সল্টলেকের এসএসসি ভবনে অনশন করছেন কয়েক জন চাকরিহারা শিক্ষক। তাঁদের পাশে আরও কয়েক জন চাকরিহারা সহযোদ্ধা। আবার আর এক দল চাকরিহারা শিক্ষক ময়দান এলাকায় গান্ধীমূর্তির পাদদেশে অবস্থানে শামিল হয়েছেন। কার্যত এই দু’টি দৃশ্য দেখিয়ে খোদ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুই আন্দোলনরত শিক্ষকদের মধ্যে বিভাজনের কথা বললেও, তা মানতে চাইছেন না আন্দোলনরত শিক্ষকেরা।
অনশনরত শিক্ষকদের এক জন, সুমন বিশ্বাস এবং ২০১৬ সালের চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষকদের মঞ্চের অন্যতম প্রতিনিধি মেহেবুব মণ্ডল শনিবার তাঁদের মধ্যে পারস্পরিক ফাটলের সম্ভাবনা এক কথায় উড়িয়ে দিয়েছেন।
শুক্রবার ব্রাত্য বলেছিলেন, “শিক্ষকদের মধ্যে অনশনকারী খুবই কম। কোনও রাজনৈতিক দল তাঁদের প্ররোচিত করছে। বৈঠকে আসা শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, তাঁদের কেউ অনশন করছেন না। বোঝাই যাচ্ছে, ওঁদের মধ্যে স্পষ্ট বিভাজন তৈরি হচ্ছে।” এ প্রসঙ্গে এসএসসি ভবনের কাছে অনশনরত শিক্ষক সুমন বিশ্বাস বলেন, “আর জি কর-কাণ্ড নিয়ে বিশাল আন্দোলনেও সরকার বিভাজন সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। একই ভাবে শিক্ষকদের আন্দোলনেও ফাটল ধরানোর চেষ্টা শুরু হয়েছে।” গান্ধীমূর্তির কাছে অবস্থানরত শিক্ষক মেহেবুব মণ্ডলও বলেন, “শিক্ষামন্ত্রী বিভাজনের কথা বললেও কোনও বিভাজন নেই।” তবে কয়েকটি বিষয়ে আন্দোলনরত শিক্ষকদের মধ্যে কিছু মতানৈক্য রয়েছে বলে সুমন এবং মেহেবুব মেনে নিয়েছেন।
মেহেবুব এ দিন বলেন, “আমরা সবাই জানি, এসএসসি অফিসের সামনে যাঁরা অনশনে বসেছেন এবং তাঁদের যারা সমর্থন করতে ওখানে যাচ্ছেন, ওই শিক্ষকেরা ডিএ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত একটি শিক্ষক সংগঠনের সঙ্গে আছেন। আমরা জানি, ডিএ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ওই শিক্ষক সংগঠনটির উপরে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক প্রভাব আছে। আমরা আমাদের আন্দোলনে কোনও রাজনীতির প্রভাব ফেলতে দেব না। আমরাও অনশন করব, তবে অনশন হল শেষ অস্ত্র। প্রয়োজনে বৃহত্তর গণ আন্দোলনে যাব।”
অন্য দিকে, সুমনের মত, “আন্দোলন যেখানে এসএসসির কার্যকলাপের বিরুদ্ধে, সেখানে এসএসসি ভবনের কাছেই তো আন্দোলন করা উচিত ছিল। তবু আর এক দল শিক্ষক কেন গান্ধীমূর্তির পাদদেশে চলে গেলেন? কোনও রাজনৈতিক দল তাঁদের আন্দোলনকে বিপথগামী করতে পারে! সরকারপক্ষও তাঁদের ভুল বোঝাতে পারে!” সুমনের কথায়, “আমরা এই এসএসসি অফিসের সামনে অনশন চালাব। আমাদের সব আন্দোলন এসএসসি অফিস ঘিরেই হবে।”
আন্দোলনের পথ নিয়ে কিছু মত পার্থক্য থাকলেও সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশনের পথ ধরে চাকরি আদায় করে স্কুলে ফেরার লক্ষ্যে কোনও রকমের দ্বিমত নেই বলেই সুমন এবং মেহেবুবরা জানান।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)