মায়ের সঙ্গে ধান কাটতে ব্যস্ত একাদশ শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়া পরভিন। নিজস্ব চিত্র
মাঠে সোনা রঙের ধানই শেষ পর্যন্ত সাদিয়া পরভিনের পথ আটকাল। বৃহস্পতিবার আর স্কুলে যাওয়া হল না তার। জলপাইগুড়ির সুনীতিবালা সদর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী পরভিন মাঠে নেমে মায়ের সঙ্গে হাত লাগাল ধান কাটায়। না হলে হাতি ঢুকে নষ্ট করে দিতে পারে পাকা ধান। একই কারণে স্কুলে যাওয়া হয়নি ভাস্কর বর্মণেরও। জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের কোনপাকড়ি বিবেকানন্দ হাই স্কুলের ছাত্র ভাস্করেরও দিনটা কেটেছে মাঠেই।
অগ্রহায়ণ শুরু হয়েছে। নতুন আমন ধান কেটে গোলায় তোলার এটাই সময়। আর সেই সঙ্গে জলপাইগুড়ি জেলা জুড়ে শুরু হয় নবান্ন উৎসব। নতুন অন্নের এই উৎসবে যোগ দেন সব সম্প্রদায়ের মানুষ। এ দিনও তিস্তা পাড়ে এই উৎসবে শামিল হয়েছেন হিন্দু, মুসলমান ধর্মের মানুষজন। সাদিয়া বা ভাস্করের অবশ্য উৎসবের ভাবনা পরে। আগে তাদের মাঠের ধান বাঁচানোর লড়াই। তা-ও হাতিদের থেকে। সাদিয়া এ দিন সকাল থেকেই মা অঞ্জু বেগমের সঙ্গে বাড়ি লাগোয়া জমিতে ধান কাটার কাজ করছিল। সে বলে, ‘‘বুধবার স্কুলে গিয়েছিলাম। ধান পেকে গিয়েছে। দিন কয়েক আগে শহরে দু’টি হাতি ঢুকে পড়েছিল। তাই ভয় হচ্ছে, এ দিকেও যদি হাতি চলে আসে। ধান কাটার জন্যই আর স্কুলে যাওয়া হল না।’’
করোনা আবহে দেড় বছর বন্ধ থাকার পরে মঙ্গলবার থেকে রাজ্যে সর্বত্র স্কুল খুলেছে। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হয়েছে। সরকারি তথ্য জানাচ্ছে, প্রথম দিনের থেকে দ্বিতীয় দিন হাজিরা কিছুটা হলেও কম। তৃতীয় দিনে অনেক ক্ষেত্রেই পড়ুয়ার অভাব দেখা গিয়েছে। যারা এ দিন স্কুলমুখো হয়নি, তাদের মধ্যে অনেকেই সাদিয়াদের মতো মাঠে ধান কেটেছে। ময়নাগুড়ি রথেরহাট হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফণীন্দ্রনাথ পাল বলেন, ‘‘প্রতি বছরই ধান কাটার মরসুমে স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি কম থাকে। স্কুল খুললেও বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীরাই এখন ধান কাটার কাজে ব্যস্ত। তাই স্কুলে এ দিন হাতে গোনা কয়েক জন পড়ুয়া উপস্থিত ছিল।’’
14
ইয়াস ফিরিয়েছে হারিয়ে যাওয়া দেশি মাছ
আরিফ ইকবাল খান
হলদিয়া
n বাজারে বেশি করে দেখা মিলছে হারিয়ে যাওয়া দেশি মাছের। নিজস্ব চিত্র
ডুবিয়েছে মৎস্যজীবীদের। উপকূলের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ কয়েক কোটি টাকার মাছ চাষিদের হাতের বাইরে করে দিয়েছে। পুকুর উপচে চাষ করা মাছ পালিয়েছে। আবার সেই ‘ইয়াস’ই ফিরিয়ে এনেছে হারিয়ে যাওয়া, হারাতে বসা বহু দেশি মাছ। সেই মাছ অঢেল পাতে পেয়ে খুশি মৎস্যপ্রেমীরা। মৎস্যজীবীরাও।
