দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন স্কুলের প্রাক্তনী এবং সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ গড়িয়াহাটে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
আর জি কর কাণ্ডে দ্রুত ন্যায়-বিচারের মূল দাবিকে সামনে রেখে দেবীপক্ষের সূচনার আগেই ফের নাগরিক প্রতিবাদে মুখর হল কলকাতা। চিকিৎসক ও নাগরিক মঞ্চ, মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, মহমেডানের সমর্থক-সহ প্রায় ৬০টি সংগঠন মঙ্গলবার যৌথ ভাবে ডাক দিয়েছিল মিছিলের। কলেজ স্কোয়ার থেকে রবীন্দ্র সদন পর্যন্ত দীর্ঘ পথের নাগরিক মিছিলে চিকিৎসক, শিক্ষক, অভিনয় ও সংস্কৃতি জগৎ-সহ নাগরিক সমাজের নানা স্তরের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি পতাকা ছাড়া রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের চোখে পড়ার মতো ভিড় হয়েছিল। সেখান থেকে নির্যাতিতার বাবা বিচার ছিনিয়ে আনার বার্তা দিয়েছেন।
মিছিল শেষে অ্যাকাডেমির সামনে সভা থেকে নির্যাতিতার বাবা বলেছেন, “(মেয়েটা) অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করেছে। তবু এত দিন হল, আমরা বিচারের কোনও অগ্রগতি দেখছি না। তথ্যপ্রমাণ লোপাটে কয়েক জন গ্রেফতার হয়েছেন। কাউকে আড়াল করতেই প্রমাণ লোপাট করেছেন।” সিবিআই ও সুপ্রিম কোর্টের উপরে ‘পূর্ণ আস্থা’ রাখার কথা বলে তাঁর আরও বক্তব্য, “আস্তে আস্তে চেষ্টা করছি, যদি বিচারটা আমরা ছিনিয়ে আনতে পারি।” সঙ্গে আর জি করের তৎকালীন স্বাস্থ্য-কর্তাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে সেটিকে ‘রাক্ষসের জায়গা’ বলেও হতাশা প্রকাশ করেন।
নাগরিক আন্দোলন যে থামবে না, এ দিন সেই বার্তাই বার বার শোনা গিয়েছে আন্দোলনকারীদের মুখে। চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী বলেছেন, “প্রশাসনের উচিত, জোড়াতাপ্পি নয়, সদর্থক পদক্ষেপ করে ক্ষোভ নিরসন করা। তা না হলে, আগামী দিনগুলি সরকার ও শাসকের জন্য মধুর হবে না। জনকণ্ঠ বলছে, দুর্গাপুজোতেও স্লোগান উঠবে।” স্বাস্থ্যক্ষেত্রের নিরাপত্তা নিয়েও এ দিন ফের সরব হয়েছেন চিকিৎসকেরা। ডাক্তারদের সংগঠনের তরফে মানস গুমটা বলেছেন, “আর জি করের ঘটনার পরেও আমরা দেখলাম যে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ, সাগর দত্ত ও রামপুরহাটে হামলা হল। এক দিকে স্বাস্থ্যে দুর্নীতি, অন্য দিকে নিরাপত্তা দিতে রাজ্য ব্যর্থ। মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে, সেটাই রাজপথে আছড়ে পড়ছে।” তবে দাবিপূরণ করতে গিয়ে জুনিয়র ডাক্তারেরা যে পূর্ণ কর্মবিরতি করছেন, সেই প্রেক্ষিতে তাঁদের ভাবনাচিন্তা করার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী থেকে আর জি করের প্রাক্তনী সংগঠনের তরফে তাপস ফ্রান্সিস বিশ্বাসেরা। জুনিয়র চিকিৎসকদের ডাকে বুধবার মহালয়ার দিনেই কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবাদে যেমন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার, আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকী, তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদ জহর সরকারেরা শামিল হন, তেমনই সেটির পিছনে ছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র ও দলের কলকাতা জেলা নেতৃত্ব, আরএসপি-র সাধারণ সম্পাদক মনোজ ভট্টাচার্য প্রমুখ। এই সূত্রেই তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের কটাক্ষ, “ডাক্তার, নাগরিক সমাজের নামে মিছিলে সিপিএম, কংগ্রেস, আইএসএফ। ন্যায়বিচার নয়, তার আড়ালে এদের উদ্দেশ্য পুজো-অর্থনীতি নষ্ট করা। আবেগ বিভ্রান্ত করে কিছু অতৃপ্ত আত্মার অরাজকতামূলক প্রচার!” কংগ্রেস ও বাম নেতাদের পাল্টা প্রশ্ন, নাগরিক প্রতিবাদে রাজনৈতিক কর্মীরা কি থাকতে পারেন না! সিপিএমের যুব নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় এ দিনই চন্দ্রকোনা রোডে ডিওয়াইএফআইয়ের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্মেলনের সূচনা করতে গিয়ে বলেছেন, “আর জি করের ঘটনা একটি প্রাতিষ্ঠানিক খুন। প্রতিষ্ঠান খুনিদের বাঁচাতে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাগুলোকে ব্যবহার করছে। তাই আন্দোলন ছাড়া উপায় কী? লড়াই আরও তীব্র হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy