E-Paper

হুঁশ হয়নি ন’টি মৃত্যুতেও, দত্তপুকুর এলাকার ‘বাজি মহল্লা’ রয়ে গিয়েছে আগের মতোই

বাজির বিস্ফোরণে এত মৃত্যুর পরেও এ ভাবে বাজি বিক্রি হয় কী করে? বারাসত পুলিশ জেলার সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ের আশ্বাস, ‘‘দ্রুত খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’

An image of Fire Crackers

অবাধ: দত্তপুকুর থানা এলাকায় বাড়ির মধ্যে তৈরি হচ্ছে বাজি। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:৩৪
Share
Save

গত অগস্টের ঘটনা। বাজি বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল ন’জনের দেহ! গত মাসেই ফের বোমা বিস্ফোরণে ঝলসে গিয়েছে পাঁচ নাবালক! একের পর এক এমন ঘটনা ঘটলেও উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুর থানা এলাকার ‘বাজি মহল্লা’ রয়ে গিয়েছে আগের মতোই। রবিবার সকাল থেকে ওই এলাকার মোচপোল, পশ্চিমপাড়া, বেরুনানপুকুরিয়া, নারায়ণপুর, কাঠোর, জালশুখা বা নীলগঞ্জের বিভিন্ন পাড়ায় ঘুরে দেখা গেল, বহু জায়গাতেই ঘরে ঘরে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ বাজি। পুলিশ-প্রশাসনের নজরদারির চিহ্ন নেই। বিস্ফোরণে এত মৃত্যু দেখেও সচেতনতার বালাই নেই স্থানীয়দেরও। প্রশ্ন উঠছে, এত বড় ঘটনার পরেও পরিস্থিতির বদল না হলে আর কবে হবে?

উত্তর ২৪ পরগনার মানচিত্রে বাজির জন্য বিখ্যাত নারায়ণপুর। এ দিন দুপুরে সেখানে পৌঁছে দেখা গেল, অন্যান্য বার গমগম করা জায়গাটা কেমন যেন ঝিমিয়ে রয়েছে। পর পর দোকানের শাটার নামানো। মনে হয়েছিল, তবে কি পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়েছেন মানুষ? ভুল ভাঙল কয়েক মুহূর্তেই। দেখা গেল, একটি বাড়ির উঠোনে প্রচুর চরকি রোদে শুকোতে দেওয়া হয়েছে। সেখানে গাড়ি থেকে নামতেই ঘিরে ধরলেন দুই যুবক। জানতে চাওয়া হল, কোথা থেকে আসা হয়েছে? আসার কারণই বা কী? বাজি কেনার ইচ্ছে প্রকাশ করায় একটি বাড়ির ভিতরে নিয়ে গেলেন এক যুবক।

ঘরে ঢুকতেই চোখে পড়ল, চৌকির উপরে সাজানো নানা বাজি। দেওয়াল জুড়েও সাজিয়ে রাখা সে সব। এক বয়স্ক ব্যক্তি এবং এক মহিলা দরদাম শুরু করলেন। মহিলা বললেন, ‘‘বিস্ফোরণের পর থেকে এ ভাবে বাড়িতেই দোকান করেছি। ছেলেরা বাইরেটা সামলাচ্ছে। কেউ বাজি কিনতে এলে তাঁকে ওরা ভিতরে নিয়ে আসছে।’’ সঙ্গে মহিলার দাবি, ‘‘সব রকমের জিনিস পাবেন, ভাল দামে দেব।’’ কিন্তু কোনটা সবুজ বাজি? কোনও বাক্সের গায়েই তো ‘ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ বা নিরি-র কিউআর কোড নেই! মহিলাকে থামিয়ে বয়স্ক ব্যক্তি বললেন, ‘‘পুলিশ নিজেও কিছু জানে না। নির্দ্বিধায় নিয়ে যান।’’

সেখান থেকে বেরিয়ে কাছেই একটি বাজার এলাকায় নিয়ে গেলেন স্থানীয় এক যুবক। কালীপুজোর আগে ওই এলাকাই হয়ে ওঠে বাজির বাজার। সেখানেও প্রায় সব দোকানের শাটার নামানো। কিন্তু প্রতিটি গেটের বাইরে প্রচুর জুতো রাখা। একই চিত্র আশপাশের বাড়ির দরজার সামনেও। ভিতরে কী হচ্ছে দেখতে এগোতেই এক মহিলার প্রশ্ন, ‘‘বাজি লাগবে নাকি? আমাদের ঘরে ঘুরে যান।’’

মহিলা পথ দেখিয়ে নিয়ে চললেন। বাড়ির দোতলার উপরে চারটে ঘর পেরিয়ে একটি ঘরে স্তূপ করে রাখা বাজি! ক্রেতার ভিড়ও যথেষ্ট। কলকাতা থেকে যাওয়া অনেকেই তালিকা ধরে ধরে বাজি কিনছেন। বিক্রেতা বললেন, ‘‘সব ধরনের বাজি পাবেন। বিস্ফোরণের ভয় নেই। ভাল দাম, ভাল জিনিস। আমাদের নিজস্ব জিনিস হল দোদোমা। নিয়ে যান, সারা জীবন আওয়াজ মনে থাকবে!’’ কিন্তু এখানেই তো বিস্ফোরণে ন’জনের মৃত্যু হয়েছে! বাবার সঙ্গেই ক্রেতাদের বাজি দেখাতে ব্যস্ত ব্যবসায়ীর ছেলে বললেন, ‘‘নিতে হলে নিন, বেশি কথা বলা যাবে না।’’ এর পরে তাঁর মন্তব্য, ‘‘ছবি তোলা যাবে না। অবশ্য ছবি তুলে নিয়ে পুলিশকে দেখালেও লাভ হবে না। কথাবার্তা চলছে। সন্ধ্যা থেকে হয়তো বাজারেই দোকান দেব।’’

ওই এলাকা ছেড়ে জালশুখার এক পাড়ায় গিয়ে দেখা গেল, বাজি শুকোতে ব্যস্ত এক মহিলা। নিজেই জানালেন, এর চেয়ে ভাল জিনিস রয়েছে তাঁদের কাছে! বিরাট আওয়াজের বোমা। যার শব্দ নাকি চারটে চকলেট বোমা একসঙ্গে ফাটানোর সমান। মহিলার দাবি, ‘‘শুধু চকলেট বোমা চাইলে তা-ও আছে। ১০০টা করে প্যাকেট করা আছে, ১৫০ টাকা করে দিতে হবে।’’

বাজির বিস্ফোরণে এত মৃত্যুর পরেও এ ভাবে বাজি বিক্রি হয় কী করে? বারাসত পুলিশ জেলার সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ের আশ্বাস, ‘‘দ্রুত খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’ কেন এত দিন করা হয়নি? তবে কি পুলিশি নজরদারিতে ফাঁক রয়েছে? উত্তর নেই। বিস্ফোরণ হওয়া বাড়ির পাশের এক বাসিন্দা বললেন, ‘‘আবারও ধরপাকড় হবে হয়তো, কিন্তু বাজির রক্তবীজ যাবে না।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Firecrackers Firecrackers Market Firecracker Blast Firecracker Market

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

ক্যানসেল করতে পারবেন আপনার সুবিধামতো

Best Value
প্রতি বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
প্রতি মাসে

৪২৯

১৬৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।