কোন পথে ফিরেছে হারানো মাছেরা? ‘ইয়াস’-এ নদীর জল ঢুকেছে বিভিন্ন জলাভূমিতে। বেশ কিছু জায়গায় জল জমে থেকেছে দীর্ঘদিন। তাতেই নানা দেশি মাছের প্রজনন বেড়েছে বহুগুণ। বাজারে এর সুফল আসতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন গবেষকেরা।
কেন্দ্রীয় সরকারের সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অব ফিশারিজ এডুকেশনের মুখ্য মৎস্যবিজ্ঞানী বিজয়কালী মহাপাত্র বলছেন, ‘‘সুন্দরবন থেকে শুরু করে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মীনদ্বীপে খোঁজ নিয়ে দেখেছি, বহু হারিয়ে যাওয়া মাছ আসতে শুরু করেছে। এই বিষয়টি মাথায় রেখে নতুন করেই আমরা চণ্ডীপুরে একটি সংস্থার সহযোগিতায় হারিয়ে যাওয়া বাংলার দেশীয় মাছের একটি প্রজনন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করার উদ্যোগ করেছি। কাজ শুরু হয়েছে।’’
মৎস্যবিজ্ঞানী জানান, বাজারে প্রচুর পরিমাণে সোনা ট্যাংরা, মিঠা ট্যাংরা, খয়রা, বেলে, পায়রা চাঁদা, মুক্তোগাছা, বক মাছ, পাঁকাল মাছ পাওয়া যাচ্ছে। এই সব মাছের প্রজননের জন্য দরকার জমা জল। ‘ইয়াস’-এ জমা জলের এলাকা বেড়ে যাওয়ায় কোথাও দশগুণ বেশি প্রজনন হচ্ছে। মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের সূত্র অনুযায়ী, সুন্দরবনের খাঁড়িতেও মাছ বেড়েছে। একটি সমীক্ষা করা হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের প্রতাপদিঘি-সহ আশেপাশের এলাকায়। সেখানেও ইতিবাচক চিত্র পেয়েছেন গবেষকেরা।
‘ইয়াস’-এর ফলে চলে এসেছে বিভিন্ন ধরনের মাছও। হলদিয়া মহকুমার মীনদ্বীপে রয়েছে কয়েক হাজার ফিশারি। ঘূর্ণিঝড়ে জলভাসি হয়েছিল নয়াচর। ভেসে গিয়েছিল পুকুরের মাছ। কিন্তু জল সরতে চাষিরা দেখেন, তাঁদের মাছ চাষের পুকুর ভরেছে চিতল, গুড় চাকলি, ভেটকি, গলদা চিংড়িতে। এগুলো তাঁরা চাষ করেননি। মীনদ্বীপের বিভিন্ন মৎস্য সমবায়ের মাছ চাষিরা জানান, ইয়াসের ফলে দ্বীপের পুকুরে মিলছে বড় চিতল, ট্যাংরা। এগুলো নদী থেকে এসেছে বলে অনুমান। মৎস্যজীবীরা জানান, এই দ্বীপের দক্ষিণ দিকের পাড় ভাঙছে। এই পাড় বরাবর মিলছে প্রচুর সামুদ্রিক কাঁকড়া। একটা কাঁকড়া ধরলেই প্রায় ১০০ টাকা করে মেলে। হলদি নদীর ধারে নিত্যদিন জলপথে নয়াচর থেকে মাছ এনে বিক্রি করেন স্বপন মণ্ডল। স্বপন বলেন, ‘‘নয়াচরের পুকুরগুলোয় ভেটকি, চিতল পাওয়া যাচ্ছে।’’ ভগবানপুরের অসীম মাইতি বলেন, ‘‘জলা জমিতে অনেক পাঁকাল দেখা যাচ্ছে। আগে ভাবা যেত না।’’
তবে ইয়াস স্থায়ী ক্ষতিও করেছে। হলদিয়া ব্লকের মৎস্য সম্প্রসারণ আধিকারিক সুমন সাহুর দাবি, ‘‘লবণাক্ত জল ঢুকে উপকূলের বেশ কিছু পুকুরের চরিত্র নষ্ট করেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy