Advertisement
E-Paper

পকসোতেও কমেনি নাবালিকা নিগ্রহ

মহিলা, শিশু, বয়স্ক মানুষের বিরুদ্ধে অপরাধপ্রবণতা বাড়তে দেখা যাচ্ছে রাজ্যে। কেন এই বিপন্নতার মেঘ?

যৌন নির্যাতনের সঙ্গে পোশাকের সম্পর্ক নেই। তা বোঝাতে রবিবার বিভিন্ন বয়সের নির্যাতিত-নির্যাতিতার প্রতীকী পোশাকের প্রদর্শনী যাদবপুরে।

যৌন নির্যাতনের সঙ্গে পোশাকের সম্পর্ক নেই। তা বোঝাতে রবিবার বিভিন্ন বয়সের নির্যাতিত-নির্যাতিতার প্রতীকী পোশাকের প্রদর্শনী যাদবপুরে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:৩৫
Share
Save

আর জি কর কাণ্ড কি নারী নির্যাতনের অভিযোগ ও সেই সংক্রান্ত তদন্ত প্রক্রিয়ায় কোনও বদল ঘটাল?

অনেকেরই অভিযোগ, বিভিন্ন কারণে রাজ্যে নারী নির্যাতনের অভিযোগ কম হতে পারে। একে তো সব ক্ষেত্রে পুলিশ ডায়েরি বা এফআইআর নেয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও, বহু ক্ষেত্রে তদন্ত চালিয়ে শেষ পর্যন্ত আদত দোষীরা শাস্তি পাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। দ্বিতীয় কারণ হতে পারে, বহু ক্ষেত্রে বছরের পর বছর মামলা চলা।

কিন্তু আর জি কর কাণ্ডের পরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নারী নির্যাতনের অভিযোগ বেড়েছে বলেই সূত্রের দাবি।

সংশ্লিষ্ট মহল যদিও বলছে, নাবালিকা নিগ্রহে দ্রুত বিচার দিতে পকসো আইন চালু হয়েছে। তার পরেও শিশুকন্যা থেকে কিশোরী— নির্যাতনের নালিশ জমছে ভূরি ভূরি। যেমন, ২০১৯ সালের জুন মাসে পশ্চিম মেদিনীপুরের একটি এলাকায় নাবালিকা ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল। সেই মামলার রায় হয়েছে দীর্ঘ পাঁচ বছর বাদে। সম্প্রতি নাবালিকা ধর্ষণে অভিযুক্তকে ২০ বছর সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা শুনিয়েছে মেদিনীপুর আদালত। তবে পুরুলিয়া জেলা আদালতের সরকারি কৌঁসুলি বিশ্বরূপ পট্টনায়কের পর্যবেক্ষণ, “পরিসংখ্যানের বিচারে বেকসুর খালাসের তুলনায় সাজার সংখ্যা কম হলেও, তুলনায় সাজার হার বেড়েছে।” বর্তমান আবহে অন্তত ধরপাকড়ের ক্ষেত্রে পুলিশের তৎপরতাও চোখে পড়ছে। সম্প্রতি পূর্ব বর্ধমানে শিশুকন্যাকে ভুট্টা খাওয়ানোর নাম করে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। রক্তাক্ত শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। ড্রোন ক্যামেরা, ‘ড্রাগন’ আলোর সাহায্যে অভিযুক্তকে ধাওয়া করে গ্রেফতার করে পুলিশ।

যদিও শেষ পর্যন্ত তদন্ত প্রক্রিয়া কোন দিকে গড়ায়, তা নিয়ে কিছু মানুষের মনে প্রশ্ন থেকে গিয়েছে। তাঁদের অনেকেই জানিয়েছেন, পুলিশের গত কয়েক বছরের ভূমিকা দেখার পরে এমন সংশয় তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক নয়।

দাম্পত্য কলহ, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে নারী নির্যাতনের অভিযোগও নেহাত কম নয়। চলতি বছর মার্চে পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ে স্ত্রীর সঙ্গে অশান্তি চলাকালীন চার বছরের শিশুকন্যাকে আছাড়ে খুন করে স্বামী। অভিযুক্ত চন্দন মণ্ডলকে গ্রেফতার করা হয়। তার আগে ফেব্রুয়ারিতে সবংয়েরই মোহাড়ে স্ত্রী উমা দাস জানাকে গলার নলি কেটে খুনের অভিযোগ ওঠে স্বামী গুরুপদ জানার বিরুদ্ধে। নিয়মিত মদ্যপান করে বাড়িতে এসে স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগ ছিল গুরুপদের বিরুদ্ধে। গত জুনে মালদহের কালিয়াচকে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগে এক মহিলা ও যুবককে জুতোর মালা পরিয়ে গ্রামে ঘোরানোর অভিযোগ ওঠে স্থানীয় মোড়ল-মাতব্বরদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, মহিলাকে যৌন হেনস্থাও করা হয়। সে ভিডিয়ো ‘ভাইরাল’ হতেই নড়েচড়ে বসে পুলিশ। ন’জনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা এখন জেল হেফাজতে।

এর বাইরেও বহু ঘটনা থানা পর্যন্ত পৌঁছয় না বলে মানছেন পুলিশ কর্তারাই। কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের বিরুদ্ধে অত্যাচারের অভিযোগও অনেক সময়ই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মিটিয়ে ফেলা হয়। রাজ্যে পর্যাপ্ত মহিলা থানা না-থাকা এবং অভিযোগ দায়েরের সুষ্ঠু পরিবেশ না-থাকার ফলেও অভিযোগ দায়ের কম হয়, মানছেন পুলিশ ও প্রশাসনের অনেক কর্তাব্যক্তিই।

রাজ্যে প্রথম মহিলা থানা হয় ২০১২ সালে, আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের অধীনে। নতুন করে দু’দফায় আরও মহিলা থানা হলেও বাহিনীতে মহিলা পুলিশকর্মী সে ভাবে বাড়েনি। বর্তমানে রাজ্য পুলিশে মহিলা কর্মী আছেন প্রায় ন’হাজার। কিন্তু মহিলা ইনস্পেক্টর মাত্র ২৩ জন, সাব-ইনস্পেক্টর ৩৭০ জন। প্রতিটি থানায় মহিলা এসআই ও এএসআই দেওয়ার কথা বলা হলেও তা সম্ভব হচ্ছে না।

সমাজকর্মী রোশেনারা খান বলেন, “নারীর সুরক্ষায় আইন আছে, কমিশন আছে, কিন্তু তার প্রয়োগ কতটুকু হয়? কাজের সূত্রে এমন অনেক নির্যাতিতাকে দেখেছি, যারা স্বনির্ভর হয়েও আইনের আশ্রয় নিতে চান না। আবার অনেক সময় পুলিশ-প্রশাসন অযথা দেরি করে। অপরাধী রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থাকলে পার পেয়ে যায়। উল্টে নির্যাতিতাই সমাজের চোখে, পরিবারের চোখে অপরাধী হয়ে ওঠেন।” তিনি মনে করিয়েছেন, “পরিস্থিতি বদলাতে পুরুষদেরও সচেতন থাকতে হবে। আর মহিলাদেরও ঘরে-বাইরে জোট বাঁধতে হবে পরস্পরকে সাহায্য করার জন্য।”

এ নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোরও চলছে। বিধায়ক তথা রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক অগ্নিমিত্রা পালের দাবি, “পশ্চিমবঙ্গে নানা জায়গায় প্রতিদিন মহিলাদের উপরে অত্যাচার হচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী হয়তো মেয়েরা সুরক্ষিত। কারণ, পুলিশ তো অভিযোগ নেয় না। সেই পরিসংখ্যানই এনসিআরবি-তে পাঠানো হয়।” রাজ্যের নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজার পাল্টা যুক্তি, “কয়েকটা ঘটনা ঘটেছে ঠিকই। একটিও কাম্য নয়। কিন্তু সেগুলি দিয়ে আইনশৃঙ্খলার অবস্থা খারাপ হয়েছে, তা একেবারে রাজনৈতিক মত।” তবে তিনি মেনে নেন, “অবক্ষয় সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির মতো, পুলিশি তদন্ত ও দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা থাকাও জরুরি।” তার পরে যোগ করেন, “এই দু’টি বিষয়েই রাজ্য সরকার যথেষ্ট তৎপর।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Child Molestation POCSO

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}