রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। —ফাইল চিত্র।
১৫ দিনের মধ্যে জনসমক্ষে ক্ষমা চাইতে হবে রাজ্যপাল তথা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য সিভি আনন্দ বোসকে। এই মর্মে আইনি নোটিস রাজভবনে পাঠিয়েছেন রাজ্যের ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য। অভিযোগ, আচার্য তাঁদের সম্মানহানি করেছেন। আচার্যের বক্তব্যের কারণে সামাজিক এবং মানসিক হেনস্থা হয়েছে তাঁদের। ক্ষমা না চাইলে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে প্রাক্তন উপাচার্যেরা মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন। প্রত্যেকের জন্য ৫০ লক্ষ টাকা করে জরিমানাও দাবি করা হবে।
গত জুলাই মাসে রাজ্যের ২৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মেয়াদ বৃদ্ধি করার কথা ছিল। কিন্তু আচার্য বোস উপাচার্য হিসাবে মাত্র তিন জনের মেয়াদ বৃদ্ধি করেছিলেন। বাকি ২৪ জন উপাচার্য পদ হারান। সেই সময় রাজ্যপাল জানিয়েছিলেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির কাছ থেকে সাপ্তাহিক যে রিপোর্ট চেয়েছিলেন, এই ২৪ জনের কাছ থেকে তা পাননি। সেই কারণে তাঁদের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হল না। যদিও, ২০১৯ সালের নিয়ম অনুযায়ী, আচার্যের সঙ্গে উপাচার্যদের সরাসরি যোগাযোগ সম্ভব নয়। বিকাশ ভবন মারফত রাজভবনের সঙ্গে উপাচার্যদের যোগাযোগ করাই নিয়ম। সেই মতো, এই উপাচার্যেরা বিকাশ ভবনে রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন। সেখান থেকে তা রাজভবনে পৌঁছয়।
পরে একটি ভিডিয়ো বার্তায় রাজ্যপাল অন্য কথা বলেন। তিনি উপাচার্যদের মেয়াদ বৃদ্ধি না করার তিনটি কারণ দেখান। তাঁর কথায়, ‘‘আপনারা জানতে চাইবেন, কেন সরকারের মনোনীত ভিসিদের নিয়োগ করতে পারিনি। তাঁরা কেউ ছিলেন দুর্নীতিগ্রস্ত, কেউ ক্যাম্পাসে রাজনীতির খেলা খেলেন, কেউ আবার ক্যাম্পাসে কোনও ছাত্রীকে হেনস্থা করেছেন। তাঁদের কী ভাবে মেয়াদ বৃদ্ধি করব?’’ রাজ্যপালের এই বক্তব্যেই আপত্তি তুলেছেন ১২ জন প্রাক্তন উপাচার্য। তাঁদের বক্তব্য, আচার্য চাইলে তাঁদের মেয়াদ বৃদ্ধি না-ই করতে পারেন। কিন্তু তাঁদের সম্পর্কে অসম্মানজনক কথা প্রচার করতে পারেন না। রানি রাসমণি গ্রিন ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন উপাচার্য আশুতোষ ঘোষ বলেন, ‘‘কোনও প্রমাণ ছাড়া আচার্য কী ভাবে আমাদের সম্পর্কে এমন মন্তব্য করতে পারেন? এতে আমাদের মানহানি হয়েছে। আমরা সামাজিক এবং মানসিক ভাবে হেনস্থার সম্মুখীন হয়েছি।’’
রাজভবনে যে ১২ জনের তরফে আলাদা আলাদা আইনি নোটিস পৌঁছেছে, আশুতোষ ঘোষ ছাড়াও তাঁদের মধ্যে আছেন বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য দেবনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য সাধন চক্রবর্তী, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য নিমাইচন্দ্র সাহা, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য মানস সান্যাল, বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য স্বাগতা সেন, কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য দেবকুমার মুখোপাধ্যায়, গৌরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য শান্তি ছেত্রী, সিধো কান্হো বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য দীপক কুমার কর এবং উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ওমপ্রকাশ মিশ্র। নোটিসে বলা হয়েছে, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সকলের সামনে রাজ্যপালকে তাঁর বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। তা না হলে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করবেন প্রাক্তন উপাচার্যেরা। সেই সঙ্গে ৫০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণের দাবিও করা হবে। ওমপ্রকাশ মিশ্র জানান, তাঁদের এই আইনি চিঠি রাজ্যপালের উদ্দেশে নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের উদ্দেশে।
রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগকে কেন্দ্র করে শিক্ষা দফতরের সঙ্গে রাজভবনের সংঘাত বেশ কিছু দিন ধরেই চলছে। সম্প্রতি যা আরও বেড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে একের পর এক অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগ করেছেন রাজ্যপাল বোস। এ প্রসঙ্গে, শিক্ষক দিবসের সরকারি অনুষ্ঠান থেকেই মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন। তিনি হুঁশিয়ারির সুরেই জানিয়েছিলেন, কোনও বিশ্ববিদ্যালয় রাজভবনের কথা মতো চললে অর্থনৈতিক সহায়তা বন্ধ করে দেবে রাজ্য। সেই হুঁশিয়ারিতেও অবশ্য তেমন লাভ হয়নি। সে দিন রাতেই কৃষ্ণনগরের কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্য হিসাবে অধ্যাপক কাজল দে-কে নিয়োগ করেন রাজ্যপাল। সে ক্ষেত্রেও রাজ্যের সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা করেননি বলে অভিযোগ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy