এলাকায় বিএসএফের স্থায়ী শিবির না হলে বাড়ি ফেরার প্রশ্ন নেই বলে শুক্রবারই রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস ও জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধির কাছে জানিয়েছিলেন মালদহের পারলালপুর হাই স্কুলে আশ্রিত মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানের বাসিন্দারা। তবে শনিবার সকালে কালিয়াচক ৩ ব্লকের ওই শিবির থেকে দশটি পরিবারের অন্তত ২১ জন বাড়িতে ফিরলেন। প্রায় আড়াইশো জন এখনও শিবিরে রয়েছেন। তাঁদের বেশিরভাগই এলাকায় স্থায়ী বিএসএফ শিবিরের দাবিতে অনড়। শনিবার মুর্শিদাবাদ সফরে যাওয়া রাজ্যপালের কাছেও সে দাবি পৌঁছেছে। তিনি বিষয়টি দেখার আশ্বাস দেন।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ২১ জনকে এ দিন সরকারি গাড়িতে পারলালপুরে গঙ্গার ঘাট পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে নৌকায় গঙ্গা পার করিয়ে পৌছে দেওয়া হয় ধুলিয়ান ফেরিঘাটে। সেখান থেকে শমসেরগঞ্জ প্রশাসন সকলকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে।
পারলালপুরের শিবির পরিদর্শনে এ দিন দুপুরে পৌঁছন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য বিজয়া ভারতী সায়ানি। তিনি এ দিন মহিলাদের সঙ্গেই বেশি কথা বলেন। কী অবস্থায়, কোন পরিস্থিতিতে তাঁদের মুর্শিদাবাদ থেকে মালদহে আসতে হয়েছে, জানতে চান। বেতবোনার মিনু প্রামাণিক, সুমতি মণ্ডল বা বাজারপাড়ার নমিতা মণ্ডলেরা ঘটনার কথা জানান।
বিজয়া পরে বলেন, “আশ্রিতদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, তাঁদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। এই শিবিরে আশ্রিতদের খাদ্য, স্বাস্থ্য পরিষেবা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিকঠাক রয়েছে কি না, দেখে গেলাম। কমিশনের কাছে রিপোর্ট দেব।”
এ দিন যে ২১ জন বাড়িতে ফিরেছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের কল্যাণী প্রামাণিক। তিনি বলেন, “নাতনির অন্নপ্রাশন থাকায় স্বামীর সঙ্গে ৮ এপ্রিল বেতবোনা গ্রামে মেয়ের বাড়িতে এসেছিলাম। ১১ এপ্রিল গোলমালের মধ্যে পড়ি। সে দিনই বিকেলে মেয়ে-জামাইয়ের সঙ্গে ধুলিয়ান থেকে গঙ্গা পেরিয়ে পারলালপুরের শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলাম। আমাদের ও দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে জেনে বাড়িতে ফিরছি।” বেতবোনা গ্রামের আমিরচাঁদ মণ্ডল বলেন, “আমাদের গ্রামে পুলিশ ও বিএসএফের পিকেট রয়েছে। ফোনে তা জেনে আতঙ্ক নিয়েই বাড়িতে ফিরছি।”
তবে শিবিরে এখনও থেকে যাওয়া হাতিচিত্রা গ্রামের প্রসেনজিৎ মণ্ডল বা বেতবোনা গ্রামের সুভাষ মণ্ডলেরা বলেন, “পুলিশের উপরে ভরসা নেই। বিএসএফ চলে গেলে, ফের হামলা হতে পারে। এলাকায় স্থায়ী বিএসএফ ক্যাম্প না বসানো পর্যন্ত ফিরতেচাইছি না।”
এ দিন শিবিরের বাইরে মহকুমাশাসক (মালদহ সদর) পঙ্কজ তামাং বলেন, “যাঁরা ফিরেছেন, তাঁদের সঙ্গে ১০ কেজি চাল, ডাল, ত্রিপল, শিশুদের জন্য দুধ, বিপর্যয় মোকাবিলার কিট দিয়েছি। শিবিরের অনেকে স্বেচ্ছায় বাড়িতে ফিরতে চাইছেন। সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা প্রস্তুত রয়েছে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)