Advertisement
২০ ডিসেম্বর ২০২৪
Vande Bharat Express

বন্দে ‘নিজস্বী’ ভারত, শুরুর দিনে যেন বনগাঁ লোকালই, ভিড় ঠেলে ওঠাতেই পারল না গতি

অহঙ্কারের ট্রেন ‘বন্দে ভারত এক্সপ্রেস’। কিন্তু যাত্রা শুরুর দিনে সেই অহঙ্কার দেখা গেল না। আয়োজন কম ছিল না কিন্তু সুষ্ঠু ব্যবস্থার অভাবে ভোগান্তির ছবি একটার পর একটা।

ট্রেনের ভিতরেও নিজস্বীর ব্যস্ততা।

ট্রেনের ভিতরেও নিজস্বীর ব্যস্ততা। —নিজস্ব চিত্র।

পিনাকপাণি ঘোষ
শক্তিগড় শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২২ ১৭:১৭
Share: Save:

নিয়মিত ট্রেনটি ভোর ভোর ছাড়ার কথা থাকলেও উদ্বোধনের দিন, শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় ছাড়ার কথা ছিল ‘বন্দে ভারত এক্সপ্রেস’। পরে তা পিছিয়ে হয়ে যায় সাড়ে ১১টা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছাড়ল তারও আরও ১০ মিনিট পর। কিন্তু রবাহূতদের ভিড় ঠেলে সেমি হাইস্পিড ট্রেন ওঠাতেই পারল না তার গতি। মাত্র দু’মিনিট মেয়াদের স্টপেজেও দাঁড়াতে হল ১২ মিনিট!

উদ্বোধনে আসার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। কিন্তু অকস্মাৎ তাঁর মাতৃবিয়োগের জন্য বাতিল হয় সফর। ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি অস্বস্তিও তৈরি করে উদ্বোধনে। কিন্তু ট্রেনের ভিতরে তার কোনও ছাপ পড়েনি। কারণ, অব্যবস্থার আরও এত নিদর্শন ট্রেনের ভিতরে, যে সেখানে রাজনৈতিক বিতর্ক ঢোকার জায়গাই পায়নি! প্রধানমন্ত্রী আসবেন বলে অনেক বেশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল। প্রধানমন্ত্রী আসেননি। কিন্তু সেই সব ব্যবস্থায় কোনও পরিবর্তন হয়নি। ফলে ট্রেনের আরোহীদের হেনস্থার অন্ত রইল না!

নিরাপত্তার জন্য যাত্রীদের পৌঁছতে বলা হয়েছিল সকাল ৮টার মধ্যে। এর পর প্ল্যাটফর্মে ঢোকার লাইন। বিমানবন্দরের মতো চেকিং। সে সব টপকে ট্রেনে ওঠার আগে শেষ গেটে গিয়েও আটকে যাওয়া! কারও টিকিটে সিট নম্বর লেখা নেই তো কারও প্ল্যাটফর্মে থাকার অনুমতিপত্রই ট্রেনে ওঠার বলে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সব বাধা টপকে যাঁরা ১০টার মধ্যে ট্রেনে উঠতে পেরেছেন, তাঁরা কামরার মধ্যেই বন্দি থেকেছেন ট্রেন ছাড়া পর্যন্ত প্রায় দেড় ঘণ্টা।

শক্তিগর স্টেশনে নিজস্বী উৎসব।

শক্তিগর স্টেশনে নিজস্বী উৎসব। —নিজস্ব চিত্র।

তিনটি কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় থেকে শ’দেড়েক পড়ুয়াকে নিয়ে আসা হয়েছিল হাওড়া স্টেশনে। এদের মধ্যে জনা পঞ্চাশকে অভিভাবক-সহ ট্রেনে উঠতে দেওয়া হয়। মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলেন লিলুয়ার বাসিন্দা জয়শ্রী সাহা। বেলা সাড়ে ১১টা বেজে যাওয়ার পর বললেন, ‘‘সেই সকাল ৭টায় বেরিয়েছি! মেয়েটা কিচ্ছু খেয়ে আসেনি। একটা গোলাপ ফুল আর জল ছাড়া কিছুই দেয়নি এখনও!’’ এক রেলকর্তাকে জিজ্ঞাসা করে জানা গেল, ‘‘ডানকুনি থেকে প্রাতরাশের খাবার উঠবে।’’ কর্তা আরও বললেন, ‘‘ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ সবই উঠবে ডানকুনি থেকে। এই ট্রেনে খাবার গরম করার ব্যবস্থা আছে। কোনও অসুবিধা হবে না।’’

ডানকুনি স্টেশনে পৌঁছে বোঝা গেল অব্যবস্থা কাকে বলে! ১২টা ৩ মিনিটে বন্দে ভারত পৌঁছল ডানকুনিতে। প্ল্যাটফর্মে ট্রেন দেখতে আসা মানুষে ছয়লাপ। দরজা খুলতেই দলে দলে বিনা টিকিটের যাত্রী উঠে পড়লেন ট্রেনে। সবারই বক্তব্য, ‘‘একটা সেল্‌ফি তুলে নেমে যাব।’’ বাধা দিয়েও কোনও লাভ না পেয়ে একটা সময় হাল ছেড়ে দিলেন রেলকর্মীরা। কামরায় তখন পা রাখার জায়গা নেই। সবাই নিজস্বী তুলছেন। অনুরোধ করে সেই অত্যুৎসাহীদের নামাতে নামাতে বেলা সওয়া ১২টা।

দরজা বন্ধ হওয়ার পরে জানা গেল, অনেকে নামেননি অথবা নামতে পারেননি। ভরদুপুরে তখন সকালের খবরের কাগজ, ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ নিয়ে নাস্তানাবুদ রেলকর্মীরা। কাকে দেবেন, কাকে দেবেন না ভাবছেন। ‘বিশ্ববাংলা’র লোগো লাগানো লাল প্যাকেটের ভিতরে খাবার সম্ভবত বৃহস্পতিবার রাত থেকে অপেক্ষায়।

খাবার বিলি হতে হতেই কামারকুণ্ডু। সেখানে অবশ্য ট্রেন দেখতে-আসা লোকজন উঠতে পারেননি। বরং অনেকে নামলেন। উঠেছিলেন ডানকুনিতে। তাঁদেরই একজন চুমকি সাহা। সঙ্গে ছেলে মৈনাক। চুমকি বললেন, ‘‘সাধ পূরণ হয়ে গেল। কোনও দিন পয়সা দিয়ে উঠতে পারব কি না জানি না। তবে আজ ফ্রি-তে অনেক সেল্‌ফি তুলে নিয়েছি।’’

তখন বাইরে বিজেপির পতাকা নিয়ে স্লোগান। ফুলে ফুলে ভরে গিয়েছে প্ল্যাটফর্ম। সেই ভিড়েও সবচেয়ে আগ্রহ নিজস্বী তুলতেই। ১২টা ৩২ মিনিটে ছেড়ে পরের স্টেশন মসাগ্রামে আবার ‘গতিশীল’ ট্রেন দাঁড়াল ১২টা ৫৭ মিনিটে। তেমন লোক ছিল না প্ল্যাটফর্মে। দু’মিনিট দাঁড়িয়ে কাছের স্টেশন শক্তিগড়। সেখানে একটু বেশি দাঁড়াবে কথা ছিল। কারণ অনেকে নামবেন। সেই সুযোগে শক্তিগড় স্টেশনে বন্দে ভারতকে পটভূমিকায় রেখে চলল নিজস্বী উৎসব।

স্কুলপড়ুয়া যাত্রীদের শক্তিগড়েই নেমে যাওয়ার কথা। অভিভাবক এবং শিক্ষকদের সঙ্গে নামলও তারা। কিন্তু দেখা গেল, দুপুরের খাবার কেউ পেয়েছেন, কেউ পাননি। ঠিক যেমন করে ‘গতির ট্রেন’ বন্দে ভারতে খোঁজ পাওয়া যায়নি গতিরই!

অন্য বিষয়গুলি:

Vande Bharat Express train
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy