পঞ্চায়েত ভোটের নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় বাহিনী। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য বৃহস্পতিবার নতুন করে আরও ৮০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। বুধবার আদালতের ‘ভর্ৎসনা’র পর কমিশনের এই পদক্ষেপ। এর আগে রাজ্যের ২২ জেলার জন্য ২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চাওয়া হয়েছিল। সুতরাং পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্যে মোট ৮২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে, তেমনটাই চাইছে কমিশন।
হাই কোর্ট কমিশনকে বুধবার নির্দেশ দিয়েছিল, ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে যে পরিমাণ কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল, অন্তত সেই সংখ্যক বা তার বেশি আধাসেনা এ বারের ভোটেও মোতায়েন করতে হবে। একই সঙ্গে আদালত বলেছিল, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই বাহিনী চেয়ে কেন্দ্রের কাছে আবেদন করতে হবে কমিশনকে। আদালতের সেই নির্দেশ মেনে বৃহস্পতিবার বিকেলের আগেই ৮০০ কোম্পানি বাহিনীর জন্য কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছে কমিশন।
বুধবার কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম তাঁর পর্যবেক্ষণে জানিয়েছিলেন, আদালতের কেন্দ্রীয় বাহিনী সংক্রান্ত নির্দেশ পালন করতে না চাইলে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজ্যপালের কাছে গিয়ে ইস্তফা দিতে পারেন। তার পরেই রাতে জানা যায়, রাজীবের যোগদান রিপোর্ট (জয়েনিং রিপোর্ট) ফেরত পাঠিয়েছেন রাজ্যপাল। প্রশ্ন ওঠে, এর পরেও কি কমিশনার পদে থাকতে পারবেন রাজীব সিংহ? বৃহস্পতিবার এই প্রসঙ্গে আলোচনার সময় বিচারপতি সিংহের প্রশ্ন, ‘‘নির্বাচন কি চলছে? কমিশনার কি পদে রয়েছেন? শুনলাম রাজ্যপাল জয়েনিং রিপোর্টের ফাইল ফেরত পাঠিয়েছেন।’’ কমিশনের আইনজীবী অবশ্য এ সব রটনা বলে উড়িয়ে দিয়ে জানান, কমিশনার তাঁর পদেই রয়েছেন।
অন্য দিকে, তৃণমূলের এক প্রার্থী বিদেশে থাকাকালীন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। সেই মামলাতেও কমিশনকে ভর্ৎসনা করেছে হাই কোর্ট। মামলাকারী জানান, তৃণমূলের গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রার্থী মহিরুদ্দিন গাজি হজযাত্রার জন্য বিদেশে গিয়েছেন গত ৪ জুন। ভারত সরকারের হজ কমিটির তালিকায় তাঁর নাম রয়েছে। কবে গিয়েছেন, কবে ফিরবেন— সব সেখানে লেখা রয়েছে। অথচ তিনি বিদেশে থাকা সত্ত্বেও তাঁর মনোনয়নপত্র জমা নিয়েছেন রিটার্নিং অফিসার। প্রশ্ন উঠেছে, কী ভাবে এই মনোনয়নপত্র গৃহীত হল? এ প্রসঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পর্বে অশান্তি ও বিরোধীদের অভিযোগের সূত্র ধরে বিচারপতি সিংহের মন্তব্য, ‘‘পরিস্থিতিটা এক বার দেখুন। এক দল মনোনয়ন দিতে গিয়ে বাধা পাচ্ছে, মার খাচ্ছে। আর এক দল বিদেশে বসে মনোনয়ন দিচ্ছে।’’
পঞ্চায়েতে নির্বাচনী নথি বিকৃতির অভিযোগে বুধবার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি সিংহ। তিনি ৭ জুলাই তদন্তের রিপোর্ট আদালতে পেশ করতে বলেছিলেন সিবিআইকে। তার আগে বৃহস্পতিবার সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য সরকার এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশন ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়। বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিচারপতি অপূর্ব সিংহ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চে শুক্রবার সেই মামলারও শুনানি রয়েছে।
কত কেন্দ্রীয় বাহিনী
১৫ জুন হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়েই পঞ্চায়েত ভোট করাতে হবে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রের কাছে বাহিনী চাইতেও বলেছিল আদালত। পরে কমিশন জানায় ২২ জেলার জন্য তারা ২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে কেন্দ্রকে চিঠি পাঠিয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, প্রতি জেলার জন্য এক কোম্পানি করে গোটা রাজ্যের জন্য মোট ২২ কোম্পানি আধাসেনা থাকা আর না থাকা সমান। বিরোধীদের সেই বক্তব্যের সারবত্তা আছে বলেই মত দেন প্রধান বিচারপতি। তাঁর নির্দেশ ছিল, ২০১৩ সালে যত সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল, তার সমান বা তার চেয়ে বেশি বাহিনী দিয়ে এ বছরের ভোট হবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কমিশনকে বাহিনী চেয়ে কেন্দ্রকে চিঠি দিতে হবে। আদালতের নির্দেশ মেনে বৃহস্পতিবার আরও ৮০০ কোম্পানি বাহিনী চেয়ে পাঠিয়েছে কমিশন। তারা জানিয়েছে, মোট ৮২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী পঞ্চায়েত ভোটের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য ধাপে ধাপে রাজ্যে আসবে।
গলদ কোথায়
কমিশন কেন্দ্রের কাছে ৮০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়েছে শুনে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছেন, আদালতের নির্দেশ ঠিক মতো মানা হয়নি। এতে অনেক গলদ রয়েছে। কোথায় গলদ, তা দেখিয়ে দিতে শুভেন্দুরা আবার আদালতে যাবেন বলে জানিয়েছেন। বিরোধীদের যুক্তি, ২০১৩ সালের থেকে এ বছর বুথ সংখ্যা অনেক বেশি, ভোটার সংখ্যাও বেশি। আদালত বলেছিল, কেন্দ্রীয় বাহিনীর নজরদারিতে পঞ্চায়েত ভোটের সমস্ত বুথ, সমস্ত সেক্টর, থানা, কুইক রেসপন্স টিম, সমস্ত স্পর্শকাতর এলাকা রাখতে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে স্রেফ ৮২২ কোম্পানি বাহিনীতে তা সম্ভব নয়। শুভেন্দু এ-ও জানান, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর রাজ্যের ভোটগ্রহণের পরিবেশ আরও খারাপ হয়েছে। তাই পঞ্চায়েত ভোটে আরও কেন্দ্রীয় প্রয়োজন।
বিচারপতি সিংহের ভর্ৎসনা
বুধবারের পর বৃহস্পতিবারও হাই কোর্টে বিচারপতি সিংহের ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয়েছে নির্বাচন কমিশনকে। ভাঙড়ের প্রার্থীদের নাম কমিশনের ওয়েবসাইটে না থাকা নিয়ে মামলায় প্রথমে বিচারপতি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘নির্বাচন কি চলছে? কমিশনার কি পদে রয়েছেন?’’ পরে আর একটি মামলায় বিদেশে বসে তৃণমূল প্রার্থী কী ভাবে মনোনয়ন পত্র জমা দিলেন, সেই প্রশ্ন তুলে কমিশনকে ভর্ৎসনা করেছেন বিচারপতি। হজ করতে বিদেশ গিয়েছেন মহিরুদ্দিন গাজি। তা সত্ত্বেও তাঁর মনোনয়ন জমা পড়েছে। প্রার্থীর অনুপস্থিতিতে তাঁর নির্বাচনী প্রস্তাবকও যদি মনোনয়ন জমা দিয়ে থাকেন, তবে প্রার্থীর স্বাক্ষর প্রয়োজন। ভোট ঘোষণার আগেই মহিরুদ্দিন বিদেশ গিয়েছিলেন। সেখান থেকে তিনি কী ভাবে স্বাক্ষর করলেন, প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি। কমিশনকে মনোনয়ন জমা দেওয়ার নিয়ম জানিয়ে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে অভিবাসন ব্যুরোকেও এই মামলায় যুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ডিভিশন বেঞ্চে কমিশন
বুধবার পঞ্চায়েত ভোটের একটি মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি সিংহ। রাজ্য সরকারের এক কর্মচারীর (বিডিও) বিরুদ্ধে নির্বাচনী নথি বিকৃতির অভিযোগ তুলে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন দুই প্রার্থী। সিবিআইকে বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে বলেন বিচারপতি। ৭ জুলাই তদন্তের রিপোর্ট আদালতে পেশ করতেও বলেন। বৃহস্পতিবার সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য সরকার এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশন ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছে। রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এই মামলায় দ্রুত শুনানির আর্জি জানান। শুক্রবার মামলার শুনানি হবে বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিচারপতি অপূর্ব সিংহ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy