Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

‘ভাত-ডাল’কে ফুল দিয়ে স্বাগত দিলীপের

গত বুধবার শোভন-বৈশাখী দিল্লি গিয়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে মঙ্গলবার প্রথম পদার্পণ করেন রাজ্য বিজেপির দফতরে।

মুখোমুখি: বিজেপির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার বিজেপি দফতরে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

মুখোমুখি: বিজেপির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার বিজেপি দফতরে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৯ ০২:১৬
Share: Save:

তৃণমূল থেকে শোভন চট্টোপাধ্যায়কে বিজেপিতে বেঁধে আনা হয়নি। তিনি স্বেচ্ছায় এই দলে যোগ দিয়েছেন। রাজ্য বিজেপি দফতরে শোভন ও তাঁর বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সংবর্ধনা’ সভায় এ কথা বলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।

গত বুধবার শোভন-বৈশাখী দিল্লি গিয়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে মঙ্গলবার প্রথম পদার্পণ করেন রাজ্য বিজেপির দফতরে। এ দিন সেখানে তাঁদের জন্য সংবর্ধনা সভারও আয়োজন করা হয়। সেখানেই দিলীপবাবুর পাশে বসে শোভন বলেন, ‘‘সম্রাট আলেকজান্ডার রাজা পুরুকে প্রথমে গ্রেফতার করেন। কিন্তু পরে তাঁকে রাজার সম্মান দেন। আমিও যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছিলাম। দিলীপদা আন্তরিকতা দেখিয়ে বিজেপিতে আসার কথা বলেছিলেন। আমি তাঁকে নত মস্তকে বলছি, তিনি যা কাজ দেবেন, আমরা সে কাজই করব।’’ মঞ্চে বিজেপির রাজ্য সভাপতিকে তিনি আরও বলেন, ‘‘আপনার কাছে বোধ হয় আমার ফোন নম্বর নেই। বৈশাখীর সঙ্গেই বার বার যোগাযোগ হয়েছে।’’

এর পরেই দিলীপবাবুর বক্তব্য, ‘‘শোভনবাবু আলেকজান্ডার আর পুরুর উদাহরণ দিলেন। আমরা ওঁকে বিজেপিতে বেঁধে আনিনি। বিজেপি সকলকে প্রাপ্য সম্মান দেয়। যোগ্যতা আর ক্ষমতা অনুযায়ী সকলে নিজেদের জায়গা তৈরি করে নেন।’’ তিনি বলেন, ‘‘শোভনদা অনেক পুরনো লোক। আপনারা ওঁদের নিয়ে অনেক খোঁড়াখুঁড়ি করেছেন। আরও নিশ্চয় করবেন। নতুন করে কিছু বলার নেই। কেন্দ্রের নেতারা বলেছিলেন। তাই গিয়ে ওঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এক সময় আমিও বেহালায় থাকতাম। উনি স্কুটারে চড়তেন, আমি সাইকেলে।’’

এর আগে অবশ্য সকাল থেকে ‘নাটক’ ছিল জমজমাট। সংবর্ধনার ঘোষণাপত্রে তাঁর নাম না থাকায় ‘বেঁকে’ বসেন বৈশাখী। রাজ্য বিজেপির সহ সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারকে ফোন করে ক্ষোভ উগরে দেন। নালিশ জানাতে ফোন করেন দিল্লিতেও। এক সময় শোভন-বৈশাখী আদৌ আসবেন কি না, তা নিয়েও তৈরি হয় বিভ্রান্তি। কারণ, শোভনও বৈশাখীর ক্ষোভে সায় দিয়ে বিষয়টিকে অনুমোদন করেন। তাঁদের জানানো হয়, ‘ভুলবশত’ এ ঘটনা ঘটেছে। ভ্রম সংশোধন করে নেওয়া হবে। এর পরেই নোটিসে বৈশাখীর নাম দেওয়া হয়।

কিন্তু তাতেও ‘গোঁসা’ কমেনি শোভন-বৈশাখীর। সূত্রের খবর, বৈশাখী ফের বলেন, নোটিসে যে ভাবে ভ্রম সংশোধন হয়েছে, তা-ও অসম্মানজনক। সূত্রের খবর, এর পর রাজ্য বিজেপির মিডিয়ার আহ্বায়ক সপ্তর্ষি চৌধুরী ফোন করে ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তা সত্ত্বেও সংবাদমাধ্যমে বৈশাখী বলে দেন, তিনি বিজেপি দফতরে যাবেন না। শেষ পর্যন্ত বেলার দিকে ফের রাজ্য দলের এক নেতার সঙ্গে কথা হয় শোভন-বৈশাখীর। সেই নেতা জানান, এ দিন তাঁরা না এলে বিজেপির অন্দরেও তা নিয়ে ভুল বার্তা যাবে। এর পরেই আসতে রাজি হন শোভন-বৈশাখী।

তবে, গোড়া থেকেই ‘ক্ষুব্ধ’ অভিব্যক্তি নিয়ে মঞ্চে বসে ছিলেন বৈশাখী। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘সংবর্ধনা যখন শোভনদার, তখন আমার আসার প্রয়োজন বোধ করিনি। কিন্তু আমি গোঁসা ধরে বসে থাকলে শোভনদার সংবর্ধনা ম্লান হয়ে যেত, তাই এসেছি।’’

নির্ধারিত সময় ছিল বেলা দু’টো। তার আগেই রাজ্য দফতরে পৌঁছন দিলীপবাবু। শোভন-বৈশাখীর আসবেন কি না, সে বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘‘শোভনদা-বৈশাখীদি অনেকটা ভাতের সঙ্গে ডালের মতো। একজন এলে আর একজন আসবেন।’’

নির্ধারিত সময়ের প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে বিজেপি দফতরে পৌঁছন শোভন-বৈশাখী। বিলম্ব দেখে দৃশ্যত ‘বিরক্ত’ মুখে রাজ্য দফতরের নীচে নেমে এসে দরজার সামনে একটি বেঞ্চে বসেন দিলীপবাবু।

শোভন-বৈশাখী প্রথমে দফতরের বাইরে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মূর্তিতে মাল্যদান করে চলে আসেন সাংবাদিক বৈঠকে। সেখানেই তাঁদের হাতে পুষ্পস্তবক তুলে দেন দিলীপবাবু। একই সঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমার কিছু বলার নেই। ওঁদের কথা ওঁরাই বলবেন। তবে কংগ্রেস থেকে বরিষ্ঠ নেতা শিবাজী সিংহ রায়ও আজ বিজেপিতে যোগ দিলেন। তিনি আসায় আমাদের লাভ হল।’’

এর পরেই তিনি মাইক ঠেলে দেন শোভনের দিকে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘রাজ্যে এখন যে সন্ত্রাস চলছে, তা সিপিএম আমলেও হয়নি। আমাদের পাখির চোখ বাংলাকে আবার মুক্ত করা।’’

জবাবে শোভন-পত্নী তৃণমূলনেত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যাদবপুরে সিপিএমের আক্রমণ থেকে মমতা যদি শোভনকে না বাঁচাতেন, আজ কোথায় থাকতেন তিনি? শুধু এটুকু মনে রেখে কথা বললে ভাল করতেন। উনি কৃতজ্ঞতা বোধটাও ভুলেছেন।’’

অন্য দিকে, দিলীপবাবুর ‘ডাল-ভাতে’র তুলনা সম্পর্কে বৈশাখীর মন্তব্য, ‘‘কে ডাল, কে ভাত জানি না। আমি ডাল হলে বলব, আমার নিজস্ব জগতে আলাদা পরিচিতি আছে। আর আমি ভাত হলে বলব, শোভনদাকে কাঁধে নেওয়ার মতো জোর আমার নেই।’’

সাংবাদিক বৈঠক শেষ করে দিলীপবাবু দ্রুত বেরিয়ে যান। জানিয়ে যান, বিধায়কদের নিয়ে বৈঠক আছে। অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। পিছন পিছন বেরোন সবান্ধবী শোভনও। দিলীপবাবু শোভনকে বলেন, ‘‘আপনিও তো বিধায়ক। চলুন বৈঠকে।’’ সঙ্গে সঙ্গে বৈশাখীকেও ডেকে নেন শোভন। কিন্তু দিলীপবাবু জানিয়ে দেন, বিধায়ক হিসেবে শোভন বৈঠকে যেতে পারলেও বৈশাখী পারবেন না। অন্য ঘরে বসতে পারেন।

দেখা যায়, দলীয় দফতর ছেড়ে বৈশাখী সটান হাঁটা দিয়েছেন গাড়ির দিকে। শোভন ফেরা পর্যন্ত গাড়িতেই বসে থাকেন তিনি।

অন্য বিষয়গুলি:

Sovan Chatterjee Baishakhi Banerjee BJP TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy