শুধু উপাচার্য নিয়োগই নয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) কাজে লাগিয়ে কী ভাবে রাজ্যের নির্বাচিত সরকারের অধিকার কেড়ে নিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করা যায়, তার ‘চোরাগোপ্তা সনদ’ তৈরি করা হয়েছে বলে বিধানসভায় সরব হলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। সেই সঙ্গেই রাজ্যের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য, রাজ্যপালের উদ্দেশে তাঁর তোপ, ‘‘রাজভবনে বসে কর্কশ বেহালা বাজাচ্ছেন! এটা এ বার বন্ধ করুন।’’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ-সহ আরও কিছু বিষয়ে ইউজিসি যে খসড়া বিধি এনেছে, তা সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবিতে বৃহস্পতিবার সরকারি প্রস্তাব হয়েছে বিধানসভার অধিবেশনে। ওই খসড়া বিধির বিরোধিতায় আগেই সরব হয়েছে রাজ্য সরকার। শিক্ষা দফতরের গঠিত পর্যালোচনা কমিটি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তাদের সুপারিশও জমা দিয়েছে। অ-বিজেপি সরকার রয়েছে, এমন ৬টি রাজ্যে বিধানসভায় প্রস্তাব পাশ করা হয়েছে ইউজিসি-র ওই খসড়া বাতিলের দাবিতে। সেই পথেই এ বার হেঁটে প্রস্তাব এনেছে তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার। প্রস্তাবের উপরে আলোচনায় বিরোধী দল বিজেপি অবশ্য এ দিন উপস্থিত ছিল না। শাসক দলের তরফে তরুণ মাইতি এবং রফিকুল ইসলাম মণ্ডল ওই আলোচনায় অংশগ্রহণ করে দাবি করেছেন, শিক্ষা যুগ্ম তালিকাভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও রাজ্যের অধিকার খর্ব করতে চাইছে কেন্দ্রের সরকার। জবাবি বক্তৃতায় শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্যেরও বক্তব্য, ‘‘বহুত্ববাদ, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ধ্বংস করা হচ্ছে। নির্বাচিত রাজ্য সরকার এবং তার মুখ্যমন্ত্রীর অধিকার কী ভাবে খর্ব করা যায়, সেটাই ইউজিসি-র এই বিধির মূল কথা। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা, তার খরচের সংস্থান করবে রাজ্য কিন্তু উপাচার্য ঠিক করে দেবেন বাইরে থেকে আসা লোকজন!’’
এই সূত্রেই এ রাজ্যের রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসকে এ দিন তীব্র আক্রমণ করেছেন ব্রাত্য। শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য, রাজ্যের ৩৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য মোট ৯৯ জন সম্ভাব্য উপাচার্যের নামের তালিকা মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে রাজভবনে পাঠানো আছে। রাজ্যপাল এখনও পর্যন্ত ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইলে সই করেছেন। তাঁর প্রশ্ন, এই ৯৯টা নামের মধ্যে ৩৩টা বেছে নিতে ৫৬ দিন পেরিয়ে যাচ্ছে কেন? সুপ্রিম কোর্টের মামলায় রাজ্যপালের তরফে বারবার সময় চাওয়া হচ্ছে আর পড়াশোনা বিপর্যস্ত হচ্ছে। নাট্যকার-শিক্ষামন্ত্রীর কথায়, ‘‘আমরা পড়েছি, রোম নগরী যখন পুড়ছিল, সম্রাট নিরো বেহালা বাজাচ্ছিলেন। সাংবিধানিক অধিকার এখন ধ্বংস হচ্ছে। রাজভবনে বসে কর্কশ বেহালা বাজাচ্ছেন! এটা বন্ধ করুন।’’ কেন্দ্র ও তার প্রতিনিধি রাজ্যপালকে বিঁধে প্রস্তাব পাশ করাতে গিয়ে বক্তব্যের শেষে শিক্ষামন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘কোথায় চলেছো প্রভু! এ বার থামো!’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)