প্রতীকী ছবি।
নাম নর্মদা (পরিবর্তিত)। বয়স প্রায় ৭৫। বাড়ি ঝাড়খণ্ডের পশ্চিম সিংভূম জেলার উড়ানচৌকা গ্রামে। নাম-ঠিকানা জানা গিয়েছে হ্যাম রেডিয়োর সৌজন্যে। কিন্তু বৃদ্ধার মনের ঠিকানার হদিস নেই। তিন-চার বছর ধরে নামখানা হাসপাতাল সংলগ্ন একটি বাড়িতে আছেন মানসিক ভাবে অসুস্থ নর্মদা। হাসপাতাল থেকেই জুটে যায় খাবার। যোগাযোগ করা সত্ত্বেও তাঁর বাড়ির লোকজন তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে চাইছেন না বলে হ্যাম রেডিয়োর ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লাবের সেক্রেটারি অম্বরীশ নাগ বিশ্বাসের অভিযোগ।
নাম-ঠিকানার হদিস সহজে মেলেনি। স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল বহু দিন ধরে। কে এই বৃদ্ধা? কোথা থেকে এলেন? কী ভাবে তিনি নামখানায় এসে পৌঁছলেন? শেষ পর্যন্ত হ্যাম রেডিয়ো তাঁর নাম-গ্রামের খোঁজ পেলেও পরিবারের অনিচ্ছায় তাঁকে নিজের সাকিনে ফিরিয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ১৫ বছর বয়সে বিয়ের পর থেকেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন। ৬০ বছর পরে ওই মহিলাকে স্বগৃহে ফেরাতে সাহায্য চেয়ে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে টুইট করেছে হ্যাম রেডিয়োর ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাব। তাঁকে ফেরানোর আবেদন নিয়ে জাতীয় মহিলা কমিশনেরও দ্বারস্থ তারা।
নামখানা হাসপাতালে ভিজিট করতে গিয়ে মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত ওই মহিলার কথা জানতে পারেন এলাকার বিডিও শান্তনু সিংহ ঠাকুর। তিনি বলেন, ‘‘বৃদ্ধার কথা ঠিকঠাক বোঝা যায় না। হ্যাম রেডিয়ো অনেক হারিয়ে যাওয়া মানুষকে আপনজনের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে। চিনতাম অম্বরীশবাবুকে। তাই তাঁকেই এই মহিলার কথা জানিয়েছিলাম।’’
সঙ্গে সঙ্গেই কাজে নেমে পড়ে ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাব। অম্বরীশবাবু জানান, প্রথমে ওই বৃদ্ধার কথার টান রেকর্ড করা হয়। কারণ এক-এক জায়গার মানুষের কথার টান এক-এক রকম। তারই সূত্র ধরে বৃদ্ধার বাড়ির খোঁজ মেলে। অম্বরীশবাবু বলেন, ‘‘ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের সদস্যেরা ভারতের অনান্য রাজ্যের হ্যাম রেডিয়ো অপারেটরদের সঙ্গে ওই মহিলার তথ্য বিনিময় করে তাঁর বাড়ি খুঁজে বার করেন।’’
তার পরে বৃদ্ধার ছবি নিয়ে হ্যাম রেডিয়োর সদস্যেরা উড়ানচৌকা গ্রামে যান। মহিলার ছবি দেখে গ্রামবাসীরা তাঁকে নর্মদা বলে চিনতে পারেন। অম্বরীশবাবুর দাবি, ছবি দেখে প্রথমে নর্মদাকে চিনতে পারেন তাঁর বাড়ির লোকজনও। এত বছর পরেও তিনি বেঁচে আছেন এবং পশ্চিমবঙ্গে আছেন শুনে অবাক হয়ে যান তাঁরা। কিন্তু পরিবারের লোকজন পরে আর নর্মদাকে চিনতে চাননি। তাঁকে বাড়িতে ফেরাতে অস্বীকার করেন।
কেন? অম্বরীশবাবু জানান, ১৫ বছর বয়সে নর্মদার বিয়ে হয়। কিন্তু পাত্র পক্ষের দাবিমতো পণ দিতে পারেননি তাঁর বাড়ির লোকজন। তাই নববধূকে ঘরে তোলেনি শ্বশুরবাড়ি। বাপের বাড়িতে ফিরে এলে নর্মদার ভাইয়েরাও জানিয়ে দেন, পণ দেওয়ার সাধ্য তাঁদের নেই। তাই অত্যাচার সহ্য করেই তাঁকে শ্বশুরবাড়িতে পড়ে থাকতে হবে। তার পরেই নর্মদা নিখোঁজ হয়ে যান। অম্বরীশবাবুর কথায়, ‘‘প্রথমে বাড়ির লোকজন নর্মদার খোঁজ করেছিলেন। পরে বুঝতে পারেন, আইনি তদন্ত হলে তাঁরা ফেঁসে যাবেন। তাই বিষয়টি চেপে যান।’’
বাড়ির লোক নর্মদাকে ফেরাতে অস্বীকার করায় গ্রাম পঞ্চায়েতের দ্বারস্থ হন হ্যাম রেডিয়োর সদস্যেরা। অম্বরীশবাবু জানান, পঞ্চায়েত সদস্য রানি বাদিয়া-সহ স্থানীয় প্রশাসনের চাপে অনিচ্ছা সত্ত্বেও নর্মদাকে ফেরাতে রাজি হন তাঁর বাড়ির লোকজন। ঠিক হয়, রানির সঙ্গে নর্মদার আত্মীয়েরা আসবেন তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। যাতায়াতের খরচ দেবে ঝাড়খণ্ডের স্থানীয় প্রশাসন। অম্বরীশবাবুর অভিযোগ, ‘‘কিন্তু তার পরে নর্মদার বাড়ির মহিলারা এই বলে টালবাহানা শুরু করেন যে, রানির সঙ্গে যাওয়ার মতো কোনও পুরুষ সদস্য এখন বাড়িতে নেই। রানিদের আসার কথা থাকলেও কেউ আসেননি।’’ রানি জানান, দুর্ঘটনায় তাঁর বোনের একটি পা বাদ গিয়েছে। তাঁর চিকিৎসার জন্য ব্যস্ত থাকায় যেতে পারেননি। রানি বলেন, ‘‘আমি নর্মদাকে ফিরিয়েই আনতে চাই। কিন্তু বাড়ির লোকজন তাঁকে ফেরাতে চাইছেন না। তবু নর্মদাকে ফিরিয়ে আনতে যাব আমি। জনপ্রতিনিধি হিসেবে ওই মহিলাকে সাহায্য করা আমার কর্তব্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy