৫২ বছরে প্রথম বার এমন হল। বাংলার কোনও সাহিত্যিকের সৃষ্টি সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পাচ্ছে না এ বছর। বুধবার দুপুরে এই খবর জানিয়েছিল আনন্দবাজার ডট কমই। ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতে সেই খবরের সূত্র ধরে তথ্য জানার অধিকার (আরটিআই) আইনে সাহিত্য অকাদেমির কাছে একাধিক প্রশ্ন পাঠালেন অকাদেমিরই সাধারণ পরিষদের (জেনারেল কাউন্সিল) প্রাক্তন সদস্য অনাদিরঞ্জন বিশ্বাস।
অনাদি আন্দামানের একটি সংবাদপত্র সম্পাদনা করেন। সেই পরিচয়েই আরটিআই করেছেন তিনি। অকাদেমি কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি জানতে চেয়েছেন, সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারের জন্য বাংলা ভাষার কোন কোন বইয়ের তালিকা জমা পড়েছিল? পুরস্কার ঘোষণা না-করার কারণ হিসাবে কী তথ্য রয়েছে অকাদেমি কর্তৃপক্ষের কাছে, তা-ও জানতে চেয়েছেন তিনি।
২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাহিত্য অকাদেমির (দিল্লি) জেনারেল কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন অনাদি। বাংলার যে বোর্ড রয়েছে, তারও সদস্য ছিলেন তিনি। কিন্তু ২০২২ সালের ১০ মে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাংলা আকাদেমি পুরস্কার দেওয়ার প্রতিবাদে তিনি সেই বোর্ড থেকে পদত্যাগ করেন। যদিও মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত দিল্লির জেনারেল কাউন্সিল সদস্য ছিলেন তিনি। অনাদির কথায়, ‘‘যে বাংলা ভাষা গত বছর ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা পেল, সেই ভাষা থেকে কেউ সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পেলেন না কেন? কী এমন ঘটল? সেটাই আমি জানতে চেয়েছি।’’ সাম্প্রতিক কিছু উদাহরণ দিয়ে তিনি সাহিত্যে ‘সিন্ডিকেট’-এর অভিযোগ তুলছেন।
আরও পড়ুন:
কেন বাংলার কেউ এ বছর পুরস্কার পেলেন না সেই প্রশ্নে অকাদেমির সভাপতি মাধব কৌশিক বুধবার আনন্দবাজার ডট কমকে বলেছিলেন, ‘‘কিছু টেকনিক্যাল কারণে এ বার তা সম্ভব হয়নি।’’ কী ধরনের ‘টেকনিক্যাল কারণ’? এই প্রশ্নের জবাবে কৌশিকের বক্তব্য ছিল, ‘‘এ বিষয়ে বলতে পারবেন সংস্থার সচিব।’’ সাহিত্য অকাদেমির সচিব পদে রয়েছেন কে শ্রীনিবাস রাও। তিনি ফোন ধরেননি। ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও মোবাইলে পাঠানো বার্তার কোনও জবাব দেননি।
সাহিত্য অকাদেমির তরফে যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তাতে এ বার মোট ২৩টি ভাষার সাহিত্যিককে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। তাতে নেই বাংলার কোনও সাহিত্যসৃষ্টি। এ নিয়ে নানা কারণ শোনা যাচ্ছে সাহিত্যমহলে। কেউ বলছেন, এক নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে পুরস্কার দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল একটি মহল থেকে। কিন্তু দিল্লি তাতে সায় দেয়নি। আবার অনেকের বক্তব্য, বাংলা ভাষার প্রতি ‘অমর্যাদা’ করার জন্যই এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। আরও একটি মত রয়েছে। রাজ্যের যে বোর্ড রয়েছে তার এক সদস্যের কথায়, ‘‘সাহিত্য অকাদেমির ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় জুরি বোর্ড। সেখানে এক জন শেষ মুহূর্তে সরে দাঁড়ান। তাই স্থগিত করতে হয়।’’ কিন্তু আসলে কী হয়েছে, কোন কোন বই পুরস্কারের জন্য প্রস্তাবিত হয়েছিল, সেগুলিই আরটিআইয়ের মাধ্যমে জানতে চেয়েছেন আন্দামানের অনাদি।