Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Garden Reach Building Collapse

‘তখন মনে হয়েছিল, আর ফেরা হবে না’

গার্ডেনরিচে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়া নির্মীয়মাণ বাড়ির ধ্বংসস্তূপ থেকে রবিবার মধ্যরাতে উদ্ধার করা হয়েছিল বছর পঞ্চাশের আসলাম এবং জাহানারাকে।

Garden Reach Building Collapse

গার্ডেনরিচে ভেঙে পড়া নির্মীয়মাণ বহুতল। — ফাইল চিত্র।

চন্দন বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৪ ০৭:৩৭
Share: Save:

‘‘হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়া বিশাল কংক্রিটের ফাঁক দিয়ে কোনও মতে মুখটা শুধু বার করতে পেরেছিলাম। ইটের ঘায়ে মাথা ফেটে গল গল করে রক্ত বার হচ্ছিল। তখন কয়েক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল, আর বেঁচে ফেরা হবে না।’’ —মঙ্গলবার হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কথাগুলো বলতে বলতে হাপরের মতো বারবার বড় বড় শ্বাস নিচ্ছিলেন মহম্মদ আসলাম। আর হাসপাতালে থাকা জাহানারা বেগমের চোখভরা শুধুই আতঙ্ক।

গার্ডেনরিচে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়া নির্মীয়মাণ বাড়ির ধ্বংসস্তূপ থেকে রবিবার মধ্যরাতে উদ্ধার করা হয়েছিল বছর পঞ্চাশের আসলাম এবং জাহানারাকে। রক্তাক্ত, অচৈতন্য অবস্থায় দু’জনকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এসএসকেএম হাসপাতালে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসার পরে সোমবার সকালে হাসপাতাল থেকে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

বাড়ি ফিরলেও মঙ্গলবার সকাল থেকে আবার অসুস্থ বোধ করায় দু’জনকে নিয়ে আসা হয় গার্ডেনরিচের বেসরকারি হাসপাতালে। সারাদিন সেখানেই পর্যবেক্ষণে ছিলেন দু’জন। মাথায় ব্যান্ডেজ আসলামের। বিছানায় কোনও মতে শুয়ে। একা একা পাশ ফেরারও শক্তি নেই। শরীরের একাধিক জায়গা দেখিয়ে বললেন, ‘‘পুনর্জন্ম হল। সে দিনের রাতের পর থেকে দু’চোখের পাতা এক করতে পারিনি। ডাক্তার ওষুধ দিলেও চোখে ঘুম নেই। চোখ বন্ধ করলেই বারবার সে রাতের দুঃসহ স্মৃতিগুলো মনে আসছিল।’’

পাঁচতলা ওই নির্মীয়মাণ বাড়ির নীচেই ছিল আসলামদের টালির ছাউনির ঘর। সারা দিনের ক্লান্তির পরে ঘুম জড়িয়ে আসে রাতে। আসলামের কথায়, ‘‘চোখটা সবে লেগে এসেছিল। বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই শরীরের উপরে বড় বড় ইট, বিমের অংশ এসে পড়তে শুরু করে। প্রথমে ভেবেছিলাম ভূমিকম্প হচ্ছে। নিজে থেকে ওঠার মতো অবস্থায় ছিলাম না। চিৎকার করে উদ্ধার করার কথা বলেছিলাম। কিন্তু চারিদিকে কান্নাকাটি, চিৎকারে কারও কানে সেই আওয়াজ গিয়েছিল কি না জানি না। তার পরে আর আমার কিছু মনে নেই। যখন জ্ঞান ফেরে, দেখি হাসপাতালে শুয়ে।’’

কার্যত কথা বলার অবস্থায় নেই জাহানারা। দু’পায়েই তাঁর আঘাতের চিহ্ন। কালসিটে পড়ে যাওয়ার দাগ স্পষ্ট। বিছানা থেকে নামতে গেলে অন্যের সাহায্য নিতে হচ্ছে। বলেন, ‘‘চোখ বন্ধ করলেই মড় মড় আওয়াজটা কানে ভাসছে। সেই আওয়াজ শুনেই তো পালাতে গিয়েছিলাম। ঘর পেরোতে পারলেও বারান্দায় এসে পড়ে যাই। তার পর ধূলো, ইটের মধ্যে চাপা পড়ে যাই। পাড়ার ছেলেরাই আমাকে ওখান থেকে বের করেছিল। ওই রাতের কথা মনে করতে চাই না।’’

সোমবার রাতে বাড়ি ফিরে একটু ঘুমালেও আতঙ্কে জাহানারা মাঝে মাঝেই চিৎকার করে উঠছিলেন, জানালেন হাসপাতালে থাকা জাহানারার পরিবারের একজন। তাঁর কথায়, ‘‘সারা রাত একজনকে পাশে বসে থাকতে হয়েছে। মাঝে মধ্যে কেঁপে কেঁপে উঠছিলেন।’’

দু’জনকেই এ দিন বিকেলে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া। একই অ্যাম্বুল্যান্সে করে দু’জনকে পৌঁছে দেওয়া হয় এলাকার এক আত্মীয়ের বাড়িতে। বেশ কয়েকজন আহতকে নিয়ে যাতায়াত করা অ্যাম্বুল্যান্স চালক বলেন, ‘‘এত বড় আতঙ্ক! একদিনে কী যায়? হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দিলেও ভয়েই সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এই আতঙ্ক ভুলতে সময় লাগবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Death KMC Garden Reach
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy