Advertisement
০৮ জানুয়ারি ২০২৫
Buddhadeb Bhattacharjee

বুদ্ধদেব স্মরণে বিধানসভায় গৃহীত শোকপ্রস্তাব গেল বুদ্ধ-জায়ার কাছে, শিল্পকলা আছে সেখানে, শিল্পায়ন নেই

গত ৮ অগস্ট প্রয়াত হন বুদ্ধদেব। ৯ অগস্ট তাঁর দেহদান করা হয় নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগে। তার পর ২ সেপ্টেম্বর বিধানসভার অধিবেশন শুরুর দিন বুদ্ধদেব স্মরণে শোকপ্রস্তাব গৃহীত হয়।

শোকপ্রস্তাবে উল্লেখ রয়েছে শিল্পসংস্কৃতির, কিন্তু শিল্পায়নের উল্লেখ নেই।

শোকপ্রস্তাবে উল্লেখ রয়েছে শিল্পসংস্কৃতির, কিন্তু শিল্পায়নের উল্লেখ নেই। —গ্রাফিক আনন্দবাজার অনলাইন।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫ ২১:৩০
Share: Save:

প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য স্মরণে রাজ্য বিধানসভায় যে শোকপ্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল, তা পৌঁছেছে তাঁর স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্যের হাতে। গত শুক্রবার দুপুরে বিধানসভার দু’জন কর্মী পাম অ্যাভিনিউয়ের বাসভবনে গিয়ে মীরার হাতে খামবন্দি ওই শোকপ্রস্তাব দিয়ে আসেন। তাতে বুদ্ধদেবের রাজনৈতিক জীবন, শিল্পকলা বিষয়ক তাঁর কাজকর্মের সবিস্তার উল্লেখ থাকলেও তিনি যে রাজ্যে শিল্পায়নের পথে হেঁটেছিলেন, তার কোনও উল্লেখ নেই!

গত ৮ অগস্ট প্রয়াত হন বুদ্ধদেব। ৯ অগস্ট তাঁর দেহদান করা হয় নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগে। তার পর ২ সেপ্টেম্বর বিধানসভার অধিবেশন শুরুর দিন বুদ্ধদেব স্মরণে শোকপ্রস্তাব গৃহীত হয়। কার্যবিবরণীতে যা লিপিবদ্ধ রয়েছে, তা-ই ছাপার অক্ষরে দেওয়া হয়েছে বুদ্ধদেবের পরিবারের হাতে। যেখানে বুদ্ধদেবের জন্ম, বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা, ছাত্র-যুব আন্দোলন থেকে বিধায়ক এবং মন্ত্রী হওয়া— সব কিছুই বছর ধরে ধরে উল্লিখিত হয়েছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হয়ে যে শিল্পায়নের পথে তিনি হেঁটেছিলেন এবং যে ঘটনা বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসকে ভিন্ন খাতে বইয়ে দিয়েছিল, সে সবের উল্লেখ করা হয়নি।

সাহিত্য-সংস্কৃতির বিষয়ে বুদ্ধদেবের অপার আগ্রহ ছিল। তারও উল্লেখ রয়েছে শোকপ্রস্তাবে। লেখা হয়েছে তিনি মায়াকোভস্কি, গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ়ের উপন্যাস বাংলায় অনুবাদ করেছেন। ‘নন্দন’ তৈরিতে তাঁর যে ভূমিকা ছিল, তা-ও লেখা রয়েছে। রাজনীতির পাশাপাশি প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সামাজিক মূল্যবোধের কথাও লেখা হয়েছে শোকপ্রস্তাবে। ১৯৭৭ সালে প্রথম বার ভোটে জিতেছিলেন বুদ্ধদেব। ১৯৮২ সালে তিনি পরাস্ত হন। তার পর ১৯৮৭ থেকে ২০১১ পর্যন্ত যাদবপুর থেকে জিতে বিধায়ক মন্ত্রী ও পরে মুখ্যমন্ত্রী হন তিনি। ২০১১ সালে যাদবপুরেই বুদ্ধদেব পরাস্ত হন একদা তাঁরই অধীনস্থ রাজ্যের প্রাক্তন শীর্ষ আমলা মণীশ গুপ্তের কাছে। ২০০০ সালে জ্যোতি বসুর জায়গায় প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হন তিনি। তার পর ২০০১ এবং ২০০৬ সালের ভোটে জিতে টানা দু’মেয়াদের পূর্ণ সময় মুখ্যমন্ত্রিত্ব সামলেছিলেন। কবে তিনি সিপিএম রাজ্য কমিটিতে জায়গা পেয়েছিলেন, কবে কেন্দ্রীয় কমিটি এবং পলিটব্যুরোয়, শোকপ্রস্তাবে সে সবেরই উল্লেখ রয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে বিধানসভা ভোটে শিল্পায়নের স্লোগান দিয়েই সপ্তম বামফ্রন্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ২৩৫ আসন নিয়ে সরকারে ফেরেন বুদ্ধদেব। সরকার গঠনের অব্যবহিত পরেই টাটা গোষ্ঠী বাংলার সিঙ্গুরে মোটরগাড়ি নির্মাণের কথা ঘোষণা করে। কিন্তু তার পর থেকেই পরিস্থিতি পাল্টে যায়। সিঙ্গুরে ‘অনিচ্ছুক’ কৃষকদের আন্দোলন শুরু হয়। পরের বছর ২০০৭ সালের প্রথমেই প্রস্তাবিত কেমিক্যাল হাব নিয়ে নতুন অশান্তির সূত্রপাত হয় পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে। দ্রুত বদলাতে থাকে বাংলার রাজনৈতিক সমীকরণ। পরিস্থিতি এমনই হয় যে, ২০০৮ সালে ৯০ শতাংশ কাজ হয়ে যাওয়ার পরেও টাটা গোষ্ঠী সিঙ্গুর থেকে কারখানা প্রত্যাহারের ঘোষণা করে। নন্দীগ্রামে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ১৪ জনের মৃত্যু বুদ্ধদেব সরকারকে আরও কোণঠাসা করে দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ২০১১ সালে ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

রাজ্য বিধানসভার নেওয়া শোকপ্রস্তাবে বুদ্ধদেবের শিল্পায়ন প্রসঙ্গ না থাকা নিয়ে কটাক্ষ করেছেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। সোমবার তিনি বলেন, ‘‘আসলে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী জানেন যে, বুদ্ধদার শিল্পায়নের সম্পর্কে সদিচ্ছা লিপিবদ্ধ করলে তাঁর শিল্প-বিরোধী মানসিকতা ফের জনমানসে উঠে আসবে। তাই সরকার পক্ষ সেই ঝুঁকি নেয়নি।’’ তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ পাল্টা বলেন, ‘‘বুদ্ধদেববাবু প্রয়াত হয়েছেন। তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে শোকপ্রস্তাব নেওয়া হয়েছে বিধানসভায়। এটা মনে রাখতে হবে, শিল্পায়নের পথে তাঁর অগ্রসর হওয়া বিতর্কিত অধ্যায়। মৃত্যুর পরে কোনও বিতর্ক টেনে না আনাটাই শিষ্টাচার। বাকিটা বিধানসভা বলতে পারবে।’’

২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে অসুস্থ বুদ্ধদেব কার্যত গৃহবন্দি হয়ে পড়েছিলেন। চোখের সমস্যার পাশাপাশি ফুসফুসের সমস্যা নিয়েও নাজেহাল ছিলেন তিনি। শেষ কয়েক বছর ২৪ ঘণ্টা তাঁর শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হত। মাঝে দু’বার তাঁকে হাসপাতালে বেশ কয়েক দিন করে ভর্তি থাকতে হয়েছিল। বুদ্ধদেব যে পর্বে অসুস্থ, তখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা নিয়মিত খোঁজখবর রাখতেন। বাড়িতে গিয়েও দেখে এসেছেন তাঁকে। কয়েক বছর পুজোতে মীরা এবং বুদ্ধদেবকে শারদ উপহারও পাঠিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বুদ্ধদেবের মৃত্যুর পরেও বাড়িতে গিয়ে দেখা করেছিলেন। কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম এবং মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন শেষকৃত্য তত্ত্বাবধান করার।

অন্য বিষয়গুলি:

Buddhadeb Bhattacharjee CPM Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy