দিলীপ ঘোষ। ফাইল চিত্র।
রাজ্যের কে কে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হবেন, তা নিয়ে বিজেপি-তে অনেক দিন ধরেই জল্পনা চলছিল। সেই জল্পনায় এটা ছিল না যে, বাবুল সুপ্রিয় ও দেবশ্রী চৌধুরী মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়বেন। তবে অন্য এক জল্পনা ছিল—রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হতে পারেন। শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। তাতে দুঃখিত নন। উল্লসিত দিলীপ-ঘনিষ্ঠেরা। কারণ, দিলীপ মন্ত্রী হয়ে গেলে রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব এখনই অন্য কারও হাতে চলে য়াওয়ার আশঙ্কা ছিল তাঁদের। বুধসন্ধ্যায় সেই আশঙ্কা থেকে মুক্ত ঘোষ-বাহিনী।
২০১৯ সালে দিলীপ বিধায়ক থেকে সাংসদ হওয়ার পরেই জল্পনা শুরু হয়, এ বার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করা হতে পারে তাঁকে। দলের সাংসদ সংখ্যা দুই থেকে ১৮-তে নিয়ে যাওয়া দিলীপকে পুরস্কৃত করতে মন্ত্রিত্ব দিতে পারেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তবে আনন্দবাজার অনলাইন আগেই লিখেছিল যে, বাংলা থেকে দু’জনকে মন্ত্রী করা হলে শান্তনু ঠাকুর এবং নিশীথ প্রামাণিক মন্ত্রী হতে পারেন। দিলীপ নন। শান্তনু-নিশীথ মন্ত্রী হলে যে বাবুল সুপ্রিয় এবং দেবশ্রী চৌধুরীকে বাদ পড়তে হবে, তা নিয়েও বিশেষ সংশয় ছিল না। কারণ, এ বারের সম্প্রসারণ হয়েছে মূলত মন্ত্রীদের পারফরম্যান্সের নিরিখে। সঙ্গে যোগ হয়েছে রাজনীতির সমীকরণও।
জল্পনা ছিল একটাই প্রশ্নে— বাংলা থেকে দু’জনকে মন্ত্রী করা হবে না কি চারজনকে। শেষপর্যন্ত বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব চারজনকে মন্ত্রী করেছেন। দিলীপকে নিয়ে তাঁর ঘনিষ্ঠদের মধ্যে জল্পনা শুরু হলেও বিজেপি-র বিভিন্ন স্তরে এ নিয়ে কোনও সংশয় ছিল না যে, দিলীপকে সরকারে নয়, সংগঠনেই রাখা হবে। কারণ, তাঁর মেয়াদ শেষ হতে এখনও দেরি আছে। তা ছাড়া বিজেপি-তে সাধারণত সংগঠনের লোকজনকে সরকারে আনা হয় না। তবে এর ব্যতিক্রমও ঘটেছে। যার প্রকৃষ্টতম উদাহরণ হলেন অমিত শাহ নিজে।
তাঁর ঘনিষ্ঠদের মধ্যে জল্পনা শুরু হওয়ার সময় দিলীপ নিজেই জানিয়েছিলেন, সরকার নয়, সংগঠনে বেশি সময় দিতে চান তিনি। বিধানসভা নির্বাচন থাকায় গেরুয়া শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও ‘সফল’ সভাপতি দিলীপকে সরাতে চাননি। একই সঙ্গে সেই ইচ্ছা ছিল সঙ্ঘ পরিবারেরও। কারণ, বাংলায় বিজেপি সরকার গড়তে পারলে ‘প্রাক্তন প্রচারক’ দিলীপকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চেয়েছিল পরিবার।
সেই স্বপ্ন অধরা থেকে গিয়েছে। তবে এখনও বিজেপি নেতৃত্ব মনে করেন বাংলায় দলের বিধায়ক সংখ্যা তিন থেকে ৭৭ করায় বড় অবদান রয়েছে দিলীপের। গত কয়েক বছরে দিলীপ খুব পরিশ্রম করেছেন বলে বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে রাজ্যে এসে বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। খড়্গপুরের সভায় মোদী বলেছিলেন, ‘‘আমার গর্ব হয় যে আমাদের দলে দিলীপ ঘোষের মতো একজন সভাপতি রয়েছেন। দলকে জেতানোর জন্য গত কয়েক বছরে দিলীপ ঘোষ শান্তিতে ঘুমোননি। দিদির ধমকেও ভয় পাননি। ওঁর উপর অনেক হামলা হয়েছে। মেরে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু বাংলার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পণ নিয়ে এগিয়ে গিয়েছেন।’’
দিলীপ নিজে কি মন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন? প্রকাশ্যে ‘চান না’ বললেও ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি অন্য কথা বলেছিলেন বলেই তাঁর ঘনিষ্ঠদের দাবি। জল্পনা যখন তুঙ্গে, তখন দিলীপ-ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেছিলেন, ‘‘দিলীপদা প্রতিমন্ত্রী হতে চান না। তবে পূর্ণমন্ত্রী করার আশ্বাস এলে তিনি ভেবে দেখবেন।’’ যদিও দিলীপ পাশাপাশিই একাধিকবার ঘনিষ্ঠদের বলেছেন, তিনি মন্ত্রী হয়ে দিল্লিবাসী হয়ে যেতে চান না। বরং রাজ্য রাজনীতিতে তাঁর আগ্রহ বেশি।
তবে দিলীপ শেষপর্যন্ত রাজ্যে থেকে যাওয়া তাঁর ‘বাহিনী’ হিসেবে পরিচিত রাজ্য বিজেপি-র নেতারা খুশি। রাজ্য সভাপতি হিসেবে দিলীপের মেয়াদ শেষ হতে এখন ঢের সময় বাকি। ২০২৩ সালের গোড়ায় হবে রাজ্য সভাপতি নির্বাচন। কিন্তু কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হলে সভাপতি বদল এগিয়ে আসত। তাতে বদলে যেতে পারত গেরুয়া শিবিরের যাবতীয় সমীকরণ। দিলীপ মন্ত্রিসভায় চলে গেলে রাজ্য সংগঠনের শীর্ষে কে কে আসতে পারেন, তা নিয়ে হিসেবনিকেশও শুরু হয়ে গিয়েছিল। আপাতত সে সব থেমেছে।
আশঙ্কা শুধু রাজ্য সংগঠনেই ছিল না, জেলায় জেলায় বিজেপি নেতারাও দিলীপের মন্ত্রিত্ব পাওয়া বা না-পাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। কারণ, এখন রাজ্যের সব জেলায় দিলীপ-ঘনিষ্ঠরাই ক্ষমতাসীন। তাই দিলীপের মন্ত্রিত্বে উন্নতি তাঁদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব ও গুরুত্বে বদল এনে দিতে পারত। তবে রাজ্য বিজেপি-তে এমন অংশও রয়েছে, যারা দিলীপকে আর সভাপতি হিসেবে চায় না। বুধবারের মন্ত্রিসভার রদবদল তাঁদের অনেককে হতাশ করেছে। কারণ, বাংলা থেকে একসঙ্গে চারজন নতুন মন্ত্রী হওয়ার পরে এখনই আর দিলীপের মন্ত্রিত্বে যাওয়ার সুযোগ নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy