বিজ্ঞানীর নামের বোর্ড। নিজস্ব চিত্র
টাইগার হিল, মিরিক লেক, ম্যালের পরে দার্জিলিঙে পর্যটকদের কাছে নতুন আকর্ষণ হতে চলছে রাজ্য বন দফতরের লয়েডস বোটানিক্যাল গার্ডেন। ওই বোটানিক্যাল গার্ডেন ১৪১ বছরে পা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ১৮৭৮ সালে স্থাপিত এই সুবিশাল বাগানকে ঘিরে স্মৃতি জড়িয়ে আছে উইলিয়াম লয়েড থেকে জগদীশচন্দ্র বসু বা বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের মত একাধিক ঘটনার। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, তাদের হাতে রয়েছে সেই সময়ের একাধিক লিখিত তথ্য, চিঠি, ছবিও। প্রচারের অভাবে তা কোনও সময়ই সামনে আসেনি। তাই দার্জিলিঙে আসা দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে বোটানিক্যাল গার্ডেনের সেরকম আকর্ষণ ছিল না। এ বার পুরো বাগানটির ভোলবদল করার প্রচেষ্টা গত কয়েকমাস ধরে শুরু হয়েছে।
রাজ্য বন দফতর নতুন বছরের শুরুতেই বোটানিক্যাল গার্ডেন চত্বরেই সংগ্রহশালা তৈরি করছে বলে সূত্রের খবর। সেখানে ইতিহাসের পাতায় থাকা নানা আকর্ষণীয় তথ্য সকলের সামনে তুলে ধরতে কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই ৪০ একরের ওই বাগানের কিছু রাস্তার নামকরণ কিছু বিজ্ঞানী ও কিউরেটরদের নামে করা হয়েছে। বন দফতরের আধিকারিরা জানাচ্ছেন, তাঁদের নামের সঙ্গে এই বোটানিক্যাল গার্ডেনের স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। এরফলে ধীরে ধীরে আকর্ষণ বাড়তেও শুরু করেছে বলে দাবি। নতুন করে পাহাড়ের ম্যাল চৌরাস্তা, চকবাজার বা চিড়িয়াখানার মত অনেকেই পাহাড়ে ঘুরতে গিয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেনটির নিরিবিলিতে ঘুরে আসাও শুরু করেছেন।
রাজ্য বন দফতরের একটি গবেষণা শাখার বনাধিকারিক অরুণ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দার্জিলিঙের ইতিহাস, হেরিটেজ অনেক কিছু বোটানিক্যাল গার্ডেনটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে। নানা কারণে তা প্রচারে আসেনি। বন দফতর এ বার সেগুলিকে এক ছাতার তলায় এনে মানুষের সামনে পুরনো ইতিহাসকে তুলে ধরার প্রচেষ্টা শুরু করেছে।’’
বন দফতর সূত্রের খবর, ইংল্যান্ডের উইলিয়াম লয়েড নামের এক ব্রিটিশ সাহেবের ব্যাঙ্ক সেই আমলে পাহাড়ে ছিল। লয়েড সাহেবই পাহাড়ের ঢালে ওই বাগান গড়ে তোলেন। পরে তা এ দেশের সরকারের হাতে এসেছিল। তিন ধাপে বাগানটি তৈরি হয়। পাহাড়ে ঢালে প্রথমে নানা প্রজাতির ‘হিমালয়ান প্ল্যান্টেশন’ রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে বিখ্যাত রডোডেনড্রন। পরের ধাপ ফার্ন, অ্যালপাইন জাতীয় গাছ দিয়ে ঘেরা। এর সঙ্গে গ্লাসহাউসে ১৫০ প্রজাতির ক্যাকটাস রয়েছে। পাহাড়ের ঠান্ডা আবহাওয়াতে কৃত্রিম পরিবেশ তৈরি করে ক্যাকটাসগুলি পালন হয়েছে। শেষ স্তরে, অন্তত ২৫০০ প্রজাতির অর্কিড আছে। তেমনিই, শতাব্দী প্রাচীন গাছও বাগান জুড়ে রয়েছে। আমেরিকা, চিন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যাল্ড, ইউরোপ থেকে গত ১০০ বছরে নানা প্রজাতির গাছপালা ওই বাগানে এসেছে। চিন থেকে আনা দুটি ‘লিভিং ফসিল ট্রি’ বাগানের অন্যতম সম্পদ।
বন দফতরের কয়েকজন অফিসার জানান, এই বোটানিক্যাল গার্ডেনে গাছপালার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অনেক ইতিহাসও। জগদীশচন্দ্র বসু এসেছিলেন এখানে। নানা কাজকর্মও করেছেন। বোস ইনস্টিটিউটে থাকাকালীন বিভিন্ন গাছপালা চেয়েছিলেন। তার একাধিক চিঠি বন দফতরের হাতে রয়েছে বলে দাবি। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় এখান থেকেই গাছ বিলি করে তা পুঁতে প্রতিবাদ জানানো হয়। তার কিছু গাছ এখনও বেঁচে রয়েছে। আবার সেই সময়কার সরকারি কর্মীদের বেতনের চিঠি, আয়করের যাবতীয় তথ্যও রয়েছে। ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়র এবং ভূতত্ত্ববিদ উইলিয়াম স্মিথ বা উদ্ভিদবিদ টি অ্যান্ডারসনের ছোঁয়াও বাগান জুড়ে রয়েছে বলে দাবি বন দফতরের একাংশের তরফে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy