ফাইল চিত্র।
ধান কেনা নিয়ে ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে রাজ্যের কৃষিজীবীদের একটা বড় অংশের। কোথাও ধান কেনার শিবির ‘অপর্যাপ্ত’, কোথাও উৎপাদিত ধানের তুলনায় কম ধান কেনা হচ্ছে, ধান কেনার কেন্দ্রের দূরত্ব বেশি, কোনও কেন্দ্রে ‘বাটা’ বা ‘খাদ’ (নানা কারণে যে পরিমাণ ধান বাদ যায়) বেশি ধরা হচ্ছে—অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ। সোমবার পূর্ব বর্ধমানে গিয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়েরও টিপ্পনী, ‘‘সহায়ক মূল্যে ধান কেনা নিয়ে কী হচ্ছে, সবাই দেখছেন।’’ রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের অবশ্য দাবি, ‘‘রাজ্যপাল ঠিক বলছেন না। ধান কেনা নিয়ে কোনও সমস্যা নেই।’’
খাদ্য দফতর জানিয়েছে, চলতি বছরে ৫২ লক্ষ কুইন্টাল ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ৪৬ লক্ষ কুইন্টাল রাজ্য, ছ’লক্ষ কুইন্টাল কিনবে ফুড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া (এফসিআই)। প্রতি কুইন্টাল ১,৮৬৮ টাকা দরে ধান কেনা হচ্ছে।
উত্তর দিনাজপুরের চাষিদের অভিযোগ, সরকার সহায়ক মূল্যে ১ লক্ষ ৭০ হাজার টন ধান কিনবে। অথচ, তা জেলায় মোট উৎপাদিত ধানের ১৫.২ শতাংশ। ফলে, বাকি ধান চাষিদের খোলা বাজারে বেচতে হবে, যেখানে কুইন্টাল প্রতি দর ১,০০০-১,১০০ টাকা। পূর্ব বর্ধমানে ধান উৎপাদন হয় ২২ লক্ষ টনের কাছাকাছি। বিক্রির সুযোগ রয়েছে পাঁচ লক্ষ টন। ফলে, উৎপাদিত ধানের বড় অংশ খোলাবাজারে ‘অভাবি বিক্রি’ করতে হবে বলে দাবি চাষিদের।
ধান বিক্রি করতে দূরে যেতে হওয়ার অভিযোগ, ক্ষোভের আর এক কারণ। মুর্শিদাবাদে স্থানীয় ভাবে শিবির কম হওয়ায় সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি করতে চাষিদের ৩০-৫০ কিলোমিটার পাড়ি দিতে হচ্ছে বলে দাবি। কোভিড-কালে ট্রাক বা ট্রাক্টর ভাড়া করে সেখানে পৌঁছতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন চাষিরা। সরাসরি সরকারি শিবিরে গিয়ে ধান বিক্রি করলে কুইন্টাল পিছু যে অতিরিক্ত ২০ টাকা উৎসাহ ভাতা দেওয়া হয়, তাতে পড়তায় পোষাচ্ছে না বলে চাষিদের দাবি।
পূর্ব বর্ধমান, হুগলি, মালদহ, বীরভূম, পূর্ব মেদিনীপুরে ধান ক্রয় কেন্দ্রে প্রতি কুইন্টালে তিন থেকে ১০ কেজি ‘বাটা’ বা ‘খাদ’’ বাদ দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে বলে ক্ষোভ চাষিদের। পূর্ব বর্ধমানের গলসিতে তা নিয়ে দু’বার বিক্ষোভও হয়েছে। কোলাঘাটের কৃষক গোবিন্দ
পড়িয়া বলেন, ‘‘আর্দ্রতা মাপার যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা না করে খাদ বাবদ ৩-৫ শতাংশ ওজন বাদ দেওয়া হয় সরকারি ধান ক্রয় কেন্দ্রে। আমরা চাই, সঠিক মূল্যায়ন করে খাদ বাদ দেওয়া হোক।’’
ধান কেনা নিয়ে রয়েছে ‘স্বজনপোষণের’ অভিযোগ উঠেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা-১ এবং পিংলায়। দক্ষিণ দিনাজপুরে সরকারি শিবিরে চাষিদের থেকে অল্প পরিমাণ ধান কেনা হচ্ছে এবং সেই সঙ্গে ফড়েদের দাপটের অভিযোগ রয়েছে।
খাদ্যমন্ত্রীর জেলা উত্তর ২৪ পরগনায় গত ২ নভেম্বর থেকে সহায়ক মূল্যে ধান কেনা শুরু হয়েছে। চাষিদের দাবি, শিবিরের সংখ্যা বাড়ানো হোক। কারণ, শিবিরে গেলেই ধান নেওয়া হচ্ছে না। চাষিদের নাম লিখে রাখা হচ্ছে। পরে ফোন করে তাঁদের ডাকা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হলেও, ডাক আসছে না বলে অভিযোগ। বীরভূমে ধান্য ক্রয় কেন্দ্রে চাষিদের নাম লিখে ‘স্লিপ’ দেওয়া হচ্ছে। তাতে লেখা থাকছে কবে তাঁরা ধান বেচতে পারবেন। অভিযোগ, অনেকের ক্ষেত্রে অনেক দিন বাদের তারিখ দেওয়া হচ্ছে। ফলে, চাষিদের প্রশ্ন, তত দিন তাঁরা ধান মজুত রাখবেন কী ভাবে!
রাজ্যপালের কটাক্ষ, ‘‘কিসের স্লিপ দেওয়া হচ্ছে, কেন দেওয়া হচ্ছে—কেউ জানে না!’’ খাদ্যমন্ত্রীর জবাব, ‘‘স্লিপ না দিলে চাষিদের নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy