স্বজনের চিন্তায়, বর্ধমান মেডিক্যালে লুৎফুন্নেসা বেগম। নিজস্ব চিত্র
বছর চারেক আগে থেকেই গোলমাল শুরু হয়েছিল। বাবার সঙ্গে ঝামেলা এড়াতে কাজ নিয়ে কলকাতায় চলে গিয়েছিলেন ছোট ছেলে। তবু নিজের সম্পত্তির ভাগ দিতে রাজি হননি বাবা। অভিযোগ, মঙ্গলবার রাতে গলসির খানো গ্রামের ডাঙাপাড়ায় ছোট ছেলে শেখ ইকবাল ও তাঁর পরিবারকে ঘর বন্ধ করে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করেন বৃদ্ধ শেখ ইউসুফ। পরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে মারা যান ইকবাল। তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়েও গুরুতর জখম। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, টাকা পয়সা আঁকড়ে রাখতে গিয়ে ছেলেকেও যে মেরে ফেলতে পারে, ভাবা যায় না।
বুধবার বর্ধমান হাসপাতালে ঠাঁই বসেছিলেন শেখ ইকবালের স্ত্রী তুহিনা বেগমের মা লুৎফুন্নেসা বেগম। তাঁর অভিযোগ, ‘‘মেয়ের বিয়ে হয়েছে ১৪ বছর আগে। কিন্তু শ্বশুরবাড়িতে স্বামী ও শাশুড়ি ছাড়া সকলেই নানা কারণে নির্যাতন চালাত। মাসখানেকের মধ্যে শ্বশুরবাড়ি থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার কথাও ছিল। কিন্তু তার আগেই সব শেষ হয়ে গেল।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বরাবরই একরোখা, টাকা পয়সা নিয়ে অত্যন্ত হিসেবি ছিলেন ধৃত শেখ ইউসুফ। বছর সাতেক আগে রেলের চাকরি থেকে অবসর নেন তিনি। তার পর থেকেই চাষের জমি, তিনটি বাড়ি নিয়ে ছেলেদের সঙ্গে গোলমাল। তবে বড় ছেলে শেখ একরাম বাবার তরফেই ছিলেন। এ দিন ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তাঁকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রতিবেশী শেখ আক্কাশ, তোজামেলরা হোসেনরা জানান, ইউসুফের দাবি ছিল, ছোট ছেলে বিবাহসূত্রে যে ‘ফারজি’ (মুসলিম মতে উত্তরাধিকার সূত্রে মেয়েরা যে সম্পত্তি পায়) সম্পত্তি পাবে, তার বাইরে তিনি কিছু দেবেন না। কিন্তু তা মানেনি ইকবাল। সেখান থেকেই অশান্তি। মাস দুয়েক আগেও এ নিয়ে বাবা-ছেলের মারামারি হয়েছিল। থানায় অভিযোগও হয়। পরে সালিশি ডেকে নির্দিষ্ট টাকা ও জমির ভাগ দিতে বলা হয় ইকবালকে।
প্রতিবেশী মহম্মদ সানোয়ার আলি বলেন, ‘‘টাকা-জমির ভাগ বুঝে নিতেই কলকাতা থেকে এসেছিল ছেলেটা। ঘুমের মধ্যে বাবা ঘরে গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেবে ভাবা যায় না।’’ এ দিন মৃতের মা মাবিয়া বিবির চিৎকারে ছুটে যান তাঁরা। দরজা ভেঙে উদ্ধার করেন ওই চার জনকে। পরে পুলিশ ওই বাড়ির একাংশ ‘সিল’ করে দেয়।
পাশের মাটির বাড়ির দাওয়ায় বসে মাবিয়া বিবি আক্ষেপ, ‘‘ছেলেকে না হয় শত্রু মনে করত, কিন্তু ফুটফুটে নাতনি দুটোকে মারল কেন!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy