প্রতীকী ছবি।
কসবার ভুয়ো ভ্যাকসিন কাণ্ডের তদন্তে নেমে তার সঙ্গে টসিলিজ়ুমাব রহস্যও জুড়ে নিতে চাইছে ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে গত ২৪ এপ্রিল টসিলিজ়ুমাব নামে জীবনদায়ী ২৬টি ইঞ্জেকশন উধাও হয়ে যায়। ইডি-র তদন্তকারীর জানান, এমনিতে ওই ইঞ্জেকশনের প্রতিটির বাজারদর প্রায় ৪০ হাজার টাকা। কিন্তু যখন তা লোপাট হয়েছে বলে অভিযোগ, সেই সময় বাজারে ওই ওষুধের ব্যাপক চাহিদা ছিল। তাই তখন কালোবাজারে এক-একটি ইঞ্জেকশন প্রায় দু’লক্ষ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল বলে ইডি-র দাবি।
ভুয়ো টিকার মতোই ও ইঞ্জেকশন উধাওয়ের ঘটনাতেও কিছু ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তির যোগ রয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছিল। ঘটনার পরে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর দু’টি কমিটি গড়ে তদন্ত করেছিল। অভিযোগ ওঠে, এক তরুণী চিকিৎসক ‘রিকুইজ়িশন স্লিপ’-এ ওই ইঞ্জেকশন লিখে তা তুলে নেন। সেই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ওই চিকিৎসক এবং এক জন সিস্টার-ইনচার্জকে কোচবিহার জেলার শীতলখুচি ও মাথাভাঙা এলাকায় বদলি করা হয়। কিন্তু ইঞ্জেকশনগুলি কোথায় গেল, তার উত্তর এখনও মেলেনি। অভিযোগ, ওই চিকিৎসক রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের এক চিকিৎসক-নেতার ঘনিষ্ঠ।
ইডি-র বক্তব্য, সরকারি হাসপাতাল থেকে ওই ইঞ্জেকশন কোথায় পাচার করা হল এবং সেই পাচার কাণ্ডে আর কেউ জড়িত কি না, সেই বিষয়ে পুলিশের তদন্ত এগোয়নি। এক ইডি-কর্তা বলেন, ‘‘ওই ঘটনার তদন্ত প্রায় ধামাচাপা পড়ে গিয়েছে। ওই মহার্ঘ জীবনদায়ী ইঞ্জেকশন কী ভাবে পাচার করা হল, তা নিয়ে কলকাতা পুলিশের তদন্ত কতটুকু এগিয়েছে, তা জানার পরে ইডি তদন্ত শুরু করবে।’’ ওই কর্তার ব্যাখ্যা, ওই ইঞ্জেকশন পাচারে সরকারি টাকা নিয়ে যে দুর্নীতি হয়েছে, সেটা পরিষ্কার। ইডি সে-ক্ষেত্রে জনস্বার্থের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করতেই পারে। এতে জড়িত চিকিৎসক ও সিস্টার-ইনচার্জকে জিজ্ঞাসাবাদেরও প্রয়োজন আছে।
‘প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট’ (পিএমএলএ) অনুযায়ী, দেশের যে-কোনও প্রান্তে যে-কোনও ধরনের আর্থিক অনিয়ম নিয়ে তদন্ত করতে পারে ইডি। সিবিআইয়ের তদন্তের ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশ বা সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের অনুমোদনের প্রয়োজন হলেও ইডি-র ক্ষেত্রে সেই বালাই নেই। ইডি-কর্তাদের দাবি, আর্থিক অনিয়মের আভাস পেয়েই ভুয়ো ভ্যাকসিন কাণ্ড নিয়ে তদন্তে নেমেছেন তাঁরা। টসিলিজ়ুমাব লোপাটের ক্ষেত্রেও সরকারি তথা জনগণের টাকা নয়ছয় হয়েছে। তাই সেই ঘটনাও জুড়ে নেওয়া হচ্ছে ভুয়ো ভ্যাকসিন কাণ্ডের তদন্তের সঙ্গে।
দিল্লির সদর দফতরের নির্দেশে ভুয়ো ভ্যাকসিন কাণ্ডে কলকাতার দফতরে বিষয়টি নথিভুক্ত করে তদন্ত শুরু করেছে ইডি। কলকাতা পুলিশের সমান্তরালে ওই মামলার তদন্ত করা হবে বলে জানান ইডি-র অফিসারেরা। কলকাতা পুলিশের কাছ থেকে দফায় দফায় নথি সংগ্রহ করা হচ্ছে। পরে তাঁরা সরাসরি তদন্ত শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন ইডি-র প্রতিনিধিরা।
ইডি-র খবর, আদালতে আবেদন করে ভুয়ো টিকা কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত দেবাঞ্জন দেব-সহ ওই ঘটনায় ধৃতদের নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করে ‘বৃহৎ’ ষড়যন্ত্রের শিকড়ে পৌঁছতে চায় তারা। এই মামলায় কেউ আগাম জামিনের আবেদন করেছেন কি না, তারও খোঁজ চলছে। ইডি জানিয়েছে, এই মামলায় আপাতত ৫০ জন সাক্ষীর বয়ান নেওয়া হয়েছে।
সেগুলি খতিয়ে দেখে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। দেবাঞ্জনের একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে কয়েক কোটি টাকা লেনদেন করা হয়েছে বলে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে। সেই টাকার উৎস এবং কোন খাতে তা খরচ হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান ইডি-র তদন্তকারীরা। দেবাঞ্জনের সঙ্গে বহু ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তির যোগ রয়েছে বলেও দাবি করেছেন তদন্তকারীরা। ফলে, প্রতারণা চক্রের টাকা সরাসরি অথবা সেই টাকায় কেনা কোনও দ্রব্য প্রভাবশালীদের কাছে পৌঁছেছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখতে চায় ইডি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy