Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Gayatri Chakravorty Spivak

সংখ্যালঘুর স্বরেই গণতন্ত্র, আজাদ হিন্দ পরিবারের মিলনোৎসবে বললেন গায়ত্রী

‘সাম্য এবং ঐক্য: নেতাজির আজাদ হিন্দ সংগ্রামের নরনারী’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটি ভরে উঠল নানা ধর্ম বা শ্রেণির মানুষ ‘নেতাজির সৈনিক ছেলেমেয়ে’দের গল্পে।

গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক ও সুগত বসু। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক ও সুগত বসু। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:৩২
Share: Save:

আজাদ হিন্দ ফৌজের লড়াইয়ের দিনগুলির বাইরে এমনটা খুব বেশি দেখা যায়নি। ইতিহাসবিদেরা অনেকেই মনে করেন, ধর্ম, শ্রেণি, লিঙ্গপরিচয়ের বেড়া ভেঙে এক মন, প্রাণ হয়ে এ ভাবে আর কখনও জেগে ওঠেনি ভারত। এ দেশের ইতিহাসে আগে বা পরে, এমন নজির খুঁজে পাওয়া মুশকিল! সোমবার, সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৬ বছরের জন্মদিনে ২০২৩-এর ভারতকে যেন সেই স্বপ্নের দিনগুলির কথা মনে করিয়ে দিল কলকাতায় নেতাজি ভবনের অনুষ্ঠান।

‘সাম্য এবং ঐক্য: নেতাজির আজাদ হিন্দ সংগ্রামের নরনারী’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটি ভরে উঠল নানা ধর্ম বা শ্রেণির মানুষ ‘নেতাজির সৈনিক ছেলেমেয়ে’দের গল্পে। আজাদ হিন্দ ফৌজের হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান ছেলেমেয়েদের 'জয় হিন্দ' স্লোগানের সুর বা কাওয়ালি চর্চার কিছু নমুনা শোনা গেল এ আর রহমানের গান-বাজনার দল কেএম সুফি অঁসম্বলের নানা উপস্থাপনায়। এমন জন্মদিনে ভারী খুশি অনুষ্ঠানের অতিথি প্রবীণ সাহিত্য তত্ত্ববিদ, সমাজকর্মী গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক। তাঁর কথায়, “সুভাষচন্দ্র আমাদের লোকাল বয় গন গ্লোবাল। সত্যিই সারা পৃথিবীর তিনি। ওঁর জন্মদিনে এ সব গান, গল্পে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের শিক্ষা রয়েছে।”

আজকের ভারত প্রসঙ্গে গায়ত্রী বলেছেন, “অ-হিন্দু সংখ্যালঘুর নাগরিকত্ব ও নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। এতে আমাদের গণতন্ত্রই আহত হয়।” গণতন্ত্র কী? শঙ্খ ঘোষের ‘মাটি’ কবিতাটি শুনিয়ে গায়ত্রী বুঝিয়েছেন, “গণতন্ত্র যেন দেশের মধ্যে অপরের, সংখ্যালঘুর স্বর। বেশির ভাগের মত গ্রহণ করে গণতন্ত্রকে চলতে হলেও সংখ্যালঘুর অধিকারের দৌড়ের ভিত্তিতেই তার সবটুকু সার্থকতা।”

ডি এল রায়ের পুত্র দিলীপকুমার রায় ছিলেন গায়ত্রীর মা শিবানীর পিসতুতো দাদা।। সেই সূত্রে দিলীপকুমারের প্রাণের বন্ধুরাও মায়ের কাছের দাদা! মানে, বাড়ির ছোটদের কাছে মন্টুদা (দিলীপ), সুভাষদা (সুভাষচন্দ্র বসু), কাজীদায় (কাজী নজরুল ইসলাম) ফারাক ছিল না! গায়ত্রীর মতে, ‘‘ধর্মীয় সংহতি এমন মজ্জাগত স্বাভাবিক হওয়া উচিত।

এটাই ভয়হীন গণতন্ত্রের আরাম!” আজাদ হিন্দ ফৌজের রোজনামচায় সংহতির সেই কেন্দ্রীয় সুরটাই এ দিন বার বার অনুষ্ঠানে উঠে এসেছে। নেতাজি রিসার্চ বুরোর চেয়ারপার্সন সুগত বসু বলছিলেন, “মহম্মদ জমান কিয়ানি, আবিদ হাসান, এস এ আয়ার, প্রেমকুমার সহগল, লক্ষ্মী স্বামীনাথন, জানকী থেভর, গুরবক্স সিংহ ঢিল্লোঁ, হবিবর রহমান, মেহবুব আহমেদ, সিরিল জন স্ট্রেসি— নেতাজির সহচরেদের নামগুলি শুনলেই বোঝা যায় সমন্বয়ের আদর্শ কথার কথা ছিল না।”

কৃষ্ণা বসুর বই থেকে সুভাষচন্দ্রের সহযোদ্ধাদের গল্প শুনিয়ে বুরোর অধিকর্তা সুমন্ত্র বসুও বলেন, “ওঁরা প্রত্যেকেই নেতাজির সাম্যের আদর্শের মূর্ত প্রকাশ হয়ে উঠেছিলেন।” জার্মানি থেকে জাপানে সাবমেরিনে সুভাষ-সঙ্গী আবিদ হাসানের ভাইঝি ইসমত মেহেদি এসেছিলেন। তাঁর সম্পাদনায় আবিদ হাসানকে নিয়ে একটি বই প্রকাশ করা হয়। সুভাষের চোখে বীরশ্রেষ্ঠ মহম্মদ জমান কিয়ানির কন্যা জাহিদা কিয়ানি আহসানুদ্দিন লাহোর থেকে শুভেচ্ছা-বার্তা পাঠান।

আজাদ হিন্দ পরিবারের এই মিলন উৎসবের আবহেই আজকের ভারতের সংহতির স্বাভাবিক সুরটি ফেরাতে ডাক দিয়েছেন গায়ত্রী। তিনি মনে করান, সংখ্যালঘুর অধিকার ভুলে বা রাষ্ট্রহীন রোহিঙ্গাদের পায়ের নীচে রেখে কিন্তু সেই স্বাচ্ছন্দ্যের ভাবটি ফিরবে না।

অন্য বিষয়গুলি:

Gayatri Chakravorty Spivak Subhas Chandra Bose
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy