প্রতীকী ছবি।
বিধানসভা নির্বাচনে শোচনীয় ফলাফলের কয়েক মাসের মধ্যে কলকাতা পুরসভার ভোটে টিকিটের জন্য বিক্ষোভ, আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনা ঘটেছিল কংগ্রেসে। এ বার রাজ্যে যুব কংগ্রেসের সভাপতি পদের প্রত্যাশী হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন নয় নয় করে ১১ জন! দলের ভাঙা বাজারেও ভোটের টিকিট বা সংগঠনের পদের জন্য লাইন দেখে বিস্মিত কংগ্রেসের অনেকেই। তবে বহু প্রার্থী থাকলেও যুব কংগ্রেসের নির্বাচন মানেই যে ‘ট্রেডমার্ক’ হাঙ্গামা-মারামারি, সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা এ বার আর নেই। কারণ, নিয়ম বদলে যুব কংগ্রেস এ বার চলে যাচ্ছে অনলাইন ব্যালটের ভোটে।
যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় নেতৃত্বের বেঁধে দেওয়া রূপরেখা অনুযায়ী প্রদেশ যুব সভাপতি পদের জন্য মনোনয়ন-পর্ব সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। কংগ্রেসের সাবেক নিয়মে যুব সভাপতি পদের জন্য যাঁরা প্রথম সারির প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তাঁদের পিছনে ‘দাদা’ হিসেবে কোনও না কোনও প্রদেশ নেতার হাত থাকে। গত বার যেমন তৎকালীন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের পুত্র রোহন মিত্রকে যুব সভাপতি নির্বাচনে হারিয়ে দিয়েছিলেন শাদাব খান, যাঁকে অধীর চৌধুরীর ‘পছন্দের প্রার্থী’ বলেই ধরা হয়েছিল। অধীরবাবু যদিও বলেছিলেন, দুই প্রার্থীই তাঁর কাছে ‘শুভেচ্ছা ও আশীর্বাদ’ চেয়েছিলেন। প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক কালে শাদাবই প্রথম যুব কংগ্রেস সভাপতি, যিনি দল না বদলে পুরো মেয়াদ কাটালেন! তবে তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য হল, এ বারের মনোনয়ন জমা দেওয়া প্রার্থীদের মধ্যে অন্তত তিন জন আছেন, যাঁরা অধীর শিবিরের বলেই কংগ্রেস রাজনীতিতে পরিচিত!
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরবাবুর নিজের জেলা মুর্শিদাবাদ থেকে যুব সভাপতি পদের জন্য মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ফরাক্কার মহম্মদ আসিফ ইকবাল। তালিকায় আছেন ছাত্র পরিষদের এখনকার রাজ্য সভাপতি সৌরভ প্রসাদ। ছাত্র পরিষদে তাঁর পদপ্রাপ্তি, তাঁর গতিবধি সব অধীরবাবুকে ঘিরেই। আবার যুব সভাপতি পদে দাঁড়িয়েছেন প্রদেশ সভাপতির শিবিরের শাহিনা জাভেদও। প্রদেশ সভাপতির অনুমোদনেই শাহিনা কলকাতার পুরভোটে প্রার্থী ছিলেন, তাঁর ওয়ার্ডে সভাপতি প্রচারেও গিয়েছিলেন।
অন্য দিকে, সোমেনবাবুর আমলে রোহন-অনুগামী বলে পরিচিত, কলকাতা জেলা ছাত্র পরিষদের প্রাক্তন সভাপতি অর্ঘ্য গণ এ বার যুব সভাপতি পদের জন্য দৌড়ে আছেন এবং তাঁর পিছনে প্রদীপ ভট্টাচার্য, শুভঙ্কর সরকারদের ‘শুভেচ্ছা’ আছে বলে কংগ্রেস সূত্রের খবর। শেষ পর্যন্ত যিনিই দৌড়ে জয়ী হন, এ বার চূড়ান্ত ঘোষণা হবে দিল্লি থেকে। অরিন্দম ভট্টাচার্য, মৌসম নূর বা শাদাব— গত কয়েক বারে যিনিই যুব সভাপতি হয়েছেন, সংঘর্ষের জেরে উত্তপ্ত হয়েছে নির্বাচন। এ বারের নিয়মই সম্পূর্ণ আলাদা। আগামী ২৫ মে থেকে ৫০ টাকা দিয়ে যুব কংগ্রেসের সদস্যপদ নথিভুক্ত করা শুরু হবে। তখনই এক এক জন সদস্য যুব কংগ্রেসের চারটি পদের জন্য অনলাইন ব্যালটে ভোট দেবেন— প্রদেশ যুব সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, জেলা সভাপতি ও বিধানসভা কেন্দ্রের সভাপতি। যুব কংগ্রেসের সভাপতি পদে পরাজিত প্রার্থীদের সংগঠনের সহ-সভাপতি করা হয়।
এ বার নিয়ম করা হয়েছে, সভাপতি পদে অনলাইনে ভোট পাওয়ার নিরিখে প্রথম তিন জনকে দিল্লিতে ডেকে সর্বভারতীয় নেতৃত্ব ইন্টারভিউ নেবেন। তার পরেই চূড়ান্ত হবে যুব সভাপতির নাম।
প্রদেশ কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, ‘‘সংগঠনের ভোটে মারামারির দিন শেষ! এখন আন্দোলনে কে কতটা গতি আনবেন, দেখতে হবে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy