প্রতীকী ছবি
করোনা-পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্য সরকার সাধারণ মানুষকে অযথা আতঙ্কিত না-হওয়ার আবেদন জানাচ্ছে ঠিকই। তা বলে পরিস্থিতিকে মোটেই হালকা ভাবে নিচ্ছে না রাজ্য। চলতি পরিস্থিতিতে চিকিৎসক, নার্স ও অন্য চিকিৎসাকর্মীদের সুরক্ষিত রাখতে পৃথক ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। তাঁদের থাকা-খাওয়া-যাতায়াতের দায়িত্ব আপাতত সরকারই নিচ্ছে বলে সোমবার সর্বদলীয় বৈঠক ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সব চেয়ে আগে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী এবং নার্সদের সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে। সেই জন্য কয়েকটি হোটেলের সঙ্গে ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তাঁদের থাকা-খাওয়া এবং যাতায়াতের দায়িত্ব নেবে রাজ্য সরকারই।’’
এ-পর্যন্ত প্রায় সাত লক্ষ মানুষের স্ক্রিনিং করেছে রাজ্য। ১৪৭ জনের লালারসের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে সাত জনের শরীরে করোনার উপস্থিতি নিশ্চিত হয়েছে। এ দিন দক্ষিণ কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক প্রৌঢ়ের মৃত্যু হয়। রাজ্যের আশঙ্কা, তৃতীয় ফেজ় বা পর্বের সূচনায় আগামী দিনে পরিস্থিতির ভয়াবহতা বাড়তে পারে। এই সময়ে ‘কমিউনিটি স্প্রেডিং’-এর আশঙ্কা থেকে যায়। বৈঠকে এই আশঙ্কার কথা তোলেন বিরোধীরাও। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র পরামর্শ দেন, যে-চিকিৎসক করোনার চিকিৎসা করছেন, তাঁকে যেন অন্য রোগের চিকিৎসা করতে দেওয়া না-হয়। মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দেন, এই চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত সকলের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে তাঁর সরকার বদ্ধপরিকর। সেই জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, তন্তুজ, বঙ্গশ্রী প্রয়োজনীয় উপকরণ তৈরি করছে। আগে তা দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসক-নার্সদের। মাঝারি, ক্ষুদ্রশিল্প দফতর রোজ ১০ হাজার লিটার স্যানিটাইজ়ার তৈরি করছে, যা আগে পাঠানো হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। মমতা বলেন, ‘‘বলছে, এখনও তৃতীয় ফেজ়ে পৌঁছয়নি। তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম ফেজ় খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বে এই রোগে সব চেয়ে বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন।’’
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে কলকাতার তিন হোটেল-কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেন পুর কমিশনার খলিল আহমেদ। চিঠিতে বলা হয়েছে, তাঁদের হোটেলে চিকিৎসকদের রাখা হবে। প্রথম পর্যায়ে বি-বা-দী বাগের ললিত গ্রেট ইস্টার্ন, ইএম বাইপাসের ধারে আইটিসি সোনার, হোটেল হিন্দুস্থান ইন্টারন্যাশনাল হোটেলকে বেছে নেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, করোনা সন্দেহে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। চিকিৎসক ও নার্সেরা তাঁদের চিকিৎসায় যুক্ত। লকডাউনের ফলে তাঁদেরও যাতায়াতে সমস্যা হবে। এই পরিস্থিতিতে তাঁরা সকলের কাছে সম্পদ। তাঁদের কাজ করতে যাতে কোনও রকম অসুবিধা না-হয়, সেই জন্যই হাসপাতালের কাছাকাছি থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য দফতরের খবর, কলকাতা মেডিক্যালের একাংশকে করোনা হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, জেলায় জেলায় পরিকাঠামো প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজারহাটের চিত্তরঞ্জন হাসপাতাল, এনবিসিসি ছাড়াও শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে গড়া হয়েছে আইসোলেশন বিভাগ। জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে এই ব্যবস্থা আগেই করা হয়েছে। এ বার বিভিন্ন বিয়েবাড়ি, ভবন, ইন্ডোর স্টেডিয়াম (নেতাজি ইন্ডোর বাদে), আইটিআই, পলিটেকনিক, ফ্লাড সেন্টার, কর্মতীর্থ ইত্যাদির পরিকাঠামো চিহ্নিত করে রাখার নির্দেশ দেন মমতা। প্রয়োজনে সেখানে আইসোলেশন ওয়ার্ডের মতো সুবিধা রাখা হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এটা তো বিয়ের মরসুম নয়। তাই বিয়েবাড়ি ও কমিউনিটি হল চিহ্নিত করতে বলেছি। স্কুল-কলেজকে ব্যবহার করতে চাই না। কারণ, সেখানে ছাত্রছাত্রীরা লেখাপড়া করে।’’
চলতি পরিস্থিতিতে অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী এবং নার্সদেরও কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করেছে সরকার। মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে জানান, ২০১৯-২০ সালে যাঁরা অবসর নিয়েছেন, তাঁরা চাইলে তাঁদের ব্যবহার করা হবে। এতে অতিরিক্ত দু’-আড়াই হাজার বাড়তি লোকবল পাবে রাজ্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy