দত্তপুকুরের মোচপোল বাজি বিস্ফোরণে উড়ে গিয়েছে বাড়ি। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
কী ভাবে ঘটেছিল বিস্ফোরণ? দত্তপুকুর-কাণ্ডে এই অধরা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে ঘটনাস্থল। বিস্ফোরণস্থলে পড়ে থাকা ইটের দেওয়ালের টুকরো থেকে শুরু করে পারিপার্শ্বিক অবস্থানেই এই উত্তর লুকিয়ে বলে মনে করছেন দীর্ঘ দিন ধরে পুলিশের ফরেন্সিক বিভাগের দায়িত্ব সামলানো আধিকারিকেরা। তবে ঘটনাস্থলে আমজনতার অবাধ প্রবেশের ফলে তথ্য-প্রমাণ কিছুটা হলেও নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকছে বলে জানাচ্ছেন রাজ্য এবং কলকাতা পুলিশের ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা।
গত রবিবার হঠাৎ বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল দত্তপুকুরের মোচপোল এলাকা। সেই ঘটনায় ন’জনের মৃত্যু হয়। তবে বিস্ফোরণের পরে এক সপ্তাহের বেশি কেটে গেলেও এর কারণ নিয়ে এখনও কার্যত অন্ধকারে পুলিশ। বিস্ফোরণস্থলে বাজি তৈরির মশলা, না কি বোমা, না কি অন্য কোনও রাসায়নিক মজুত করা ছিল, তা নিয়েও ধন্দ রয়েছে পুলিশের অন্দরে। এমনকি, যদি মজুত রাখা বাজি তৈরির মশলা থেকেই বিস্ফোরণ ঘটে থাকে, তা হলে তা এতটা ভয়াবহ হয় কী ভাবে— তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নমুনা সংগ্রহ করেছে ফরেন্সিক দল। তবে তাদের রিপোর্ট সম্পর্কে পুলিশকর্তাদের তরফে নির্দিষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। একাধিক বার প্রশ্ন করলেও ‘‘তদন্ত চলছে, শেষ হওয়ার আগে কিছুই বলা সম্ভব নয়’’— এটুকু বলেই দায় সারা হয়েছে। তবে রাজ্য এবং কলকাতা পুলিশের ফরেন্সিক বিভাগে কাজ করা বিশেষজ্ঞেরা ঘটনাস্থলের মধ্যেই বহু অজানা প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে বলে জানাচ্ছেন।
কলকাতা এবং রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে কাজ করা ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, প্রতিটি বিস্ফোরণের আলাদা ধরন থাকে। ঘটনাস্থলের চিত্রও হয় আলাদা। সেই ধরন ও চিত্র পর্যবেক্ষণ করেই বিস্ফোরণের উৎসস্থল থেকে শুরু করে এর কারণ সম্পর্কে অনেকটা ধারণা মেলে। শুধু তা-ই নয়, বিশেষজ্ঞেরা আরও জানাচ্ছেন, বাজি বা বোমা তৈরির মশলাতেও বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক থাকে। কোনও রাসায়নিক শব্দ তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয়। কোনও রাসায়নিক আবার চাপ সৃষ্টি করে, কোনওটা কম্পন। কলকাতা পুলিশের ফরেন্সিক বিভাগে কর্মরত এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘সব সময়ে অগ্নি সংযোগের ফলেই যে বারুদ বা রাসায়নিকে বিস্ফোরণ হবে, এমনটা নয়। অগ্নি সংযোগ ছাড়াও বিস্ফোরণ সম্ভব। বাজি বা বোমা তৈরির মশলায় থাকা একাধিক রাসায়নিকের তারতম্যের ফলে যে কোনও সময়ে এই ধরনের বিস্ফোরণ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।’’
দত্তপুকুরের বিস্ফোরণস্থলে ইটের দেওয়াল তো বটেই, এমনকি, ছাদও ঘটনাস্থল থেকে বেশ কয়েক ফুট দূরে উড়ে গিয়ে পড়েছিল বলে দেখা যায়। এই প্রসঙ্গে ফরেন্সিক আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, খোলা জায়গার তুলনায় কোনও বদ্ধ জায়গায় বাজি বা বোমা ফাটানোর প্রভাব অনেক বেশি মারাত্মক। এমনকি, ধ্বংসাবশেষের দেওয়াল কোন দিকে পড়ে আছে, তা দেখেও অনেক প্রশ্নের উত্তর মেলে। পুলিশের একটি ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির অন্যতম দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্তা বলেন, ‘‘বাজি বা বোমা, যা-ই হোক না কেন, তাতে রাসায়নিক থাকে। মূলত পটাশিয়াম নাইট্রেট, সালফার, চারকোল, বেরিয়াম নাইট্রেট জাতীয় রাসায়নিকই ব্যবহৃত হয়। এই সমস্ত রাসায়নিকের কয়েকটির কোনও ধরনের অগ্নি সংযোগ ছাড়াই এমন বিস্ফোরণ ঘটানোর ক্ষমতা রয়েছে।’’ তবে বিস্ফোরণের পরে ঘটনাস্থলে সাধারণ মানুষের অবাধ প্রবেশ তথ্য-প্রমাণ অন্বেষণের ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘ঘটনাস্থলের প্রতিটি কোণে নানা নমুনা পড়ে থাকে। সাধারণ মানুষ যত ঘটনাস্থলে প্রবেশ করবেন, ততই সেই প্রমাণ নষ্ট হবে। ততই কাজ কঠিন হবে ফরেন্সিকের।’’ তদন্তকারী এক পুলিশকর্তা অবশ্য বলছেন, ‘‘লোকালয়ের ভিতরে এই ঘটনা ঘটায় প্রাথমিক ভাবে অনেকেই ভিতরে প্রবেশ করেছিলেন। তবে পরবর্তী সময়ে তা আটকানো গিয়েছে। সব প্রশ্নের উত্তর পেতে গোটা ঘটনার তদন্ত চালানো হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy