প্রতীকী ছবি।
একরত্তি মেয়েটির মনে নেই, সে কী ভাবে পৌঁছে গিয়েছিল দিল্লির কাছে একটি ইটভাটায়। মনে নেই, তার বাড়ির কী ঠিকানা। সারা দিন হাড়ভাঙা খাটুনির পরে ওই ইটভাটায় সে পেত দিনের খোরাকি এবং মাথা গোঁজার মতো এক চিলতে জায়গা। আর মাঝে মাঝে পেত জামা-কাপড়। করোনা সংক্রমণ এসে তাকে খাটুনি থেকে মুক্তি দিল। কিন্তু বাড়ি ফেরাতে পারেনি এখনও। বাড়ি ফেরার আশায় সকলের সঙ্গে শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেন ধরলেও পৌঁছতে পারেনি পরিবারের কাছে। বাড়ি কোথায় ছিল, মনেই তো নেই। বদলে তার আশ্রয় এখন জলপাইগুড়ির অনুভব হোম।
কতই বা বয়স হবে মেয়েটার! বারো কি তেরো। লকডাউন আর করোনার থাবা থেকে রক্ষা পেতে দিল্লি থেকে ইটভাটার শ্রমিকদের একটা দল উঠে বসেছিল শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেনে। কারও বাড়ি বিহার, কারও উত্তরপ্রদেশ। সেই দলে ছিল মেয়েটি। সে এত দিন জানত, তার বাড়ি কাটিহারে। কিন্তু কাটিহারের কোথায়? সেই ‘রহস্য’ এখনও ভেদ হয়নি। সে নিজেও মনে করতে পারেনি। অনুভব হোমে তার আশ্রয়ের পরে স্থানীয় প্রশাসনের লোকজনও সেই জায়গা খুঁজে বার করতে পারেনি।
কী ভাবে এল সে অনুভব হোমে? শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেনে করে সে এসে নামে এনজেপি স্টেশনে। সেখানে রেল পুলিশের কাছে বাড়ির পুরো ঠিকানা বলতে পারেনি মেয়েটি। তাকে সেখান থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় হোমে।
কী ভাবে সে দিল্লি গিয়েছিল, মনে নেই মেয়েটির। তার কাউন্সেলিং চলছে। আপাতত মনে করা হচ্ছে, ছোট বয়সেই পাচারকারীদের খপ্পরে পড়েছিল সে, কাটিহার লাগোয়া কোনও গ্রাম থেকে তাকে তুলে নিয়ে দিল্লিতে কাজে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বাড়ি কোথায়, জিজ্ঞাসা করায় মেয়েটি হিন্দি এবং দেশোয়ালি ভাষা মিশিয়ে একটাই জবাব দিচ্ছে, ‘‘কাটিহাটের বড়বাজার। সেখানেই আমার বাড়ি।’’ কাটিহারের কাছে খোঁজখবর নিয়ে এমন কয়েকটা বাজারের কথা জানা গিয়েছে। এখনও খোঁজ চালাচ্ছে প্রশাসন।
দিল্লিতে এক ব্যক্তি মেয়েটির খোঁজখবর নিতেন বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু তিনি মেয়েটির কে হন, কোথায় থাকেন— এমন অনেক প্রশ্ন ঘুরছে এখন। যদিও বেশিরভাগেরই উত্তর নেই মেয়েটির কাছে। হোমের কর্মীরা জানান, মেয়েটি উদাস হয়ে বসে থাকে। ওর সঙ্গে যাঁরা কাজ করতেন, সবাই বাড়ি ফিরে গিয়েছেন, সে সব কথা মেয়েটি বলাবলিও করে। দিল্লিতে আর কাজেও যেতে চায় না সে। শুধু বাড়ি ফিরতে চায়। জলপাইগুড়ির শিশু কল্যাণ সমিতির চেয়ারপার্সন বেবী উপাধ্যায় বলেন, “এমন বেশ কয়েক জন পরিযায়ী শিশু শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেনে চলে এসেছিল। যারা ঠিকঠাক ঠিকানা বা ফোন নম্বর বলতে পেরেছে, তাদের বাড়ি পাঠানো হয়েছে। যারা পারেনি, তারা হোমে আছে। আমরা দেখছি কী ভাবে তাদের বাড়ি খুঁজে পাঠানো যায়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy