Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Vice Chancellor Row

‘পুতুল খেলছেন, ডাহা মিথ্যা বলছেন, সংবিধান-বহির্ভূত কাজ’, রাজ্যপালকে আবার আক্রমণ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্যের

রাজ্যপাল তথা রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে আবার আক্রমণ শানালেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। রাজ্যপাল সংবিধান বহির্ভূত বক্তৃতা করেছেন বলে সরব হলেন শিক্ষামন্ত্রী।

photo of CV Ananda Bose  and Bratya Bose

রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস এবং শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৮:১১
Share: Save:

রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজ্যপালের সংঘাত আরও বাড়ল। বৃহস্পতিবার রাজ্যপাল তথা রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য সিভি আনন্দ বোসের ভিডিয়োবার্তার পাল্টা শুক্রবার সরব হলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির রেজিস্ট্রারদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিক বৈঠকে ব্রাত্য বলেন, ‘‘রাজ্যপাল সংবিধান-বহির্ভূত বক্তৃতা করেছেন। রাজ্যপাল কি আদৌ রাজ্যবাসীকে বার্তা দিতে পারেন?’’ রাজ্যপাল ‘পুতুলখেলা খেলছেন’ বলেও আক্রমণ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। পাশাপাশি, সরকার মনোনীত উপাচার্যদের নিয়োগ না-করা নিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের হেনস্থার যে অভিযোগ করেছিলেন আচার্য, তারও বিরুদ্ধেও সরব হলেন ব্রাত্য। বললেন, ‘‘জঘন্য অভিযোগ করে উপাচার্যদের সম্মানহানি করা হচ্ছে।’’ তাঁর নিয়োগ করা পাঁচ উপাচার্য হুমকি পেয়ে পদত্যাগ করেছেন বলে ভিডিয়োবার্তায় দাবি করেছিলেন রাজ্যপাল বোস। সেই অভিযোগ নিয়েও মুখ খুলেছেন শিক্ষামন্ত্রী। বললেন, ‘‘ডাহা মিথ্যা কথা বলছেন।’’ জানিয়েছেন, ওই পাঁচ উপাচার্যকে চিঠি পাঠিয়ে হুমকি দেওয়ার প্রমাণ চাওয়া হয়েছে। যা ঘিরে রাজ্যের শিক্ষা দফতরের সঙ্গে রাজভবনের দ্বন্দ্ব নতুন মাত্রা পেল।

শুক্রবার বিকাশ ভবনে ৩১ জন রেজিস্ট্রারকে বৈঠকে ডেকেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু মাত্র ১২ জন রেজিস্ট্রার বৈঠকে যোগ দেন। ব্রাত্যের অভিযোগ, রাজভবনের হুমকির ভয়েই বৈঠকে অনুপস্থিত রেজিস্ট্রাররা। ব্রাত্য বলেন, ‘‘শিক্ষাবিদদের মধ্যে হাড়হিম করা সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছেন কে? কে ভয় দেখাচ্ছে? রাজার বাড়ি না বিকাশ ভবন?’’ বিকাশ ভবন সূত্রে খবর, যে সব রেজিস্ট্রার বৈঠকে যোগ দেননি, তাঁদের শোকজ় করা হতে পারে।

রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে একের পর এক অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করেছেন রাজ্যপাল বোস। যা ঘিরে রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজ্যপালের সংঘাত তুঙ্গে। রাজ্যপালকে আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘যে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ওঁর (রাজ্যপাল) কথা শুনে চলবেন, তাঁদের জন্য আমি অর্থনৈতিক বাধা তৈরি করব। আমি দেখি, কী করে আপনি মাইনে দেন!’’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা এমনও বলেছেন যে, দরকারে তিনি নিজে রাজভবনের সামনে ধর্না দেবেন! এর পরই বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় রাজ্যপালের একটি ভিডিয়োবার্তা প্রকাশ করা হয়। ওই পাঁচ মিনিটের ওই ভিডিয়োবার্তায় উপাচার্য নিয়োগ ঘিরে বিতর্ক নিয়ে সরাসরি কিছু কথা বলেছেন। রাজ্যপাল বলেছেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলি সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করার জন্য চাই উপাচার্য। বাংলার শিক্ষা মন্ত্রক উপাচার্য নিয়োগ করেছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট তাদের নির্দেশের সমালোচনা করে সেই সিদ্ধান্তকে বেআইনি আখ্যা দেয়। সুপ্রিম কোর্ট সরকারকে বলে, ‘আপনারা ভুল পদক্ষেপ করেছেন। আপনাদের এই সিদ্ধান্ত শুধু বেআইনিই নয়, পুঁজিবাদী মানসিকতার পরিচায়ক।’ সুপ্রিম কোর্টের ওই নির্দেশের পরই সমস্ত উপাচার্যকে ইস্তফা দিতে হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে এক জন আচার্য হিসাবে আমি অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্য নিয়োগ করি। যা নিয়ে সমস্যার শুরু। ওই নিয়োগকে শিক্ষা মন্ত্রক বলেছিল ভুল। কিন্তু হাই কোর্ট জানিয়ে দেয়, আমিই ঠিক।’’ ওই ভিডিয়োবার্তায় রাজ্যপাল আরও বলেন, ‘‘আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন, কেন আমি সরকার মনোনীত উপাচার্যকে নিয়োগ করিনি। তার কারণ, সেই উপাচার্যদের কেউ ছিলেন দুর্নীতিগ্রস্ত, কেউ ছাত্রীকে হেনস্থা করেছেন, কেউ রাজনৈতিক খেলা খেলছেন। তা হলে বলুন, এমন উপাচার্য কি নিয়োগ করা উচিত হত? পাঁচ জন উপাচার্য পদত্যাগের পর আমাকে নিজে থেকে জানিয়েছিলেন, তাঁদের জীবনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রকের মদতে সরকারি অফিসার এবং মুখ্যমন্ত্রীর আইএএস কর্তারা তাঁদের উপর চাপ সৃষ্টি করছেন। তাঁদের আমি পদত্যাগ করতে বলিনি। তাঁরাই ভয় পেয়ে পদত্যাগ করেছিলেন।’’

রাজ্যপালের ওই ভিডিয়োবার্তার পাল্টা শুক্রবার মুখ খুললেন ব্রাত্য। রাজ্যপালকে কটাক্ষের সুরে ব্রাত্য বলেছেন, ‘‘ওঁর একই অঙ্গে দুই রূপ। এত নৈতিকতা, এত আইনের শাসন মেনে চলার কথা বলেন, তিনি কি জানাবেন কোন আইন মেনে রাজ্য সরকারের বিরোধী বক্তব্য রাখতে পারেন? আচার্য নিজের ইচ্ছেমতো লোকজনকে বসাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁরা কি সব সন্দেহের ঊর্ধ্বে? পড়াশোনার সঙ্গে যুক্ত নন, এমন লোককেও উপাচার্য নিয়োগ করেছেন। ইউজিসির নির্দেশিকায় তেমনটা নেই। ইউজিসি অমান্য করছেন, আদালতকে অমান্য করছেন, মুখ্যমন্ত্রীকে অগ্রাহ্য করছেনই। আইন দিয়ে গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। পুতুলখেলা খেলছেন। সম্পূর্ণ বেআইনি।’’ সরকার মনোনীত উপাচার্যদের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ করেছেন রাজ্যপাল বোস, সেই প্রসঙ্গে ব্রাত্য বলেন, ‘‘জঘন্য অভিযোগ করে উপাচার্যদের সম্মানহানি করা হয়েছে। ছাত্রী হেনস্থার মতো গুরুতর কথা বলেছেন। আইন অনুযায়ী কোনও ব্যবস্থা নিয়েছেন কি? উনি বিচারক, উনিই ফাঁসুড়ে। উপাচার্যদের গৌরবের সম্মানহানি করলেন। কী লাভ হল ওঁর জানি না। যাঁদের উনি নিয়োগ করছেন, তাঁরা ধোয়া তুলসীপাতা, বাকিরা সব খারাপ? অপমান করার প্রক্রিয়া শুরু হল।’’

অন্য দিকে, পাঁচ উপাচার্যের পদত্যাগ নিয়ে রাজ্যপাল যে অভিযোগ করেছেন, সেই প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘পাঁচ উপাচার্যকে নাকি হুমকি দেখিয়ে পদত্যাগ করানো হয়েছে। ডাহা মিথ্যা কথা বলছেন। এমন কোনও কাজ হয়নি। আমাদের দফতরের কেউ এমন করার কথা ভাবেনি। পাঁচ উপাচার্যকে চিঠি পাঠিয়ে জানতে চেয়েছি, কেউ কি হুমকি দিয়েছেন, তা প্রমাণ দিয়ে জানাল। আর যদি না পারেন তা হলে বুঝব মিথ্যার স্রোত অব্যাহত রয়েছে।’’

অতীতেও রাজ্যপালকে এই নিয়ে আক্রমণ করেছিলেন ব্রাত্য। বলেছিলেন। কখনও তিনি রাজ্যপালের সঙ্গে জেমস বন্ডের তুলনা টেনেছেন, আবার কখনও আচার্যকে ‘মত্ত হাতি’ বলেও কটাক্ষ করেছেন। গত ৩১ অগস্ট রাজ্যপাল জানিয়েছিলেন উপাচার্যহীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে প্রয়োজনে তিনি প্রশাসনিক দায়িত্ব সামলে নেবেন। সেই বক্তব্যকে কটাক্ষ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘এ তো মুড়ি আর চালভাজা এক হয়ে গেল।’’ রাজ্যপালকে আক্রমণ করতে গিয়ে বিদূষকের প্রসঙ্গও টেনেছিলেন ব্রাত্য। শুক্রবার মহম্মদ বিন তুঘলকের সঙ্গে তুলনা টেনেছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘আমার মনে হয়েছিল, এটা হয়তো সাময়িক খামখেয়ালিপনা। কিন্তু পুরো ব্যাপারটা যে তুঘলকীয়। ভেবেছিলাম আলাউদ্দিন খিলজির মতো হবে। তিনি যেমন মাঝেমাঝে মৃগয়ায় যেতেন। ভেবেছিলাম সে রকম হবে। এটা পুরোটাই যে মহম্মদ বন তুঘলকের মতো, বুঝতে পারিনি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

CV Ananda Bose Bratya Basu
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE