Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪
Howrah Bridge

Howrah Bridge: বাবা-ছেলে আর হাওড়া সেতুর আলোর উত্তরাধিকার

এ গল্প শহরের হাওড়া সেতুর। — তার আলোর পর্বান্তরের। যে আলোর কথা এখন ছড়িয়ে পড়েছে গোটা পৃথিবীতে।

আলোকিত: স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে জাতীয় পতাকার রঙে সেজেছে হাওড়া সেতু। শনিবার।

আলোকিত: স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে জাতীয় পতাকার রঙে সেজেছে হাওড়া সেতু। শনিবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২১ ০৫:৩৪
Share: Save:

এ গল্প এক জন বাবার গল্প। তাঁর অসম্পূর্ণ স্বপ্নের। এ গল্প এক জন ছেলের। বাবার অসম্পূর্ণ স্বপ্ন পূরণের।

আর এ গল্প শহরের হাওড়া সেতুর। — তার আলোর পর্বান্তরের। যে আলোর কথা এখন ছড়িয়ে পড়েছে গোটা পৃথিবীতে।

আজ, রবিবার, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে শনিবার রাত থেকেই হাওড়া সেতু ভারতের জাতীয় পতাকার তেরঙার আলোয় উদ্ভাসিত হয়েছে। গত বছর জানুয়ারিতে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বন্দরের (কলকাতা বন্দর) ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে হাওড়া সেতুতে নতুন আলোকসজ্জা করা হয়েছে। যে আলোকসজ্জা বিভিন্ন উৎসবের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। বন্দরের হেরিটেজ পরামর্শদাতা গৌতম চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, গত বছর হাওড়া সেতুতে চালু হওয়া সেই আলোকসজ্জায় ৬৫০টি এলইডি আলোর পয়েন্ট রয়েছে। নতুন প্রযুক্তি এক কোটি ৬০ লক্ষ রং-মিশ্রণে যা জ্বলে উঠতে সক্ষম। এবং এক সেকেন্ডেরও কম সময়ে রং বদল করতে পারে। সেই সঙ্গে এই আলো পরিবেশবান্ধব, তার রক্ষণাবেক্ষণের খরচও কম। যে আন্তর্জাতিক সংস্থা হাওড়া সেতুতে বর্তমান আলোর পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করেছে, তারা আমেরিকার টেক্সাসের ‘কর্পাস ক্রিস্টি হার্বার ব্রিজ’, সান ফ্রান্সিসকোর ‘অকল্যান্ড বে ব্রিজ’-সহ বিশ্বের একাধিক জায়গায় আলোর প্রকল্প রূপায়ণ করেছে।

অথচ বন্দরের ইতিহাস বলছে, সেতুর আলোর ‘পর্বান্তর’-এর নেপথ্যে এক জন বাবা আর তাঁর ছেলে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছেন। ঘটনাপ্রবাহ বলছে, ২০০৬ সালে প্রথম বারের জন্য চিরাচরিত আলোর পথ ছেড়ে সোডিয়াম ভেপার আলোয় ‘উত্তরণ’ হয়েছিল হাওড়া সেতুর। পাল্টে গিয়েছিল রাতের কলকাতা। গত বছর নতুন আলোকসজ্জার আগে পর্যন্ত সেই আলোই দেখে এসেছিলেন শহরবাসী। আর সেই ‘উত্তরণ’-এর নেপথ্যে ছিলেন ‘আলোর জাদুকর’, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকসম্পাতশিল্পী তাপস সেন। রঙ্গমঞ্চের আলোর ইতিহাস পাল্টে দেওয়ার পাশাপাশি তিনমূর্তি ভবন, সবরমতী আশ্রম, গ্বালিয়র দুর্গ, চুনা দুর্গ, পুরানা কিল্লা, আগরার দেওয়ান-ই-আমে ছিল তাঁর করা ‘সন এ লুমিয়ের’। তা ছাড়া, দিল্লির সিরি ফোর্ট অডিটোরিয়ামে এশিয়াডের উদ্বোধন থেকে প্যারিসের আইফেল টাওয়ার— সবেতেই ছিল তাঁর আলোক-স্পর্শ!

২০০৫-’০৬ সালে চিরাচরিত আলোর বদলে হাওড়া সেতুতে সোডিয়াম ভেপার লাগানোর পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তাপসবাবু বলেছিলেন, ‘‘খোলা আকাশের নীচে এটা এত বড় একটা কাজ। এ রকমটা আমি আগে কখ‌নও করিনি!’’ কিন্তু সেই প্রকল্প শেষ পর্যন্ত দেখে যেতে পারেননি তিনি। তার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়। সেই ঘটনার উল্লেখ করে গৌতমবাবু জানাচ্ছেন, হাওড়া সেতুর আলোর পর্বান্তরের ক্ষেত্রে তাপসবাবুর ভূমিকা অনেকেই জানেন। ‘‘কিন্তু যেটা প্রায় কেউই জানেন না তা হল, ওই আলোর প্রকল্প শেষ হওয়া পর্যন্ত তাতে যুক্ত ছিলে‌ন তাপসবাবুরই ছেলে জয় সেন! তাঁর ভূমিকা কিন্তু ভোলা যাবে না’’— বলছেন গৌতমবাবু।

বাংলা নাট্যমহলও জানাচ্ছে, তাপসবাবুর উত্তরাধিকার ‘যোগ্যতা’র সঙ্গে বহন করেছেন ছেলে জয়। নিজের ‘হ্যামলেট’ নাটকে আলোর জন্য জয়কেই দায়িত্ব দিয়েছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব বিভাস চক্রবর্তী। তিনি বলছেন, ‘‘জয়কে ছোটবেলা থেকে দেখেছি। হ্যামলেটের আলো জয় যে ভাবে করেছিলেন, তা অন্য কেউ করতে পারতেন বলে মনে হয় না। চরিত্র, পরিস্থিতি সাপেক্ষে যেখানে যে ভাবে আলোর দরকার, সেটা জয় ফুটিয়ে তুলেছিলেন।’’

একটু থেমে বিভাসবাবু যোগ করলেন, ‘‘নাটকে একটা দৃশ্য থেকে আর একটা দৃশ্যে যাওয়ার ক্ষেত্রে যে ধারাবাহিকতা দরকার, সেটা জয় সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন মঞ্চে। এটাই দুঃখের যে, জয় অনেক তাড়াতাড়ি চলে গেলেন।’’

তাপসবাবু মারা গিয়েছিলেন ২০০৬ সালে। ছেলে জয় মারা যান তার আট বছর পরে, ২০১৪ সালে।

বাবা নেই, ছেলে নেই।

কিন্তু যা রয়ে গিয়েছে, তা হল আলোর উত্তরাধিকার। এবং সেই উত্তরাধিকার বহন করা ৭৮ বছরের হাওড়া সেতু!

অন্য বিষয়গুলি:

Howrah Bridge 75th Independence Day History
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy