Advertisement
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
Agnipath Scheme

Agnipath scheme: বিতর্কিত অগ্নিপথেই নয়া কর্মসংস্থানের পথ, অভিমত পদ্মপথের পথিক প্রাক্তন তিন বাঙালি সেনাকর্তার

সেনায় অল্প সময়ের জন্য নিয়োগের অগ্নিপথ প্রকল্প নিয়ে ক্ষোভের আগুন বাড়ছে। কিন্তু এই প্রকল্পকে বরং ভাল বলছেন তিন প্রাক্তন বাঙালি সেনাকর্তা।

লেফটেনন্যান্ট জেনারেল সুব্রত সাহা, ,কর্নেল কুণাল ভট্টাচার্য   কর্নেল সব্যসাচী বাগচি।

লেফটেনন্যান্ট জেনারেল সুব্রত সাহা, ,কর্নেল কুণাল ভট্টাচার্য কর্নেল সব্যসাচী বাগচি।

পিনাকপাণি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২২ ১৬:৩৫
Share: Save:

দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের অগ্নিপথ প্রকল্প। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ঘোষণা নিয়ে বিভিন্ন মহলে শুরু হয়েছে সমালোচনা। তবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ জানিয়েছেন, দেশের যুবকদের কাছে এই প্রকল্প বড় সুযোগ। ইচ্ছুকরা যেন প্রস্তুতি শুরু করে দেন।

হুবহু একই কথা মনে করছেন অবসরপ্রাপ্ত সেনকর্তা তথা অধুনা বিজেপি নেতা সুব্রত সাহা। কাশ্মীরের বালাকোটে ভারতীয় সেনার হয়ে লড়াই-করা প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট জেনারেল সুব্রত গত বিধানসভা নির্বাচনে কলকাতার রাসবিহারী আসনে লড়াই করেছিলেন। সে যুদ্ধে অবশ্য হেরে যান তিনি। সেই সুব্রত মনে করেন, কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত খুলে দেবে কেন্দ্রের এই প্রকল্প।

শুক্রবার আনন্দবাজার অনলাইনেক সুব্রত বলেন, ‘‘যাঁরা এই প্রকল্পের বিরোধিতায় পথে নেমেছেন, অশান্তি করছেন, তাঁরা আসলে বিষয়টা খতিয়ে দেখেননি। যে বয়সে এবং যে শিক্ষাগত যোগ্যতায় কাজের সুযোগ মিলবে, তার তুলনায় কেন্দ্র যা বেতনের কথা বলেছে, সেটা যথেষ্টই ভাল। একই সঙ্গে চার বছর দেশের জন্য দেওয়ার পাশাপাশি বিনা খরচে প্রশিক্ষণও হয়ে যাবে। যেটা সারাজীবন যে কোনও ক্ষেত্রে কাজের জন্য সহায়তা করবে। আর একসঙ্গে অনেকটা টাকাও হাতে আসবে। তা দিয়ে নতুন করে কিছু শুরু করাও সম্ভব হবে। চার বছরের অভিজ্ঞতা এবং প্রায় ১২ লাখ টাকা যথেষ্ট ভাল মূলধন।’’

প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, এই প্রকল্পে ‘অগ্নিবীর’ হিসেবে সেনায় ৪৬ হাজার নিয়োগ হবে। সাড়ে ১৭ থেকে ২৩ বছর (আগে ছিল ২১ বছর। দেশ জোড়া বিক্ষোভে তা বাড়িয়ে বৃহস্পতিবারেই ২৩ বছর করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার) বয়সের ছেলেমেয়েরা আবেদন করতে পারবেন। ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া হয়েছে দশম স্তর। কাজে যোগ দিয়ে বার্ষিক বেতন হবে ৪.৭৬ লাখ টাকা। চতুর্থ বছরে তা বেড়ে হবে ৬.৯২ লাখ টাকা। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের হিসাব মতো চার বছরে বেতন বাবদ মোট ১১ লাখ ৭২ হাজার টাকা মিলবে। এর পাশাপাশি কোনও খরচ ছাড়াই ৪৮ লাখ টাকার বিমা এবং চার বছরের শেষে এককালীন ১১.৭১ লাখ টাকা দেওয়া হবে। সেইসঙ্গে অভিজ্ঞতার শংসাপত্র ও ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেওয়ার সুবিধাও পাবেন অগ্নিবীররা।

এই আর্থিক ঘোষণা অনেকটাই ‘উন্নতমানের’ বলার পাশাপাশি সুব্রত এ-ও বলেন, ‘‘কোনও রকম প্রশিক্ষণ ছাড়াই সাড়ে ১৭ বছর বয়সে চাকরির সুযোগ আর কোথায় পাওয়া যাবে? আর যাঁরা যোগ্যতা দেখাতে পারবেন তাঁদের ২৫ শতাংশকে সেনাবাহিনীতেই নিয়ে নেওয়া হবে। এর ফলে সেনাও যোগ্যদের বেছে নেওয়ার সুযোগ পাবে। একই সঙ্গে যাঁরা চার বছর সেখানে কাজ করবেন, তাঁরা দেশের অন্যান্য আধাসামরিক বাহিনীতে যেমন আবেদন করতে পারবেন, তেমনই কোনও রাজ্য পুলিশেও চাকরির সুযোগ পাবেন।’’

একই মত অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্তা কর্নেল সব্যসাচী বাগচিরও। সেনবাহিনী থেকে অবসরের পরে সব্যসাচীও রাজনীতিতে আসেন। দীর্ঘ সময় বিজেপিতে থাকার পরে তৃণমূলে যোগ দেন। রাজ্যের সহ-সভাপতি হন। এখন রাজনীতি থেকেও অবসর নিয়েছেন।

শুক্রবার সব্যসাচী বলেন, ‘‘লেখাপড়ার জন্য অনেকেই বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নেন। তা সুদ-সহ শোধ করতে হয়। কিন্তু সেনায় চার বছর কাজের পরে যাঁরা প্রায় ১২ লাখ টাকা পাবেন, তাঁরা চাইলে নতুন করে লেখাপড়াও করতে পারবেন। ব্যবসাও শুরু করতে পারবেন।’’ কিন্তু অবসরের পরে তো পেনশন মিলবে না? এটাই তো বিতর্ক এবং ক্ষোভের পিছনে ‘বড়’ যুক্তি। সব্যসাচীর জবাব, ‘‘রাজনীতিকরা বিধায়ক বা সাংসদ হয়ে খুব কম সময় কাজ করে পেনশন পান। এটাই একমাত্র উদাহরণ। এ ছাড়া কোনও চাকরি, কোনও পেশায় এত কম সময় কাজ করে পেনশন পাওয়া যায় না। চার বছর কাজ করার পরে পেনশনের দাবি করাই তো সমীচীন নয়!’’

আর এক অবসরপ্রাপ্ত বাঙালি সেনাকর্তা কর্নেল কুণাল ভট্টাচার্য মনে করেন, যাবতীয় বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে রাজনীতির জন্য। গত কলকাতা পুরভোটে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপির প্রার্থী ছিলেন কুণাল। তিনি এখন সঙ্ঘ পরিবারের সংগঠন ‘পূর্ব সৈনিক সেবা পরিষদ’-এর রাজ্য সভাপতি।

শুক্রবার কুণাল বলেন, ‘‘সেনাবাহিনীতে অল্প সময়ের জন্য নিয়োগ তো নতুন কিছু নয়। অনেক অফিসারই পাঁচ বছরের জন্য চাকরি করেন। পরে তাঁরা কেউ কেউ থেকে যান। কিন্তু বেশির ভাগই অন্য জায়গায় চাকরি করেন। আমার মনে হয়, কর্মসংস্থানের বড় সুযোগ তৈরি করে দেবে অগ্নিপথ প্রকল্প। অনেকেই অবসরের পরে পেনশনের কথা বলছেন। কিন্তু কাজের সুযোগই যেখানে কম, সেখানে কেন্দ্রীয় সরকার যে সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে তাকে স্বাগত জানানো উচিত।’’ কুণালের আরও দাবি, এখন যাঁরা সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ নেবেন তাঁরা যখন সরকারি বা বেসরকারি সংস্থায় কাজের আবেদন করবেন তখন বাড়তি সুবিধা পাবেন অভিজ্ঞতার জন্য। শৃঙ্খলাবদ্ধ ও প্রশিক্ষিত কর্মী হিসেবে বাড়তি ‘গুরুত্ব’ও পাবেন তাঁরা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

অন্য বিষয়গুলি:

Agnipath Scheme Agnipath Ex Army Officer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy