রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। —ফাইল ছবি।
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের ‘রিপোর্ট কার্ডে’র জবাব দিয়ে ন’পাতার চিঠি দিয়েছিল রাজ্য। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে দুর্নীতি, হিংসার অভিযোগ তুলে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিলেন রাজ্যপাল। রাজভবনের তরফে এমনই জানানো হয়েছে। রাজভবনের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে যে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
রাজভবনের তরফে আরও জানানো হয়েছে, এই সমস্ত অভিযোগের সত্যাসত্য খতিয়ে দেখবে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি। কমিটির নেতৃত্ব দেবেন সুপ্রিম কোর্ট কিংবা কলকাতা হাই কোর্টের কোনও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। রাজভবনের এই সিদ্ধান্তে রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত আরও তুঙ্গে উঠল বলেই মনে করা হচ্ছে। রাজ্যপালের তদন্তের নির্দেশ প্রসঙ্গে মুখ খুলে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে লেখেন, “আমরা জানি সরকার এক্স, ফেসবুকের মতো সমাজমাধ্যমের দ্বারা পরিচালিত হয় না। তাই নির্দেশের সংবাদটি গণমাধ্যমের সঙ্গে সরকারের কাছেও পৌঁছনো প্রয়োজন। একই সঙ্গে নির্দেশের একটি অংশ তুলে ধরে রাজ্যপালকে কটাক্ষ করেন ব্রাত্য। লেখেন, “আচার্য এবং রাজ্যপাল তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হল রাজ্যপালের ক্ষমতা কি আচার্য প্রয়োগ করতে পারেন?”
রাজ্যপালের বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া নিয়ে তাঁকে কটাক্ষ করেছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের অধ্যাপক সংগঠন ওয়েবকুপা। সংগঠনের সহ সভাপতি মণিশঙ্কর মণ্ডল বলেন, “খুব গরম পড়েছে। তাই রাজ্যপালের মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। রাজ্যের বিশ্বিবিদ্যালয়গুলিতে যে সুষ্ঠু ভাবে পঠনপাঠন চলছে, তা সহ্য করতে পারছেন না উনি। রাজ্যপাল যতই এই সব করে পঠনপাঠন বন্ধ করার চেষ্টা করুন, আমরা তাঁর এই কাজকে কখনওই সফল হতে দেব না।”
শুক্রবার রাজ্যের চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের মাধ্যমে রাজ্যপাল রাজ্যের ক্ষমতা খর্ব করতে চাইছেন বলে অভিযোগ তোলা হয়। একই সঙ্গে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলা হয়, বিচারাধীন বিষয় নিয়ে ধৈর্য রাখতে পারছেন না রাজ্যপাল।
সম্প্রতি গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্যকে পদ থেকে সরানো নিয়ে আবার প্রকাশ্যে আসে রাজ্য-রাজ্যপালের সংঘাত। সেই ঘটনায় রাজ্যপাল তথা আচার্যের মনে ‘ক্ষোভ পুঞ্জীভূত’ হয়। গত বুধবার ‘রাজ্যপালের রিপোর্ট কার্ড’ নামে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলা হয় ‘‘রাজ্য সরকারের উচ্চশিক্ষা দফতরের বেআইনি আদেশে যে সকল উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ স্তব্ধ করে রেখেছেন, আচার্য তাঁদের সতর্ক করছেন।’’ পশ্চিমবঙ্গ সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ‘ক্ষমতা কুক্ষিগত’ করতে চাইছে বলেও অভিযোগ করা হয় সেখানে। রাজভবনের বিবৃতিতে সুপ্রিম কোর্ট এবং হাই কোর্টের আদেশের কথা উল্লেখ করে আচার্যের ক্ষমতা ‘স্মরণ’ করানো হয়।
শুক্রবার সেই রিপোর্ট কার্ডেরই জবাব দেয় রাজ্য। রাজ্যের বক্তব্য, রাজ্যের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই একক ভাবে পশ্চিমবঙ্গের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে পরিচালিত করতে চাইছেন রাজ্যপাল বোস। সুপ্রিম কোর্টের পুরনো নির্দেশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে রাজ্যের চিঠিতে বলা হয়, রাজ্যপাল নিয়ম মেনে চলছেন না। তিনি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে ‘ধ্বংস করে’ রাজ্যের পড়ুয়াদের ‘অনিয়শ্চতা’র মুখে ফেলতে চাইছেন। রাজ্যের আরও অভিযোগ, যোগ্য ব্যক্তিদের উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ করছেন না রাজ্যপাল। এর ফলে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি হচ্ছে না বলেও দাবি করা হয়েছে।
সম্প্রতি তৃণমূলের অধ্যাপক সংগঠন ‘ওয়েবকুপা’র সভা বসেছিল গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সভাপতি হিসাবে সেখানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। ঘটনাচক্রে, সেই সভার পরে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদ থেকে অপসারিত হন রজতকিশোর। তার পরেই সোমবার রাজ্যপালের প্রতি ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। ‘এবিপি আনন্দ’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্রাত্য বলেন, ‘‘এই লোকটার (রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস) পাগলামি এবং বোকামি দেখতে দেখতে রাজ্যবাসী ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে।”
বৃহস্পতিবার সকালে রাজভবনের এক্স হ্যান্ডল (সাবেক টুইটার) থেকে একটি পোস্ট করা হয়। তাতে লেখা ছিল, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাজ্যপালের সম্পর্ক ‘নষ্ট’ হয়েছে। রাজভবনের সেই পোস্টকে উদ্ধৃত করে পোস্ট করে সংবাদ সংস্থা পিটিআইও। কিন্তু বেলা গড়াতে দেখা যায় রাজভবনের দু’টি পোস্ট মুছে গিয়েছে। কিন্তু পিটিআই তাদের পোস্ট রেখে দেয়। পিটিআই-এর তরফে জানানো হয়, রাজ্যপাল বোস ব্রাত্যকে সরানোর সুপারিশ করেছেন। গোটা বিষয়টিকে ‘হাস্যকর’ বলে অভিহিত করেন শিক্ষামন্ত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy