নৈহাটি পুরসভার কাছে জ্বলছে মোটরবাইক। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।
নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা অব্যাহত রাজ্য জুড়েই। শনিবার দিনভর এবং রবিবারেও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপির কর্মী সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আগেই গোয়েন্দারা সতর্ক করেছিলেন, সংঘর্ষের ঘটনা আরও বাড়বে। অন্য দিকে দফায় দফায় কেন্দ্রীয় বাহিনী ফিরতে শুরু করেছে। শনিবারই নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে জানিয়ে দেন, নির্বাচনের কাজ শেষ। এবার কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রত্যাহার করা হবে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে রাজ্যের পুলিশকেই।
সব চেয়ে বেশি অশান্তির খবর পাওয়া গিয়েছে কোচবিহারে। এখনও সিতাই, মাথাভাঙা এবং তুফানগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়েছেন অনেকে। তৃণমূলের অভিযোগ, শুক্রবার এবং শনিবারের মত রবিবারও বিজেপি রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় তাদের দলীয় কার্যালয় দখল করে নিয়েছে। তবে বিজেপির দাবি, তৃণমূল কর্মী সমর্থকরাই বিজেপিতে যোগদান করেছেন। তাই নিজেরাই তাঁদের আগের দলের কার্যালয়ে বিজেপির পতাকা তুলেছেন।
রবিবার দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কার্যালয়ে বিজেপি কর্মী সমর্থকরা বিজেপির দলীয় পতাকা লাগিয়ে দেন। বিজেপি কর্মী সমর্থকদের দাবি, তাঁরা আগে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী ছিলেন। সেই সময় তাঁরাই ওই দলীয় কার্যালয়টি তৈরি করেন। নির্বাচনের আগে তাঁরা সবাই বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তাই তাঁদের প্রার্থীর জয়ের পরে তাঁরা ওই কার্যালয়ে বিজেপির পতাকা লাগিয়ে দিয়েছেন।
আরও পড়ুন, বিজেপিকে ভোট কেন? দলবল নিয়ে চড়াও হয়ে গ্রামবাসীদের হাতেই পাল্টা মার খেলেন তৃণমূল নেতা
এ রকম ভাবেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে শুক্রবার থেকে কয়েকশো তৃণমূল কার্যালয় দখল করেছে বিজেপি, এমনটাই অভিযোগ শাসক দলের। কোচবিহারের শালমারা, শৈলমারির মত জায়গায় দখল হয়ে যাওয়া দলীয় কার্যালয় পুনর্দখল করতে গিয়ে শনিবার ব্যপক বিক্ষোভের মুখে পড়েন জেলার দুই মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ এবং বিনয় বর্মন।
আরও পড়ুন, ম্যান অব দ্য ম্যাচ কমিশন, আমি মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছাড়তে চেয়েছিলাম: ঝাঁঝালো আক্রমণে মমতা
এ দিন বর্ধমানের কাঁকসা থানার জাজগড়িয়া এলাকায় শেখ সালাউদ্দিন নামে এক বিজেপি কর্মী আক্রান্ত হল। তাঁর অভিযোগ, সম্প্রতি তিনি তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় শেখ সফিকুল নামে এক তৃণমূল কর্মী তাঁকে মারধর করেন। যদিও তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়ের দাবি, গোটা ঘটনাই বিজেপির অন্তর্দ্বন্ধের কারণে ঘটেছে। তৃণমূলের কোনো ভূমিকা নেই। শনিবার গভীর রাতে তৃণমূলের একটি দলীয় কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে পাঁশকুড়া স্টেশন সংলগ্ন এলাকায়। তৃণমূলের দাবি, বিজেপির কর্মীরাই ওই দলীয় কার্যালয়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। সংঘর্ষে যোগ থাকার অভিযোগে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশ জগন্নাথ দাস নামে এক বিজেপি-র স্থানীয় নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
আরও পড়ুন, রাম ঠেকিয়ে তৃণমূলের মহাপতন রুখল বাম
কেবল রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে নয়, ফের রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে শহর কলকাতাতে। রবিবার সকাল থেকেই দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে আনন্দপুর থানা এলাকার পূর্বপাড়া। দুই গোষ্ঠী একে অপরের দিকে ইটবৃষ্টি করতে থাকে। সংঘর্ষে আহত হন অন্তত সাতজন।
সংঘর্ষে আহত পূর্বপাড়ার বাসিন্দাদের অভিযোগ, তাঁরাও তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী। তাঁরা দাবি করেন, তাঁরা তৃণমূলের ব্লক সভাপতি মণীন্দ্র দত্তের অনুগামী। মনীন্দ্রের অনুগামীদের অভিযোগ, পূর্ব পাড়া থেকে তোলা আদায় করেন আরও এক স্থানীয় তৃণমূল নেতা জীবন মালিক। অভিযোগ, কলকাতা পুরসভার ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মণীন্দ্রের বাড়িতে রবিবার সকাল সাড়ে ৪টে নাগাদ হামলা চালায় জীবনের অনুগামীরা। হামলায় বাধা দিলে শুরু হয়ে যায় সংঘর্ষ। এই ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেফতার হননি, তবে দু’পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে।
সূত্রের খবর, নির্বাচনের ফল প্রকাশ পরবর্তী এই হিংসা রুখতে জেলা পুলিশ সুপারদের সঙ্গে কথা বলেছেন এডিজি আইন-শৃঙ্খলা সিদ্ধিনাথ গুপ্ত। প্রয়োজনে সিআইএফ( কাউন্টার ইসার্জেন্সি ফোর্স)-এর মত বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করা হতে পারে অপেক্ষাকৃত বেশি উপদ্রুত এলাকাগুলিতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy