জাতীয় নির্বাচন কমিশন। —ফাইল চিত্র।
ভুয়ো এবং মৃত ভোটারদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার ব্যাপারে কড়া বার্তা পাঠাল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। সূত্রের খবর, সম্প্রতি কমিশন লক্ষ্য করেছে যে, এ রাজ্যের ভোটার তালিকায় এক নাম-পদবির (বানান ভিন্ন) একাধিক কার্ড (ডেমোগ্রাফিক সিমিলার এন্ট্রি বা ডিএসই) রয়েছে। আবার এমন একাধিক ভোটারও রয়েছেন, যাঁদের ছবি কার্যত এক (ফটো সিমিলার এন্ট্রি বা পিএসই)। প্রাথমিক ভাবে দেখা গিয়েছে, তাঁরা একই ব্যক্তি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন ভোটারেরা চাইলেই একাধিক ভোট দিতে পারেন। তাৎপর্যপূর্ণ, এমন কার্ডের নিরিখে সব জেলাগুলির মধ্যে শীর্ষে রয়েছে দুই ২৪ পরগনা। সেই নামগুলি বাদ দেওয়ার ব্যাপারে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর এবং জেলাশাসকদের বলা হয়েছে বলে খবর।
কমিশন সূত্রের দাবি, কৃত্রিম মেধা প্রযুক্তি (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) চিহ্নিত করে এই ধরনের কার্ড। তবে সেগুলির মধ্যে সবই বা বেশির ভাগ ভুয়ো তা হয়তো বলা যায় না। এক কর্তার কথায়, “এমন হতেই পারে, কার্ডধারীর একই নাম এবং বাবার নামেও মিল রয়েছে। তেমন ক্ষেত্রে সরাসরি গিয়ে আধিকারিকেরা সংশ্লিষ্টের কার্ড যাচাই করেন। যদি ভুল ধরা পড়ে, তখন সংশ্লিষ্টকে বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়, তিনি কোন এলাকার কার্ড রাখতে চান। অন্যটা বা অন্যগুলো বাদ হবে। এই ব্যাপারে জেলা প্রশাসনগুলিকে ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে।” প্রসঙ্গত, ৫ জানুয়ারি সংশোধিত এবং চূড়ান্ত যে
তালিকা প্রকাশ করবে কমিশন, তার ভিত্তিতেই আগামী বছর লোকসভা ভোট হবে।
তার আগে ভোটার কার্ড সংক্রান্ত জেলাভিত্তিক তথ্যও কমিশন সংশ্লিষ্ট সকলকে পাঠিয়ে দিয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ডিএসই ভোটার কার্ডের সংখ্যা রাজ্যে ৪১ হাজার ৬৫১টি। অর্থাৎ, এই সব কার্ডে একই ব্যক্তির ভিন্ন বা বদল করা নাম রয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ, ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ চললেও, এখনও পর্যন্ত এমন ভোটারদের পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়নি। বরং উল্লিখিত সংখ্যার প্রায় অর্ধেকই তালিকায় থেকে গিয়েছে। এমন কার্ডের অস্তিত্ব সব থেকে বেশি দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। সব থেকে কম কালিম্পঙে। কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এমন ভোটারদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার মতো পদক্ষেপ করতে (প্রশাসনিক ব্যাখ্যায় আনপ্রসেসড) সংশ্লিষ্ট জেলাগুলি বেশ পিছিয়েই রয়েছে (সবিস্তার সারণিতে)।
একটি জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “এমন ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনও নামে একাধিক ভোটার কার্ড থাকতে পারে। তবে নামের বানানে পার্থক্য থাকে। কমিশন লক্ষ্য করেছে, নামের বানান ভিন্ন হলেও ভোটার এক জনই। ফলে তাঁর পক্ষে একাধিক ভোট বা একাধিক জায়গায় ভোট দেওয়ার সুযোগ থেকে যায়।”
পিএসই-র সংখ্যাও নেহাত কম নয়। রাজ্যে এমন ভোটারের সংখ্যা প্রায় ১.৭২ লক্ষ। প্রশাসনিক ব্যাখ্যায়, এমন কার্ডের ক্ষেত্রে একই ব্যক্তির ছবি ভিন্ন হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের অনেকের মতে, কমিশনের তথ্য অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত এমন কার্ডের অস্তিত্ব থেকে গিয়েছে (আনপ্রসেসড) সর্বাধিক সংখ্যায়। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, ডিএসই-এর মতো এই ক্ষেত্রেও সংখ্যার নিরিখে সবচেয়ে উপরে রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা। তার পরেই রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা (সবিস্তার সারণিতে)। এমন ভোটারের সংখ্যা সবচেয়ে কম কালিম্পঙেই। এক জেলা-কর্তার কথায়, “কারও একটি কার্ডে দাড়ি-গোঁফ সমেত ছবি থাকলে অপর কার্ডে সেগুলি ছাড়া মুখের ছবি থাকতে পারে। অথচ ব্যক্তি এক জনই। এমন ভোটারের পক্ষেও একাধিক ভোট বা একাধিক জায়গায় ভোট দেওয়া অসম্ভব কিছু নয়।”
সম্প্রতি কমিশন সিইও কার্যালয় এবং জেলা-কর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে, উন্নত মানের ছবি থাকতে হবে ভোটার তালিকায়। যে ছবিগুলি খারাপ অর্থাৎ, তা দেখে ঠিক করে কাউকে চেনা যায় না, তেমন ছবিগুলির জায়গায় স্পষ্ট ছবি থাকতে হবে। এ ব্যাপারে বুথ লেভেল অফিসার বা বিএলও-দের বাড়তি দায়িত্ব দেওয়ার বার্তা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে, ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে সংশ্লিষ্টের মোবাইল নম্বর সংগ্রহের নির্দেশও দিয়েছে কমিশন। তাতে ভোটার কার্ড সহজে ‘ডাউনলোড’ করতে পারবেন ভোটার।
প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ইতিমধ্যেই ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে বিরোধীরা বিস্তর অভিযোগ করেছেন কমিশনের কাছে। ভুয়ো এবং মৃত ভোটারদের চিহ্নিত করে তালিকা থেকে তা বাদ দেওয়ার দাবি তুলেছেন তাঁরা। কমিশনও লক্ষ্য করেছে, এমন অনেক ভোটার রয়েছেন, যাঁদের একাধিক কেন্দ্রে নাম রয়েছে। এমনও ভোটার রয়েছেন, যাঁরা বৈবাহিক সূত্রে এক বিধানসভা কেন্দ্র থেকে অন্য বিধানসভা কেন্দ্রের বাসিন্দা হয়েছেন। অথচ আগের কেন্দ্রে নাম বাদ যায়নি। সূত্রের দাবি, এমন ঘটনাগুলি চিহ্নিত করে তা ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার নির্দেশ শুরু থেকে দিয়ে আসছে কমিশন। এ নিয়ে প্রায় নিয়মিত প্রতিটি জেলাশাসকের সঙ্গে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বৈঠক করতে হচ্ছে সিইও অফিসকে।
ইতিমধ্যেই ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ খতিয়ে দেখতে দিল্লির নির্বাচন সদন থেকে আধিকারিকদের পাঠানো হয়েছে রাজ্যে। ফলে তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়ার উপর অতিরিক্ত জোর দেওয়া হয়েছে বলে পর্যবেক্ষক শিবিরের ধারণা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy