Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Krishna Bose

Nirupama Rao: ‘কোমল শক্তিতেও চিনের কাছে হারছে ভারত’

চিনে নাগরিক স্বাধীনতার কণ্ঠরোধ নিয়ে নানা প্রশ্ন থাকলেও উচ্চ শিক্ষার উৎকর্ষ বা পর্যটনের আকর্ষণে তাদের থেকে ঢের পিছিয়ে ভারত।

 ‘কৃষ্ণা বসু স্মারক বক্তৃতা’ দিচ্ছেন নিরুপমা রাও। অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত সুগত বসু এবং সুমন্ত বসু। রবিবার নেতাজি ভবনে।

‘কৃষ্ণা বসু স্মারক বক্তৃতা’ দিচ্ছেন নিরুপমা রাও। অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত সুগত বসু এবং সুমন্ত বসু। রবিবার নেতাজি ভবনে। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:১৫
Share: Save:

এও যেন দু’টি ভারতের গল্প। এক দিকে গাঁধী, রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, অরবিন্দ, সুভাষের আদর্শের পথ ধরে মহতী মানবিক ভারতাত্মার নির্মাণ, অন্য দিকে দারিদ্র্য, বৈষম্য, অশিক্ষায় ধ্বস্ত এক ভাঙাচোরা বাস্তবতা। ভারত বলতে এই বিসম গরমিল বা স্ববিরোধের আখ্যানই বার বার খানিক নিরুপায় ভঙ্গিতে মেলে ধরছিলেন এ দেশের প্রাক্তন বিদেশ সচিব নিরুপমা রাও। রবিবার সন্ধ্যায় কৃষ্ণা বসু স্মারক বক্তৃতার দ্বিতীয় বছরে ভার্চুয়াল মাধ্যমে (নেটসংযোগে) কথা বলছিলেন তিনি।

বক্তৃতার বিষয়বস্তু: পাওয়ার অব সফট পাওয়ার। বাংলা ভাষান্তরে বলাই যায়, কোমল শক্তির ক্ষমতার দৌড়। সাংসদ কৃষ্ণা বসু এ দেশের ভাবমূর্তি নির্মাণে যে কোমল শক্তিতে আমৃত্যু বিশ্বাস রেখেছেন। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, প্রযুক্তি বা শিক্ষার জোর, অর্থনীতির বিস্তার, সাংস্কৃতিক পরিচয়, পরিবেশ সচেতনতা আবার পর্যটন, ভোজ-সংস্কৃতি ইত্যাদি নানা আঙ্গিকে কোমল শক্তির বিচিত্র প্রকাশ দেখা যাচ্ছে আজকের বিশ্ব রাজনীতিতে। আসলে সামরিক শক্তির (হার্ড পাওয়ার বা কঠিন শক্তি) প্রয়োগ বা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার চোখরাঙানিই এখনও কোমল শক্তির নেপথ্যে আসল জোর বলে অনেকের বিশ্বাস। এ কথা মনে করিয়েও নিরুপমা এ দিন কোমল শক্তির কার্যকারিতা নিয়ে সরব হয়েছেন। “সামান্য ছুঁচে যে কাজ সারা যায়, তার জন্য খামোখা অস্ত্রের প্রয়োগ কেন?” তবে নিরুপমার মতে, কোনও কিংবদন্তিময় অতীত গৌরবের ছায়া নয় একটি দেশের এই কোমল শক্তির শিকড় থাকা উচিত, তার সমকালে। যেমন সুন্দর, পরিচ্ছন্ন শহর, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার উৎকর্ষ, লিঙ্গ বৈষম্যের মুক্তি বা বহুত্বের অনুশীলনে। এবং এই কোমল শক্তির প্রয়োগেও চিন, এমনকি কোরিয়ার মতো ছোট দেশের কাছেও ভারত বার বার হেরে যাচ্ছে বলে এ দিন প্রাক্তন বিদেশ সচিব গভীর আক্ষেপ করেন।

চিনে নাগরিক স্বাধীনতার কণ্ঠরোধ নিয়ে নানা প্রশ্ন থাকলেও উচ্চ শিক্ষার উৎকর্ষ বা পর্যটনের আকর্ষণে তাদের থেকে ঢের পিছিয়ে ভারত। এই পরিস্থিতিতে নিরুপমা মনে করেন, চিনের সঙ্গে টক্করে ভারতের আসল শক্তি তার গণতান্ত্রিক বিশ্বাসযোগ্যতা। নিরুপমা বলেন, “ভারতের সম্পদ তার মুক্ত সমাজ, প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা, বহুত্বে আস্থা এবং সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা। এই ক্ষেত্রগুলি আমাদের আরও মজবুত করা উচিত।” সব ধরনের মতামতকে স্বাগত জানিয়ে এবং সব কিছু এক ছাঁচে ঢালাই করার বানের জলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েই এ দেশকে অমিতাভ ঘোষের ভাষায় ‘আশাবাদের ভূখণ্ড’ করে তোলা সম্ভব বলে নিরুপমার মন্তব্য।

তবে আফগানিস্তানের উন্নয়নে ভারতের ভূমিকা এ দেশের বিদেশনীতির একটি সদর্থক দিক বলে নিরুপমা মনে করেন। কিন্তু ভারত-পাক টানাপড়েনে এ দেশের ভারমূর্তিরও ক্ষতি হয়েছে। বলিউড বা যোগের বাইরেও ভারতের সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক পরিচয় তৈরি করা উচিত বলে নিরুমার মত। তিনি বলেন, “ব্র্যান্ড নির্মাণে সচেষ্ট হয়ে চিনের টিকটক বা কোরিয়ার পপের মতো তরুণসমাজে গ্রহণযোগ্য পরিচয়ও এখন ভারতের দরকার।”

ভারতের ইতিহাসের নানা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সাক্ষী সুভাষচন্দ্রের ভাইপো বৌ কৃষ্ণা বসুর জীবনে বহুত্বের সাধনার কথা মনে করিয়েছেন নিরুপমা। কৃষ্ণা যখন সংসদে পররাষ্ট্র বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারপার্সন, নিরুপমা তখন বিদেশ দফতরের মুখপাত্র। সেই সময়ে দুই বিদুষী নারীর সৌহার্দ্যের কথা মনে করিয়ে এ দিন আলোচনার ধরতাই বেঁধে দেন, কৃষ্ণার পুত্র তথা ইতিহাসবিদ সুগত বসু। গত বছরে প্রয়াত কৃষ্ণার এ দিন ছিল ৯১ বছরের জন্মদিন। তাঁর ছোট ছেলে অর্থনীতির অধ্যাপক সুমন্ত্র বসুর সঙ্কলিত এবং সম্পাদিত কৃষ্ণা বসুর প্রবন্ধ সংগ্রহের এ দিন নেতাজি ভবনে আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করা হয়। বক্তৃতা শেষে তাঁর কৃষ্ণাদির স্মরণে ‘পুরানো সেই দিনের কথা’ ধরেন নিরুপমা, যে গানেও বিশ্বসাথে যোগে বাংলা ও স্কটিশ ভাষা, সুরের মেলবন্ধন।

অন্য বিষয়গুলি:

Krishna Bose
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy