Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

শৌচালয় নেই, মাঠে বৃদ্ধকে মারল হাতি

বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলায় ভোরে শৌচকর্মে মাঠেঘাটে গিয়ে হাতির হানায় মৃতের সংখ্যা কম নয়। চিতরং গ্রামেও তেমন দু’টি ঘটনা ঘটেছে আগে।

অশোক সর্দার

অশোক সর্দার

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভ্র মিত্র
বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:৩৯
Share: Save:

কাগজে-কলমে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর ‘নির্মল’ ব্লক। অথচ, সে ব্লকেরই চিতরং গ্রামের বৃদ্ধ অশোক সর্দার (৬০) বাড়িতে শৌচাগার না থাকায় শনিবার ভোরে পাশের বাঁশঝাড়ে গিয়ে হাতির হানায় মারা পড়লেন। গ্রামবাসীদের ক্ষোভ, ‘মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্প’-তালিকায় চিতরঙের নাম বাদ পড়েছে। সে কথা মানছেন স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান। তবে ব্লক প্রশাসন বলছে, গ্রামের অন্তত ৪০ শতাংশ বাড়িতে শৌচাগার হয়েছে। বাকিদের বাড়িতে আগামী দিন সাতেকের মধ্যে শৌচাগার হয়ে যাবে। কিন্তু প্রশাসনের দাবির সত্যাসত্য নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিঁধছেন বিরোধীরা।

বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলায় ভোরে শৌচকর্মে মাঠেঘাটে গিয়ে হাতির হানায় মৃতের সংখ্যা কম নয়। চিতরং গ্রামেও তেমন দু’টি ঘটনা ঘটেছে আগে।
অশোকবাবুর ছেলে তিলক সর্দার জানান, তাঁদের বাড়িতে শৌচাগার নেই। ভোরে শৌচকর্ম সারতে বেরোন তাঁর বাবা। হাতি তাঁকে থেঁতলে দেয়। অশোকের আক্ষেপ, ‘‘বাড়িতে শৌচাগার থাকলে বাবাকে হারাতে হত না!’’

এ দিন ওই গ্রামে গিয়ে অধিকাংশ বাড়িতেই শৌচাগার দেখা যায়নি। অথচ, বিপিএল তালিকাভুক্ত বাড়িতে শৌচাগার নেই এমন বাসিন্দাদের একটি সমীক্ষা ২০১২ সালে করেছিল কেন্দ্র সরকার। বছর খানেক আগে সে সমীক্ষা অনুযায়ী, শৌচালয় তৈরির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে বলে দাবি করেছিল জেলা প্রশাসন। স্থানীয় বাঁকাদহ পঞ্চায়েতের প্রধান, তৃণমূলের বাসন্তী ঠাকুর অবশ্য বলছেন, ‘‘ওই সমীক্ষায় চিতরং গ্রাম বাদ পড়েছিল।’’ অথচ গ্রামবাসীদের জানান, তাঁদের অধিকাংশই দিনমজুরি বা জঙ্গল থেকে শালপাতা ও কাঠ কুড়িয়ে দিন চালান। সব মিলিয়ে পরিবারপিছু গড় মাসিক আয় তিন হাজার টাকা ছাড়ায় না।

কেন বাদ গেল চিতরং? প্রশাসনের দাবি, সফটওয়্যারের সমস্যায় নথিভুক্তির সময় বিষ্ণুপুর ব্লকে ৩,৮৯৮টি পরিবার বাদ পড়ে। বাঁকুড়া জেলায় সংখ্যাটা প্রায় ৮৩ হাজার। অতিরিক্ত জেলাশাসক (‌‌জেলা পরিষদ) শঙ্কর নস্কর জানাচ্ছেন, সমীক্ষার পরেও বাদ যাওয়া এবং তার বাইরে আবেদন করা মিলিয়ে প্রায় এক লক্ষ পরিবারের শৌচালয় বর্তমানে গড়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘কোনও গ্রাম বাদ পড়ার কথা নয়। কী ভাবে এমন হল খোঁজ নিচ্ছি।’’

বিডিও (বিষ্ণুপুর) স্নেহাশিস দত্তের দাবি, ‘‘চিতরং গ্রামে ২০০ পরিবারের মধ্যে ১২০ ঘরের শৌচালয় গড়া বাকি। নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে। সাত দিনেই শৌচাগার হয়ে যাবে।’’ জঙ্গল লাগোয়া গ্রামে শৌচাগার গড়ে দেয় বন দফতরও। এডিএফও (পাঞ্চেত) অনুপম খান বলেন, ‘‘বাঁকাদহ পঞ্চায়েতের অন্যত্র কিছু শৌচাগার হয়েছে। চিতরঙেও হবে।’’ পঞ্চায়েত প্রধানও বলেছেন, ‘‘একশো দিনের কাজের আয় এবং নিজ-শ্রমের মধ্য দিয়ে গ্রামবাসীদের শৌচালয় করে দেওয়া হবে।’’

কিন্তু ‘নির্মল’ জেলায় এখনও শৌচাগার গড়া বাকি কেন, সে প্রশ্ন তুলে বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকারের মন্তব্য, ‘‘এ রাজ্যে উন্নয়ন শুধু কাগজে-কলমে হচ্ছে।’’ পক্ষান্তরে, তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সংসদীয় সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরার দাবি, ‘‘নির্মল বাংলার যেটুকু কাজ বাকি রয়েছে, এখন সেটাই করা হচ্ছে। এটা একটা বিক্ষিপ্ত ঘটনা।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Elephants Bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy