Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
Akram Sardar

আক্রমের চিকিৎসা-খরচ তোলার চেষ্টায় শোভনরা

উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙা থানার মছলন্দপুরের বাসিন্দা আক্রম সর্দারের বয়স ছাব্বিশ। নভেম্বর মাস থেকে দুরারোগ্য অসুখটা ধরা পড়ে। ব্লাড ক্যানসার।

আক্রম সর্দার

আক্রম সর্দার

সীমান্ত মৈত্র
হাবড়া শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২০ ১১:০০
Share: Save:

সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে সাহায্য চাওয়া হচ্ছে। আত্মীয়-স্বজন, পরিচিতদের পাশে দাঁড়ানোর আবেদন করছেন বন্ধুরা। প্রাক্তন শিক্ষক, সতীর্থরা চেষ্টা চালাচ্ছেন। আক্রমের চিকিৎসার জন্য চাই অন্তত ২৫ লক্ষ টাকা। সবে মাত্র ২ লক্ষ টাকার জোগাড় হয়েছে এ ভাবেই।

উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙা থানার মছলন্দপুরের বাসিন্দা আক্রম সর্দারের বয়স ছাব্বিশ। নভেম্বর মাস থেকে দুরারোগ্য অসুখটা ধরা পড়ে। ব্লাড ক্যানসার। মুম্বইয়ে একটি ক্যানসার হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হয়েছে। কিন্তু কেমোথেরাপির টাকাই এখনও জোগাড় হয়নি।

আর্থিক অবস্থা ভাল নয় আক্রমদের। কয়েক বছর আগে বাবা ওহাব মারা গিয়েছেন। এক দাদা গৃহশিক্ষকতা করেন। অন্য জন সেলাইয়ের কাজ। রাজবল্লভপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র আক্রম বরাবরই পড়াশোনায় ভাল। নেট উত্তীর্ণ হওয়ার পরে অ্যানথ্রোপলজি নিয়ে গবেষণার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সে সময়েই এল অসুস্থতার খবর।

গরিব পরিবারের মেধাবী ছাত্রটির পরিস্থিতি জানতে পেরে হাত বাড়িয়েছেন অনেকেই। সেই টানে ধুয়ে মুছে গিয়েছে ধর্মের ভেদাভেদ। আক্রমের বন্ধু প্রিয়ব্রত, অরূপ, দীপঙ্কররা তো বটেই, পরিচিতদের মধ্যে শোভন মুখোপাধ্যায়, রুচিরা কর্মকারের মতো ছেলেমেয়েরা টাকার জোগাড়ে নেমে পড়েছেন। শোভন বলেন, ‘‘আক্রম আমার ভাইয়ের মতো। আমরা একই স্কুলের ছাত্র। ওকে বাঁচাতেই হবে। মানুষ হিসেবে ওর বিপদে পাশে থাকা আমাদের কর্তব্য।’’ এলাকার মসজিদ কমিটির তরফে প্রতি বছর জাঁকজমক করে জলসা হয়। এ বারও হচ্ছে। তবে আয়োজন কাটছাঁট করে চিকিৎসায় সাহায্য করা হবে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।

শিক্ষক-শিক্ষিকারাও নানা ভাবে পাশে দাঁড়িয়েছেন। নিজেরা টাকা তুলছেন। পরিচিতদের কাছেও সাহায্যের আবেদন করছেন মুখোমুখি বা সোশ্যাল মিডিয়ায়। ফেসবুকে ভিডিয়ো পোস্ট করে শিক্ষক-শিক্ষিকারা বলেছেন, ‘‘কঠোর পরিশ্রম করে পড়াশোনার পরে সবেমাত্র জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চেষ্টা করছিলেন আক্রম। এখন ওঁকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে দিতে সকলকে পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করছি।’’ স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক কমলেন্দু দালাল বলেন, ‘‘এ ভাবে চোখের সামনে কাউকে হারিয়ে যেতে দিতে পারি না। আক্রম সংখ্যালঘু পরিবারের সন্তান। কিন্তু আমাদের কাছে ওঁর পরিচয় স্কুলের প্রাক্তনী।’’ স্কুলের প্রধান শিক্ষক কোরবান আলির কথায়, ‘‘ছেলেটি মেধাবী। দেখা যাক, আমরা কত দূর কী করতে পারি।’’

দিন কয়েক আগে আত্মীয়-বন্ধুরা আক্রমকে মুম্বইয়ে নিয়ে যান চিকিৎসার জন্য। আপাতত বাসা ভাড়া করে সেখানেই রয়েছেন। পরিবার সূত্রে জানা গেল, ৬ মার্চ হাসপাতালে ভর্তি করার কথা।

এত মানুষ ছেলের জন্য এগিয়ে আসায় বুকে বল পাচ্ছেন আক্রমের মা তাজনুর বিবি। বললেন, ‘‘সকলের কাছে অনুরোধ, ছেলেটাকে বাঁচান।’’

দিল্লি-সহ দেশ জুড়ে নানা প্রান্তে ঘটে চলা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার পরিবেশের মধ্যে আক্রমের পাশে সকলের এ ভাবে এগিয়ে আসা কি নেহাতই বিচ্ছিন্ন ঘটনা, নাকি এই হল সনাতন ভারতের ঐতিহ্য— প্রশ্নটা ঘুরে ফিরে উঠেই যাচ্ছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Akram Sardar Gobardanga
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy