Advertisement
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
College Student dead

ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বিকৃত? পড়ুয়ার রহস্যমৃত্যুতে প্রশ্নের মুখে মন্ত্রী জাকিরের কলেজ, পাল্টা দাবি, ‘ষড়যন্ত্র হচ্ছে’

মৃত পড়ুয়ার বাবার দাবি, শেষ বার যখন ছেলেকে দেখেছিলেন, তখন শরীরের একাধিক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। কিন্তু ময়নাতদন্তের রিপোর্টে তার কোনও উল্লেখ ছিল না!

—ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
জঙ্গিপুর শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২৪ ১৭:১০
Share: Save:

আত্মহত্যা নয়, রাজ্যের মন্ত্রী জাকির হোসেনের কলেজের এক পড়ুয়াকে খুন করা হয়েছে বলে শুরু থেকেই দাবি করে আসছে ওই পড়ুয়ার পরিবার। এ বার মৃত পড়ুয়ার বাবা অভিযোগ করলেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্টও বিকৃত করা হয়েছে। তাঁর দাবি, শেষ বার যখন ছেলেকে দেখেছিলেন, তখন শরীরের একাধিক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। কিন্তু ময়নাতদন্তের রিপোর্টে তার কোনও উল্লেখ ছিল না! মন্ত্রীই প্রভাব খাটিয়ে ওই কাজ করেছেন বলে অভিযোগ করে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবিও জানিয়েছেন মৃত পড়ুয়ার বাবা।

আরজি কর-কাণ্ডের আবহে মুর্শিদাবাদের এই ঘটনা অন্য মাত্রা পেয়ে গিয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। আরজি করের ঘটনাকে প্রথমে আত্মহত্যা বলে দাবি করেছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে ধর্ষণ এবং খুনের মামলা রুজু হয়। আরজি কর-কাণ্ডেও মৃতার পরিবারের অভিযোগ ছিল, তাঁদের দীর্ঘ ক্ষণ বসিয়ে রেখে দেহটি দেখতে দেওয়া হয়েছিল।

মন্ত্রী জাকির অবশ্য ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘যে দিন পড়ুয়ার দেহ উদ্ধার হয়, সেই দিনই আমি ওর বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলি। তখন সব ঠিকঠাক ছিল। তখন ওর বাবা-মা মেনে নিয়েছিলেন, ছেলে আত্মহত্যা করেছে। হঠাৎ দু’দিন পর থেকে ওঁদের বক্তব্য বদলে গেল! আমার ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করতে ষড়যন্ত্র করছেন ওঁরা। এতে বিরোধীদের ভূমিকা থাকলেও থাকতে পারে।’’

গত সপ্তাহে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরে জাকিরের ফার্মাসি কলেজ থেকে ছাত্র তৌহিদ করিমের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। তৌহিদ মালদহের ইংরেজবাজারের যদুপুরের বাসিন্দা। তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। মৃত পড়ুয়ার পরিবার পাল্টা দাবি করে, ছেলেকে খুন করা হয়েছে! তাদের প্রশ্ন, দীর্ঘ ক্ষণ ধরে কমনরুমে পড়ুয়ার দেহ ঝুলন্ত অবস্থায় থাকলেও কেন কেউ তা দেখতে পেলেন না? পরিবারের দাবি, তৌহিদের সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ যোগাযোগ করতে না পেরে তারা কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তার পরেই তৌহিদের দেহ উদ্ধার হয়। তৌহিদ কখন হস্টেল থেকে বেরিয়েছেন, কখন ঢুকেছেন, রেজিস্টার খাতাতেও সেই সংক্রান্ত কোনও তথ্য নেই। সেই ৪২ মিনিটের সিসিটিভি ফুটেজও পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে তৌহিদের পরিবার।

তৌহিদের বাবা রেজাউল করিম বলেন, ‘‘আমরা যাওয়ার অনেক ক্ষণ পর ছেলের লাশ দেখতে দেওয়া হয়েছিল। দেহ ঘটনাস্থল থেকে তখন নিয়ে আসা হয়েছে। মৃতদেহে পচন ধরেছিল বলেও আমাদের মনে হয়েছে। তৌহিদের শরীরের একাধিক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু ময়নাতদন্তের রিপোর্টে সে সবের কোনও উল্লেখ ছিল না।’’ তৌহিদের কাকা বদরুজ্জামানের অভিযোগ, ‘‘গলায় ফাঁস লাগার কোনও দাগ ছিল না। মাথায় পিছনে, পা এবং পেটে একাধিক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করলে গলায় কেন দাগ নেই?’’ রেজাউল বলেন, ‘‘কলেজের মালিক জাকির হোসেন প্রভাব খাটিয়ে এই ময়নাতদন্ত রিপোর্ট বিকৃত করেছেন। আমরা অবিলম্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাই। ছেলের মৃত্যুর সঠিক তদন্ত হোক।’’

পুলিশের বিরুদ্ধেও একাধিক অভিযোগ তুলেছে তৌহিদের পরিবার। তাদের অভিযোগ, পুলিশে অভিযোগ জানাতে গেলে প্রথমে তা নেওয়া হয়নি। রেজাউল বলেন, ‘‘ময়নাতদন্ত রিপোর্ট চাইতে গেলে এক পুলিশ আধিকারিক দুর্ব্যবহার করেছিলেন। কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানাতে গেলে সংবাদমাধ্যমে মুখ না খোলার হুমকি দেওয়া হয়। জাকির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে উনিও মুখ বন্ধ রাখতে বলেছিলেন।’’

প্রত্যাশিত ভাবেই পুলিশ মৃতের পরিবারের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার সুপার আনন্দ রায় বলেন, ‘‘যে দিন ওই ছাত্রের মৃত্যু হয়, সেই দিনই তার বাবা আরও দু’জনকে রঘুনাথগঞ্জ থানায় গিয়েছিলেন। সেই সময় তাঁকে বার বার বলা হলেও তিনি কোনও অভিযোগ করেননি। সব কিছু ভিডিয়োগ্রাফি করা আছে। পরে ওঁরা অভিযোগ করতে চাইলে এসডিপিও-কে থানায় পাঠানো হয়েছিল।’’ পরিবারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কলেজের অধ্যক্ষ তুহিন সরকার বলেন, ‘‘১৫ অগস্টের প্রস্তুতি নিয়ে সকলেই ব্যস্ত ছিল। সেই সুযোগেই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে তৌহিদ। তবে দীর্ঘ ক্ষণ তার খোঁজ না করাটা আমাদের ভুল ছিল। এর পিছনে অন্য কোনও কারণ নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jangipur Jakir Hossain
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE