ঝাড়গ্রাম মহকুমার বিনপুরের মালাবতী জঙ্গলে বাঘের পায়ের ছাপ। —নিজস্ব ছবি।
থাবার দৈর্ঘ্য লম্বায় প্রায় ৬ ইঞ্চি। ভিজে মাটিতে গভীরতাও দেড় ইঞ্চির মতো। এত বড় বিড়াল গোত্রীয় প্রাণী বাঘ ছাড়া আর কিছু হতেই পারে না বলে মনে করছেন বন বিভাগের আধিকারিকরা। ঝাড়গ্রাম মহকুমার বিনপুরের মালাবতী জঙ্গলের প্রায় ২০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধ এলাকায় অজানা জন্তুর পায়ের যে ছাপ গত শনিবার থেকে দেখা গিয়েছে, তাতে কোনও নখের দাগ নেই। সেখান থেকেই বনকর্মীরা নিশ্চিত ছিলেন, পায়ের ছাপ কোনও বিড়াল গোত্রীয় প্রাণীর।
প্রথমে বন দফতরের আধিকারিকদের একাংশের সন্দেহ ছিল, থাবার ছাপটি কোনও বড়সড় চিতা বাঘেরও হতে পারে। কিন্তু এত বড় থাবা চিতা বাঘের হতে পারে না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর তাই সোমবার বিকেলের মধ্যেই মালাবতীর জঙ্গলের মধ্যে এবং আশেপাশে চারটি ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানো হবে বলে জানিয়েছেন বন দফতরের আধিকারিকরা। ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে ক্যামেরা। সঙ্গে রয়েছে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পে কাজ করা একটি বন কর্মীর দল। তাঁদের সঙ্গে থাকছে ঘুমপাড়ানি গুলিও।
তবে পায়ের ছাপটি বাঘ না বাঘিনীর, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে বিশেষজ্ঞদের একাংশের মধ্যে। কারণ, গত কয়েক দিনের বর্যায় ভিজে মাটিতে বড় থাবার সামনে একই রকম দেখতে তুলমামূলক ছোট থাবার ছাপও পেয়েছেন বনকর্মীরা। সেখান থেকেই বনকর্মীদের সন্দেহ, পাগমার্কটি বাঘিনীর এবং সঙ্গে রয়েছে শাবক। তবে খুব ছোট শাবক নয়। বিশেষজ্ঞদের পরিভাষায় শাবকটি সাব-অ্যাডাল্ট অর্থাৎ ১৩-১৪ মাসের। তবে বন দফতরের শীর্ষ আধিকারিকরা এখনই নিশ্চিত ভাবে বলতে চাইছেন না শাবকের বয়স।
বন দফতরের এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, ‘‘ক্যামেরায় ছবি ধরা না পড়া পর্যন্ত নিশ্চিত ভাবে বলা সম্ভব নয়। সবটাই আমাদের অনুমান।” তবে সঙ্গে শাবক থাকলে যে বাঘকে ধরা বেজায় কঠিন হবে, তা মানছেন বন দফতরের কর্তারা। এক বনকর্তা বলেন, ‘‘ক্যামেরায় ছবি পাওয়ার পর নজর রাখতে হবে বাঘিনী এবং তার শাবকের গতিবিধির উপর। যে জঙ্গলে এখনও তারা ঘোরাফেরা করছে তা খুব একটা গভীর নয় এবং বাঘ থাকার উপযোগীও নয়। এদের গভীর বনের দিকে পাঠাতে হবে। না হলে খাবার না পেয়ে গ্রামে হানা দিয়ে আতঙ্ক বাড়াতে বাড়ে এরা।” তবে এখনও পর্যন্ত মালাবতীর জঙ্গলের আশে পাশে লক্ষণপুর, মোহনপুর, সাতবাতি, কালিয়ামের মতো গ্রামগুলিতে বাঘ ঘুরে বেড়ানোর প্রমাণ মিললেও গরু-ছাগল মারার কোনও খবর মেলেনি। বনকর্মীদের ধারণা, হয় দু’জনেরই পেট ভর্তি রয়েছে, নয়তো জঙ্গলে কোনও ছোট প্রাণী মেরে খেয়েছে। তাই বাঘিনীর গতিবিধির উপর নজর রেখে ঘন জঙ্গলে পাঠানোই মূল টার্গেট বনকর্মীদের।
রাজ্যের বন্যপ্রাণ রক্ষা কমিটির সদস্য জয়দীপ কুণ্ডু বলেন, ‘‘ঘুমপাড়ানি ডার্ট এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা বিপজ্জনক। কারণ, সঙ্গে শাবক রয়েছে।”
২০১৮ সালে লালগড়ের জঙ্গলে হঠাৎই এভাবেই চলে এসেছিল একটি পুরুষ বাঘ। বাঘের গতিবিধির উপর নজর রেখেও, সেই বাঘকে বাঁচানো যায়নি। শিকার উৎসবের সময় সেই বাঘকে পিটিয়ে মারেন এলাকার মানুষদের একাংশ। এ বার যাতে সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, তার জন্য প্রথম থেকেই গ্রামের বাসিন্দাদের সচেতন করার চেষ্টা করছেন বন দফতরের কর্মীরা। আতঙ্ক যাতে না ছড়ায় তার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে সন্ধ্যার পর ওই এলাকার মানুষ যাতে বাইরে না বেরোন তার জন্য বলা হচ্ছে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে। বন দফতরের আধিকারিকদের সন্দেহ, হয় ওড়িশার সিমলিপাল নয়তো ঝাড়খণ্ডের পলামু-বেতলা এলাকা থেকে বাঘিনী শাবক-সহ এসেছে।
অন্য দিকে, বাঁকুড়ার বারিকুলে যে অজানা জন্তুর পায়ের ছাপ ঘিরে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল সেটি বাঘের নয় বলে নিশ্চিত হয়েছেন বন দফতরের আধিকারিকরা। ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়া ছবি থেকে জানা গিয়েছে, পায়ের ছাপটি একটি পূর্ণ বয়স্ক নেকড়ের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy