Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪
Jadavpur University Student Death

পুজোমণ্ডপে ছেলে আর যাবে না, আক্ষেপ বাবার

সব কথা শেষ হয় না। শেষ দিকে আটকে যায় কণ্ঠস্বর। চেয়ারের হাতলটা শক্ত করে চেপে ধরেন বাবা। তার পর দীর্ঘশ্বাস।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস। —ফাইল চিত্র।

সুদেব দাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২৩ ০৮:৪৭
Share: Save:

গত বছর সে ছিল। এ বারে নেই।

ঝিরঝিরে বৃষ্টি, কমতেই জেগে উঠছে নীল আকাশ আর ছেঁড়া মেঘ। ভাদ্রের শুরু থেকেই শারদীয় আবহাওয়া যেন। সে দিকে তাকিয়ে বাবার মনে পড়ছে, গত বছর পুজোয় অষ্টমীর দিন বাড়ির সবাই মিলে গিয়েছিলেন বেলুড় মঠে। বড় ছেলেও সঙ্গে ছিল। এ বারে সে নেই!

বাবার আকাশে তাই শুধুই মন খারাপ।

এখনও শ্বশুরবাড়িতেই আছেন তিনি। ছেলেদের মামাবাড়িতে। শনিবার সকালে সেখানেই বারান্দায় একটি চেয়ারে বসেছিলেন। রাজনৈতিক দল বা কোনও সংগঠনের পক্ষ থেকে এই দিন কেউ আর ওই বাড়িতে ভিড় করেননি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সে রাতে কী হয়েছিল, তার প্রতিকারে কী হওয়া প্রয়োজন— এই সব প্রসঙ্গ নিয়ে কেউ আসেনি তাঁদের কাছে। তিনি আনমনেই বললেন, ‘‘বড় ছেলেকে নিয়ে গত বছর পুজোয় অষ্টমীর দিন কেটেছিল বেলুড় মঠে।’’

বাবার স্মৃতিচারণায় ভেসে ওঠে তাঁর বড় সন্তান, যাদবপুরের প্রথম বর্ষের মৃত ছেলেটিকে নিয়ে টুকরো টুকরো স্মৃতি। তিনি বলেন, ‘‘গত বছর সপ্তমীর সকালে স্ত্রী দুই ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়িতে চলে আসে। রাতেই ঠিক হয়েছিল, অষ্টমীর খুব সকালে ট্রেনে চেপে বেলুড় মঠে যাওয়া হবে। সেই মতো বড় ছেলে ওর বড় মামার সঙ্গে ট্রেনে ওঠে। আমিও যোগাযোগ করে ওই ট্রেনে ওদের সঙ্গে বেলুড় গিয়েছিলাম। সেখানে নদীতে স্নান, অষ্টমীর পুজো, সন্ধ্যায় আরতি দেখে রাতে বাড়ি ফিরি।’’

সব কথা শেষ হয় না। শেষ দিকে আটকে যায় কণ্ঠস্বর। চেয়ারের হাতলটা শক্ত করে চেপে ধরেন বাবা। তার পর দীর্ঘশ্বাস। ঘরের ভিতরে, বিশ্রাম নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন মা। দুই চোখের পাতা এক করেননি এর মধ্যে। যখন যাকে সামনে পেয়েছেন, হাত দুটো জড়িয়ে ধরে একই প্রশ্ন করে গিয়েছেন— ‘‘যারা ওকে খুন করল, শাস্তি পাবে তো?’’ কিংবা— ‘‘বড় ছেলে নেই। কী নিয়ে ফিরব বাড়িতে!’’

বিকেল হতেই তাঁদের বাড়ি এলাকা থেকে প্রতিবেশী এবং গৃহশিক্ষক এলেন। তাঁরাই বলছিলেন, বাড়ির পাশে বন্ধ হয়ে থাকা দুর্গাপুজো নতুন করে শুরু করেছিলেন মৃত পড়ুয়ার বাবা-ই। পড়ুয়ার অপমৃত্যুর ঘটনার পরে সেই পুজোর আয়োজনেও ভাটা পড়েছে। এক উদ্যোক্তা বলেন, ‘‘হয়তো পুজো বন্ধ হবে না। কিন্তু কী ভাবে এই শোক সামলে, পাড়ার পুজোয় ঢাকের কাঠি বেজে উঠবে, সে অঙ্ক আমরা মেলাতে পারছি না।’’

পশ্চিম আকাশে সূর্য ডুবছে। প্রতিবেশীরা একে একে রওনা দিলেন বাড়ির পথে। উঠোনে তুলসীমঞ্চের দিকে তাকিয়ে বাবা বিড়বিড় করেন, ‘‘কিছু দিন পরেই তো মা আসবে। বড় ছেলেটাকে আর নিয়ে যাওয়া হবে না পুজো মণ্ডপে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Jadavpur University Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy