শুধু সার্চ কমিটির জন্য পাঁচটি মনোনয়ন দিতে পারেন। এই পরিস্থিতিতে তিনি কি আদৌ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ থেকে বুদ্ধদেবকে সরাতে পারেন?
প্রতি বছরের ২৪ ডিসেম্বর যাদবপুরে সমাবর্তন হয়। নীতি মেনে সমাবর্তনের জন্য যাদবপুরে প্রতি বছর কোর্টের বৈঠক করতে হয়। তার জন্য প্রয়োজন হয় আচার্য তথা রাজ্যপালের অনুমতি। কিন্তু এ বছর আইনি জটিলতার কারণ দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্টের বৈঠকে অনুমতি দেননি আচার্য তথা রাজ্যপাল। তার পরেই সমাবর্তন হবে কি না, তা নিয়ে তৈরি হয় অনিশ্চয়তা। যদিও নির্ধারিত দিনেই সমাবর্তনের কথা জানিয়ে দেন কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায় রাজ্য শিক্ষা দফতর। এর মাঝেই রাজভবনের তরফে সিদ্ধান্ত।
রাজভবন সূত্রে জানা গিয়েছিল, যাদবপুরে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট নন রাজ্যপাল। আর সেই কারণেই তিনি সমাবর্তন নিয়ে বৈঠকের অনুমতি দেননি। প্রথম বর্ষের ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার পর রাজ্যপালের নির্দেশ ছিল, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে দোষীদের। কিন্তু সেই নির্দেশ এখনও কার্যকর হয়নি। বেকসুর খালাস না পাওয়া পর্যন্ত অভিযুক্তদের শুধু মাত্র বিশ্ববিদ্যালয় এবং হস্টেলে ঢোকার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আর কোনও পদক্ষেপ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে করা হয়নি। আর সেই কারণেই সমাবর্তন অনুষ্ঠান নিয়ে রাজ্যপাল বোস কোনও সিদ্ধান্ত জানাননি বলে রাজভবন সূত্রে খবর। রাজভবন সূত্রে এ-ও জানা গিয়েছিল, যত ক্ষণ না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেবেন, তত দিন কোর্ট বৈঠকে বসার অনুমতি দেবেন না রাজ্যপাল। তাঁর অনুমতি ছাড়াই সমাবর্তনের আয়োজন করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ বার তা হবে কি না, সেই নিয়ে ফের তৈরি হল অনিশ্চয়তা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy