ভূগর্ভস্থ জলের পরিমাণ ও গুণগত মান কমছে। প্রতীকী ছবি।
অতিমারি আপাতত বিদায় নিলেও বিভিন্ন জেলায় ভূগর্ভস্থ জলের আর্সেনিক-বিষ থেকে ক্যানসার, অস্থির ভঙ্গুরতার মতো রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে আরও কিছু রোগের প্রকোপ বৃদ্ধির বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে ভূগর্ভস্থ জলের পরিমাণ ও গুণগত মান নিয়ে প্রকাশিত সরকারি রিপোর্টে।
গত বছরের শেষ দিকে প্রকাশিত ‘সেন্ট্রাল গ্রাউন্ড ওয়াটার বোর্ড’-এর পূর্বাঞ্চলীয় শাখা ও রাজ্যের ‘ওয়াটার ইনভেস্টিগেশন ডিরেক্টরেটের’ যৌথ সমীক্ষার রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের ৭৯টি ব্লকে ভূগর্ভস্থ জলে আর্সেনিকের পরিমাণ সর্বাধিক মাত্রার থেকে বেশি। মালদহের কালিয়াচক থেকে ভাগীরথী-হুগলি নদীর দু’পাড়ে বদ্বীপ এলাকায় (মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব বর্ধমান, হাওড়া, হুগলি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা) রাসায়নিকের মাত্রা বেশি পানীয় জলে। ‘‘বীরভূম, পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, দুই দিনাজপুরের ভূগর্ভজলের প্রতি লিটারে ১.৫ মাইক্রোগ্রামের থেকে বেশি ফ্লুয়োরাইড থাকতে পারে এবং তা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর,’’ বলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়োলজিক্যাল সায়েন্সেস বিভাগের হাইড্রোজিয়োলজি বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক প্রজ্ঞাদিত্য মালাকার।
পরিবেশবিদ ও ভূবিজ্ঞানীদের মতে, ভূগর্ভস্থ জল যত নির্বিচারে তোলা হবে, ততই পানীয় জলে এই ধরনের রাসায়নিক মিশতে থাকবে। বিশেষত বোরো ধান চাষে নির্বিচারে ভূগর্ভের জল তোলায় শঙ্কিত অনেক বিজ্ঞানী। সরকারি রিপোর্টে সেই আশঙ্কাকে ‘ক্রিটিক্যাল’ বা সঙ্কটজনক ও ‘সেমি-ক্রিটিক্যাল’ বা আধা-সঙ্কটজনক এই দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সেই তালিকার বেশ উপরের দিকে আছে নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব বর্ধমান। আবহবিদদের বক্তব্য, বঙ্গে সব থেকে বেশি বৃষ্টি হয় জুন-সেপ্টেম্বরের মধ্যে। তাতে ভূগর্ভে জলভান্ডার ভরে ওঠে। কিন্তু যে-ভাবে বর্ষার চরিত্র বদলাচ্ছে, তাতে ভূগর্ভস্থ জলের ভাঁড়ার পূরণও প্রশ্নের মুখে।
যাদবপুরের এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ়-এর অধ্যাপক তথা জল-বিশেষজ্ঞ তড়িৎ রায়চৌধুরী জানান, রাজ্যের ১৪টি জেলা আর্সেনিক-প্রবণ। তার মধ্যে ন’টি— মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি ও বর্ধমানের পরিস্থিতি মারাত্মক। তিনি বলেন, ‘‘এক লিটার জলে আর্সেনিকের মাত্রা ১০ মাইক্রোগ্রামের বেশি হলে, তা পানের অযোগ্য ও শারীরের পক্ষে ক্ষতিকর। ওই ন’টি জেলায় সেই মাত্রা অনেক বেশি। কোথাও কোথাও কয়েক হাজার মাইক্রোগ্রামে তা পৌঁছে গিয়েছে।’’
ওই গবেষক জানাচ্ছেন দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরে এক লিটার জলে আর্সেনিকের মাত্রা ১০-এর বেশি এবং সেটি প্রায় ৫০ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত। তাঁর কথায়, ‘‘আর্সেনিকের প্রভাবে কার্সিনোমা বা ক্যানসারের প্রকোপ বাড়ে। ফ্লুয়োরাইডের প্রভাবে দাঁত ও শরীরের অন্যান্য হাড় ভাঙতে থাকে।’’ আবার প্রজ্ঞাদিত্য জানাচ্ছেন, রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মাটির ২০ থেকে ১০০ মিটার নীচের বিভিন্ন স্তরে আর্সেনিক পাওয়া যেতে পারে। উচ্চ ক্ষমতার পাম্পের মাধ্যমে জল তোলার জন্য আগে হয়তো যেখানে আর্সেনিক মিলত না, এখন সেখানেও ওই বিষ পাওয়া যাচ্ছে। সব মিলিয়ে আর্সেনিক জনস্বাস্থ্যের বড় ক্ষতি ডেকে আনছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy