দূরত্ব-বিধির পরোয়া না-করে গঙ্গাসাগরে চলছে মকরসংক্রান্তির পুণ্যস্নান। শুক্রবার। ছবি: সমরেশ মণ্ডল
কড়া বিধিনিষেধ ছিল। অক্ষরে অক্ষরে তা মেনে চলার জন্য ছিল সনির্বন্ধ আবেদন-নিবেদন। বিধি যাতে মেনে চলা হয়, তার জন্য তারাও তৎপর ছিল বলে প্রশাসনের দাবি। সর্বোপরি ছিল কলকাতা হাই কোর্টের কড়া নির্দেশ ও শর্ত এবং নজরদার কোর্ট-কমিটির দু’জোড়া চোখ। কিন্তু জনতার অভিজ্ঞতা, শুক্রবার পৌষসংক্রান্তিতে গঙ্গাসাগরে ভেসে গেল বিধিনিষেধ।
শত ‘তৎপরতা’ সত্ত্বেও সাগরে কোভিড সুরক্ষা ব্যূহ অটুট থাকল না কেন? গঙ্গাসাগরে মকরসংক্রান্তির বেপরোয়া স্নানের দৃশ্য এই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে জোরালো ভাবে। শুধু প্রশ্নেই শেষ হচ্ছে না স্নান-প্রসঙ্গ। সাগরসঙ্গমে বেসামাল ভিড়, মাস্কহীন জনতার গা ঘেঁষাঘেষি করে উতরোল স্নান অচিরে কী বিপদ ডেকে আনতে চলেছে, তা নিয়ে মহা চিন্তায় পড়েছেন চিকিৎসক এবং শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিকেরা। দুর্গাপুজো থেকে জগদ্ধাত্রী পুজো পর্যন্ত মহোৎসব, কলকাতা পুরসভার ভোট-উৎসব এবং বর্ষশেষ ও বর্ষবরণ উৎসবে বেলাগাম মাতামাতির মাসুল কোভিড কী ভাবে তুলে নিয়েছে, সেই অভিজ্ঞতার নিরিখে সাগরমেলায় বিধিভাঙা মাতনের ফল কতটা বিষময় হয়ে উঠতে পারে, সেটা ভেবে শিউরে উঠতে হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা।
কোভিডের বাড়বাড়ন্তের দরুন এ বছর অন্তত গঙ্গাসাগর মেলা বন্ধের আর্জি জানিয়ে হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা হয়েছিল। উচ্চ আদালত মেলা বন্ধের নির্দেশ না-দিলেও কোভিড রুখতে কয়েকটি বিধি ও শর্ত আরোপ করেছিল। গত বছর সাগরমেলা নিয়ে হাই কোর্ট যে-নির্দেশ দিয়েছিল, তা-ও এ বার বহাল থাকবে বলে জানানো হয়। সব নির্দেশ যথাযথ ভাবে মেনে মেলা হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য দুই সদস্যের নজরদার কমিটিও গড়ে দিয়েছিল উচ্চ আদালত।
হাই কোর্টের নির্দেশ ছিল, কোভিড পরীক্ষা করিয়ে এবং টিকার শংসাপত্র নিয়ে তবেই সাগরদ্বীপে ঢোকার অনুমতি মিলবে। এবং যাবতীয় বিধি পালনে কোর্ট দায়বদ্ধ করেছিল রাজ্যের মুখ্যসচিবকে। বিধি না-মানলে নজরদার কমিটি এমনকি মেলা বন্ধের সুপারিশও করতে পারে বলে জানিয়েছিল কোর্ট। আদালত গঠিত নজরদার কমিটি সাগরদ্বীপ পরিদর্শন করেছে। প্রশাসনের খবর, প্রথম দিন পরিদর্শনের পরে কমিটি কিছু ব্যাপারে অখুশি ছিল। প্রাথমিক রিপোর্টে তারা সেটা রাজ্য প্রশাসনকে জানায়। সেই অনুযায়ী ত্রুটি শুধরেও নেওয়া হয়। প্রশাসনিক মহলের দাবি, নজরদার কমিটি পরে আর কোনও রকম ত্রুটি পেয়েছে বলে জানায়নি। মেলা বন্ধেরও সুপারিশ করেনি।
কিন্তু আমজনতার অভিজ্ঞতা, এ দিন সাগরের পুণ্যস্নানে কোভিড বিধি, পারস্পরিক দূরত্ব-বিধি, মাস্ক বিধি— সবই কার্যত শিকেয় উঠে গিয়েছিল। মাস্কহীন জনতার ঢল দেখা গিয়েছে সমুদ্রসৈকতে। প্রশ্ন উঠছে, জোড়া টিকা থাকলে বা কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ হলেও কি এ ভাবে বেসামাল ভিড় করা সঙ্গত? এই ভিড় থেকে কী হারে কোভিড ছড়াতে পারে, তা নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে চিকিৎসক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।
কোভিড বিধি শিকেয় তুলে গঙ্গাসাগরে মকরস্নান প্রসঙ্গে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আদালতের শর্ত, স্বাস্থ্যবিধি— সব জলেই গেল! ওখানে বিধি মানা সম্ভব? রাজনৈতিক উচ্চাশার জন্য মানুষের স্বার্থকে বলি দেওয়া হল। মুখ্যমন্ত্রী বার্তা দিলেন, অন্য রাজ্য কুম্ভমেলা পূর্ণ করতে না-পারে, মকরসংক্রান্তির স্নান না-করাতে পারে, কিন্তু আমরা এর মধ্যেও পারি! পশ্চিমবঙ্গে যখন করোনা পরিস্থিতি গুরুতর, কলকাতা যখন সংক্রমণের শীর্ষে, সেই সময়ে এমন কাজ কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। মুখ্যমন্ত্রী এর পরে ঢাকঢোল নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন ‘করোনায় আমরাই এক নম্বর’ বলে!’’
তবে প্রশাসনের দাবি, ভিড় এ বার তুলনায় অনেক কম হয়েছে। গত বছরের তুলনায় মেরেকেটে ২৫% লোক এ বছর মেলায় এসেছেন। আদালতের নির্দেশ মেনে পুণ্যার্থীদের কোভিড পরীক্ষা করা হয়েছে এবং মাস্ক বিলি করা হয়েছে ১০ লক্ষেরও বেশি। সাগরদ্বীপে মাত্র এক জন পুণ্যার্থীর কোভিড সংক্রমণ ধরা পড়েছে বলেও জানিয়েছে প্রশাসন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy