Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Ganga Sagar Mela 2023

শাহি যোগের আগেই সাগরে পুণ্যার্থীর ঢল

মকর সংক্রান্তির শাহি স্নানের তিথি শুরু হয়েছে শনিবার সন্ধ্যা থেকে। কিন্তু তার আগেই শনিবার ভোর থেকেই ভিড় উপচে পড়েছে গঙ্গাসাগরের পুণ্যতীর্থে।

সবারই লক্ষ্য, সাগরসঙ্গমে ডুবদিয়ে পুণ্যলাভ।

সবারই লক্ষ্য, সাগরসঙ্গমে ডুবদিয়ে পুণ্যলাভ। প্রতীকী ছবি।

চন্দন বিশ্বাস
গঙ্গাসাগর শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ ০৫:৪৮
Share: Save:

তখনও ভোরের আলো পুরোপুরি ফোটেনি। আধো অন্ধকার, আধো আলোতেই সাগরের জলে সার দিয়ে হাঁটু মুড়ে বসে কয়েক জন। সিক্ত বসন, হাত জোড় করে তাকিয়ে রয়েছেন জলরাশির দিকে। একটু দূরে কোমর জলে দাঁড়িয়ে আরও কয়েক জন। হাত জোড় করে আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রার্থনা করছেন। আলো ফুটতে না-ফুটতেই ক্রমশ বাড়তে লাগল ভিড়। সবারই লক্ষ্য, সাগরসঙ্গমে ডুবদিয়ে পুণ্যলাভ।

মকর সংক্রান্তির শাহি স্নানের তিথি শুরু হয়েছে শনিবার সন্ধ্যা থেকে। কিন্তু তার আগেই শনিবার ভোর থেকেই ভিড় উপচে পড়েছে গঙ্গাসাগরের পুণ্যতীর্থে। এক, দুই, তিন নম্বর.. সব রাস্তাতেই পুণ্যার্থীর ঢল চলেছে সাগর স্নানে। ভিড়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নজরদারির দায়িত্বে থাকা কর্মীদের গলার স্বর। তাঁদের মুখে অবিরত শোনা গিয়েছে, ‘আগে চলিয়ে, আগে চলিয়ে’ নির্দেশ।

সকালের আলো তত ক্ষণে ফুটে গিয়েছে। ভিড়ও তখন দ্বিমুখী। এক দল সাগরস্নানে ছুটছেন। অন্য দল স্নান সেরে কপিল মুনির মন্দিরের রাস্তা ধরেছেন। পরনে ভেজা জামাকাপড়। কারও কারও মাথায় পুঁটলি। ক্রমশ ভিড় এমনই বেড়েছে যে স্নান সেরে ২ নম্বর রাস্তা ধরে মন্দিরে পুজো দিতেই কয়েক ঘণ্টা সময় লেগে গিয়েছে। ভিড়ের চরিত্রও ছিল রঙিন। এক দিকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা দেহাতি মানুষেরা, অন্য দিকে খোল, করতাল নিয়ে বিদেশি পুণ্যার্থীরা। দুপুরে ভিড় সামান্য কমেছিল বটে। সন্ধ্যায় শাহি স্নানের যোগ শুরু হতেই ফের ঢল নেমেছে মন্দির থেকে সাগরের মধ্যবর্তী তল্লাটে। সন্ধ্যায় সাগর আরতিও হয়েছে।

ভিড়ে অবশ্য বেগও পেতে হয়েছে পুণ্যার্থীদের। মধ্যপ্রদেশ থেকে এ বছরই প্রথম গঙ্গাসাগর এসেছেন কাজল সিংহ। হিন্দিতে বললেন, ‘‘চারধাম ঘুরে এখানে এসেছি। পুজো সেরে আজই বেরোনোর কথা। কিন্তু কখন যে বেরবো সেটাই বুঝতে পারছি না।’’ এ নিয়ে তিন বার গঙ্গাসাগরে এসেছেন হরপ্রীত কউর। বললেন, ‘‘ভিড় এড়াতে তিন-চার দিন আগেই এসেছি।’’ ভিড়ের ঠেলায় অবশ্য পুরোহিতদের ‘লক্ষ্মীলাভ’ ভালই হয়েছে। বিহার থেকে গঙ্গাসাগর মেলার জন্য আসা এক পুরোহিত বললেন, ‘‘সারা দেশ থেকে ভক্তেরা আসেন। আমিও আসি। নিজের পুজো দেওয়া হয়, আবার কিছু রোজগারও হয়ে যায়।’’

ভিড় সামলাতে গঙ্গাসাগরে তৎপর পুলিশ এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা। বিপদ ঠেকাতে সক্রিয় আছে উপকূলরক্ষী বাহিনীও। জলপথে স্পিড বোট এবং জলযান নিয়ে চলছে নিরন্তর নজরদারি। বাহিনীর কলকাতা স্টেশনের কমান্ডান্ট অভিজিৎ দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘মেলা শুরুর আগে থেকেই উপকূলরক্ষী বাহিনীর তরফে একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রতি বছরের মতোই মেলা শেষ না-হওয়া পর্যন্ত নজরদারি চলবে।’’

গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে শনিবার বিকেলে জেলা প্রশাসনের সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পুলক রায়, অরূপ বিশ্বাস, সুজিত বসু, ইন্দ্রনীল সেনের মতো রাজ্যের মন্ত্রীরা। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, এ বছর ৩৯ লক্ষ পুণ্যার্থী সাগরে এসেছেন। অতিমারি পর্ব পেরিয়ে এই ভিড় ‘দেশের মিলন ভূমি’ বলেই দাবি করেছেন রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা।

তবে এই উৎসবের হরষেও এ দিন মিশেছে বিষাদ। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সাগরমেলায় আসা দুই পুণ্যার্থী, ওড়িশার বাসিন্দা প্রতাপচন্দ্র গিরি (৭২) এবং বিহারের বাসিন্দা বায়োলা দেবী (৭৩) হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে এ দিন মারা গিয়েছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Ganga Sagar Mela 2023 crowd
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy