Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Manish Shukla Murder case

১৪ বুলেটে ঝাঁঝরা মণীশের দেহ, ১ আততায়ী শনাক্ত, ধৃত ২

ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে ইঙ্গিত ১৪টি বুলেটের ক্ষত পাওয়া গিয়েছে তাঁর শরীরে। দেহে আটকে থাকা ‘বুলেট হেড’ দেখে তদন্তকারীদের সন্দেহ ৭এমএম পিস্তল থেকে গুলি করা হয়েছে।

মণীশ শুক্লর মৃতদেহ নিয়ে মিছিল করে বিজেপি। নিজস্ব চিত্র।

মণীশ শুক্লর মৃতদেহ নিয়ে মিছিল করে বিজেপি। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২০ ১৯:৪৫
Share: Save:

ক’দিন আগেও তাঁর ঘনিষ্ঠদের মধ্যে কথাটা চালু ছিল— ‘‘মণীশ ভাইয়া কে আগে গোলি ভি রুক যাতা হ্যায়।’’ ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে গো-বলয়ের ঢঙে ‘ভাইয়া’ সংস্কৃতির অন্যতম ধারক মণীশ শুক্লর অনুগামীদের এ কথা বলার কারণ আছে। এর আগে চার বার খুব কাছ থেকে তাঁকে গুলি করা হয়েছে। ছোড়া হয়েছে বোমাও। অবিশ্বাস্য ভাবে প্রতি বারই অক্ষত থেকেছেন মণীশ। কয়েক বছর আগে, মণীশের বাড়ির সামনেই আততায়ীরা তাঁর উপর হামলা চালায়। মণীশের সঙ্গীদের দাবি, আততায়ী ট্রিগার চালানোর পর আচমকাই পিস্তলের ব্যারেলে আটকে যায় বুলেট!

সেই মণীশকেই রবিবার রাতে কার্যত ঝাঁঝরা করে দিয়েছে এক ডজনের বেশি বুলেট। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে ইঙ্গিত ১৪টি বুলেটের ক্ষত পাওয়া গিয়েছে তাঁর শরীরে। দেহে আটকে থাকা ‘বুলেট হেড’ দেখে তদন্তকারীদের সন্দেহ ৭এমএম পিস্তল থেকে গুলি করা হয়েছে। টিটাগড়ে রবিবার রাতে বিজেপি নেতা মণীশ শুক্ল খুনের তদন্ত ভার সোমবার দুপুরেই দেওয়া হয় রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডিকে।

আততায়ীদের মধ্যে অন্তত একজনকে শনাক্ত করা গিয়েছে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে। সোমবার বিকেলে এমনটাই ইঙ্গিত সিআইডি কর্তাদের। দিনভর প্রাথমিক তদন্তের পর সিআইডি আধিকারিকদের ইঙ্গিত, একাধিক আততায়ী ছিল। তবে তার মধ্যে এক জনকে চিহ্নিত করা গিয়েছে। সিআইডি সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত এই খুনের ঘটনায় দু’জনকে পাকড়াও করা হয়েছে। এ দিন সিআইডি-র ডিআইজি প্রণব কুমার ঘটনাস্থলে যান। সিআইডি আধিকারিকরা ঘটনাস্থলের ভিডিয়োগ্রাফি করার পাশাপাশি ওই এলাকার বিভিন্ন সিসিটিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখেন।

সিআইডি-র আধিকারিকরা এ দিন ঘটনাস্থলের কাছেই একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় যান। বেশ অনেকটা সময় তাঁরা কাটান ওই শাখায়। কোনও আর্থিক লেনদেন দেখতে ওই ব্যাঙ্কে সিআইডি আধিকারিকরা গিয়েছিলেন কি না তা নিয়ে তাঁরা কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে সিআইডি আধিকারিকরা মণীশ শুক্লরও কল ডিটেলস খতিয়ে দেখছেন। কারা তাঁকে গত কয়েক দিনে ফোন করেছিল, ঘটনার আগে কে কে ফোন করেছিল সেই তালিকাও তৈরি করা হচ্ছে।

তবে তদন্তকারীদের সূত্রেই প্রকাশ্যে এসেছে বেশ কয়েকটি তথ্য, যা কাকতালীয় ভাবেই জুড়ে যাচ্ছে মণীশ-খুনের তদন্তের সঙ্গে। মণীশের দেহরক্ষী কেন ঘটনার দিন ছুটিতে গেলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মণীশ ঘনিষ্ঠেরা জানিয়েছেন, দেহরক্ষী না থাকলে আগে মণীশ নিজের লাইসেন্সড পিস্তল সঙ্গে রাখতেন। রবিবার সেটাও ছিল না। মণীশের সঙ্গীদের দাবি, ছ’মাস আগে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পক্ষ থেকে মণীশের পিস্তলের লাইসেন্স যাচাই করতে নেওয়া হয়। ওই লাইসেন্সটি ভিন্‌ রাজ্য থেকে ইস্যু করা। পুলিশ লাইসেন্সের বৈধতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে এবং যত দিন যাচাই না হচ্ছে তত দিন তাঁর পিস্তল পুলিশের কাছে জমা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: মণীশ-হত্যা ঘিরে তপ্ত কলকাতাও, তিক্ত বাগ্‌যুদ্ধে অর্জুন-ফিরহাদ

আরও পড়ুন: রাজনীতি না পুরনো দুশমনি? রহস্য বাড়ছে মণীশ খুনে​

তদন্তকারীদের দাবি, এ সমস্ত তথ্যই ছিল আততায়ীদের কাছে। এটাও তারা আগে থেকে জানত যে, মণীশ রবিবার টিটাগড়ে যাবেন। তাই তাঁদের সন্দেহ গোটা পরিকল্পনায় এমন কেউ যুক্ত আছে যে মণীশের গতিবিধি জানত।

এই নিয়ে পঞ্চম বার, এর আগে চার বার হামলা হয়েছে তাঁর উপর। ২০০৯ সালে ব্যারাকপুরের এসএন ব্যানার্জি রোডে তাঁর উপর আক্রমণ চালানো হয়। ২০১১ সালে রবিবারের ঘটনাস্থল থেকে একটু দূরে ব্রহ্মস্থান বা বড়া মস্তানে এক সঙ্গীর বাড়িতে তাঁর উপরে হামলা চলে। সেই গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। গুলি লাগে আনন্দ শর্মা নামে এক ব্যক্তির কোমরে। তিনি এখনও প্রায় পঙ্গু। ২০১৩ সালে ফের টিটাগড়েই হামলা। রবিবারের ঘটনাস্থলের পাশেই। সে বারেও অক্ষত ছিলেন তিনি। এর পর ২০১৮-য় তাঁর বাড়ির কাছেই। সে বারও মণীশকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হলে তা ব্যারেলে আটকে যায়। অন্য আততায়ীর চালানো গুলি লাগে মণীশের সঙ্গীর গায়ে। আগের চারটি হামলার তিনটিই টিটাগড়ে। কিন্তু এ বার আর শেষরক্ষা হল না।

অন্য বিষয়গুলি:

Manish Shukla BJP Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy