চলতি মরসুমে রাজ্যে অনেক বেশি বৃষ্টি হয়েছে। দফায় দফায় বন্যা-সহ হাজারো সমস্যায় ভুগেছে বাংলা। এতটাই যে, তার ধাক্কা এই হেমন্তেও সামলানো যায়নি। এ বার যথাসময়ে নদী ও বাঁধের জলস্তরের হালহকিকত জানতে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নিচ্ছে রাজ্যের সেচ দফতর।
প্রবল বৃষ্টিতে নদীর জলস্তর হুটহাট বেড়ে যায়। কিন্তু তার খবর ঠিক সময়ে মেলে না মূলত স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির অভাবেই। এখন কাজ হয় মনুষ্যচালিত ব্যবস্থায়। পরিস্থিতি জানতে সেচ দফতরের সদর কার্যালয় থেকে বারবার ফোন যায় জেলা অফিসে। কিন্তু ব্যারাজ থেকে কখন কতটা জল ছাড়া হচ্ছে, ঠিক কত ক্ষণ পরে সেই জল শহর ও গ্রামে ঢুকবে— সেটা দ্রুত জানা সম্ভব হয় না। কেননা তখনকার বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতে সেচকর্মীদের পক্ষে ব্যারাজের মাথায় উঠে জলস্তরের উচ্চতা মাপা সম্ভব নয়। সেচকর্তারা যখন সেই সব তথ্য জানতে পারছেন, তখন আর সতর্কতা জারি করেও বিশেষ লাভ হচ্ছে না। প্লাবিত হয়ে যাচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকা। আগাম ব্যবস্থা না-নেওয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েন বাসিন্দারা।
প্রায় প্রতি বছরের বর্ষাতেই এমন অসহায় পরিস্থিতিতে পড়তে হয় সেচ দফতরকে। এর থেকে মুক্তি পেতে এ বার স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি চালু করছে ওই দফতর। কী ভাবে তথ্য দেবে নতুন প্রযুক্তি? কর্তাদের দাবি, এই ব্যবস্থায় উপগ্রহ-চিত্র, সিসিটিভি, সেন্সর সিস্টেম, রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির মাধ্যমে বিভিন্ন নদীতে জলপ্রবাহের গতিপ্রকৃতি, ব্যারাজে জল ওঠানামার ছবি ও তথ্য উঠে আসবে কন্ট্রোল রুমের জায়ান্ট স্ক্রিনে। পড়শি রাজ্য কোনও বাঁধ থেকে জল ছাড়লে কোন নদ বা নদীর জলস্তর কতটা বাড়ছে, কোথায় ‘লাল’, কোথায় ‘হলুদ’ সঙ্কেত দেওয়া হয়েছে— তা-ও দেখা যাবে ওই জায়ান্ট স্ক্রিনে। আবার নদীর পাড় কোথায় কতটা ভাঙছে, সেই ছবিও দেখা যাবে কন্ট্রোল রুমে বসে।
‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সব ব্যারাজ ও বাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে,’’ বলেন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। সেচ দফতর সূত্রের খবর, স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালু করার জন্য প্রথম পর্যায়ে ১৯ কোটি টাকা খরচ করে প্রায় ৩৫ বছরের পুরনো তিস্তা ব্যারাজে কাজ শুরু হয়েছে। সেচকর্তারা জানান, উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রে সারা বছরই স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে কাজ হয়। বিদেশে প্রায় সর্বত্রই এই ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এ বার তিস্তার পাশাপাশি দুর্গাপুর ও তিলপাড়া ব্যারাজ এবং কংসাবতী, তিলপাড়া বাঁধেও পর্যায়ক্রমে নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে যথাসময়ে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহের বন্দোবস্ত হচ্ছে।
মনুষ্যচালিত ব্যবস্থায় কী ধরনের সমস্যা হয়? সেচকর্তারা জানান, ধরা যাক, পশ্চিমবঙ্গ ও পড়শি রাজ্যে একই সঙ্গে বৃষ্টি হচ্ছে। সেই রাজ্য তা জানালও না। ফলে নদীর জলস্তর কতটা বাড়ছে, জলস্তর বিপদসীমা পেরিয়েছে কি না, তা জানতে ভরসা দফতরের কর্মীরাই। কিন্তু এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। একই ভাবে জলাধার থেকে কতটা জল ছাড়তে হবে, কখন লকগেট খোলা প্রয়োজন, কত ক্ষণ পরে ছাড়া জল শহরে পৌঁছবে— সেটা বুঝে উঠতেও অনেকটা সময় লেগে যায়। নদীর পাড় ভাঙলে তবেই তা জানতে পারেন কর্তারা। এক সেচকর্তার কথায়, ‘‘দেরির জন্য সিদ্ধান্ত নিতে যেমন দেরি হয়, তেমনই থেকে যায় ভুলের আশঙ্কা। স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা থাকলে এই সব সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy