Advertisement
E-Paper

অর্থলগ্নি সংস্থার জমি ‘দখলে’ কি নেতার যোগ

আর্থিক প্রতারণায় অভিযুক্ত প্রয়াগ চিটফান্ডের কর্ণধার বাসুদেব বাগচী এবং তাঁর ছেলে অভীককে এখন ইডির হেফাজতে রয়েছেন। বাবা-ছেলেকে জেরা করে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরে প্রায় ১০০ কোটি টাকার বেশি বাজার মূল্যের জমি-বাড়ির নথি মেলে।

— প্রতীকী চিত্র।

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৭:৪২
Share
Save

বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার এক কর্ণধারের বিপুল জমি-বাড়ি ‘দখলে’ দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরে শাসক দলের এক নেতার যোগ খতিয়ে দেখছে ইডি। আর্থিক প্রতারণায় অভিযুক্ত প্রয়াগ চিটফান্ডের কর্ণধার বাসুদেব বাগচী এবং তাঁর ছেলে অভীককে এখন ইডির হেফাজতে রয়েছেন। বাবা-ছেলেকে জেরা করে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরে প্রায় ১০০ কোটি টাকার বেশি বাজার মূল্যের জমি-বাড়ির নথি মেলে। ইডির দাবি, সেই জমি-বাড়ি জেলা পরিষদের প্রাক্তন সদস্য শাসক দলের এক নেতার ‘দখলে’ চলে গিয়েছে বলে বাসুদেবের বয়ানে উঠে এসেছে।

তদন্তকারীদের দাবি, ওই নেতাকে আবার নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় সিবিআই এবং ইডি বেশ কয়েক বার তলব করেছে। বর্তমানে জেল হেফাজতে থাকা সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’র তিনি অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। সুজয়কৃষ্ণ এবং ওই প্রাক্তন জেলা পরিষদ সদস্যের মধ্যে কথাবার্তার তথ্যপ্রমাণও (ডিজিটাল এভিডেন্স) রয়েছে বলে ইডির দাবি। এবং তা আদালতে নথিতে পেশ করা হয়েছে। বিষ্ণুপুরে প্রয়াগের সেই জমি সুজয়কৃষ্ণের লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থার মাধ্যমে ‘দখল’ করা হতে পারে সন্দেহে ইডি তদন্ত শুরু করেছে। ইডির কর্তাদের বক্তব্য, প্রথমে নথি অনুযায়ী ওই সব জমি এখন কী অবস্থায় আছে, তাদের মালিকানার কিছু বদল হয়েছে কি না, তা বিষ্ণুপুর-২ ভূমি রাজস্ব দফতরে চিঠি দিয়ে জানতে চাওয়া হবে। তদন্তকারী এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘এখনও পর্যন্ত বাসুদেবের বয়ানে শাসক দলের নেতা, ওই প্রাক্তন জেলা পরিষদ সদস্যের নামই উঠে এসেছে। কিন্তু তিনি একার প্রভাবে ১০০ কোটি টাকার সম্পত্তি দখল করে রাখবেন, সেটা নিয়ে ধন্দ রয়েছে। তবে কোনও প্রভাবশালীরমাধ্যমে এটা হতেই পারে। তাই ভূমি রাজস্ব দফতরের নথি যাচাই করা জরুরি।’’ এর পরে জেলা পরিষদের ওই প্রাক্তন সদস্যকে তলব করা বা দরকারি পদক্ষেপ করা হবে বলে ইডি সূত্রের খবর।

তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রয়াগ সংস্থা ১৯৯৭ সাল থেকে মোটা সুদের টোপ দিয়ে এবং নানা প্রকল্পের মাধ্যমে আমানতকারীদের কাছ থেকে প্রায় ২৮০০ কোটি টাকা তুলেছিল। ১৯০০ কোটির বেশি টাকা তারা আমানতকারীদের ফেরত দেয়নি বলে অভিযোগ তদন্তকারীদের। সেই টাকার লোপাটের অভিযোগে ওই বাবা-ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়। ২০১৭ সালে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে প্রয়াগ চিটফান্ডের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করে সিবিআই। তখনই ওই মামলায় সংস্থার কর্ণধার বাসুদেবকে গ্রেফতার করা হয়। পরে জামিন পান বাসুদেব। তদন্ত শুরু করেছিল ইডিও। সেই তদন্ত সূত্রেই বাসুদেবদের তারা হেফাজতে নিয়েছে।

তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, বাসুদেব গ্রেফতার হওয়ার পরেই প্রয়াগের সম্পত্তি লুটপাট শুরু হয় আর শাসক দলের ওই নেতা সক্রিয় হয়ে আসরে নামেন। তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর-২ ব্লকের মৌখালী, কঙ্কনবেড়িয়া ও পাথরবেড়িয়া জয়চন্ডীপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ২০০৮ সালের পর থেকে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ বিঘা জমি কিনেছিল ওই সংস্থা। মূলত রাস্তার ধারে ওই সব জমি কেনা হয়। ২০০৯ সালের পর থেকেই শাসক দলের নেতা তথা দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের কোনও কোনও সদস্যের সঙ্গে বাসুদেবের মাখামাখির খবরও তদন্ত সূত্রে উঠে আসে।

তদন্তকারীদের সূত্রের খবর, তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় চিটফান্ডের ওই জমি, বাগানবাড়ি ব্যবসায়িক ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। জমি কেটে মাটি বিক্রি করে, পুকুর তৈরি করে মাছ চাষ করা হচ্ছে। পাশাপাশি রাস্তার পাশের জমি পাঁচিল দিয়ে ঘিরে নানা সংস্থাকে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় প্রাক্তন জেলা পরিষদ সদস্য, শাসক দলের ওই নেতা এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ কয়েক জন আইনজীবীও জড়িত বলে প্রাথমিক তদন্তে সূত্র পাওয়া গিয়েছে। এক তদন্তকারী বলেন, ‘‘বিষ্ণুপুর ২ ব্লকের ভূমি রাজস্ব দফতরে চিঠি দিয়ে প্রয়াগ চিটফান্ডের জমির বর্তমান অবস্থা জানাটা এখন জরুরি।’’ প্রয়াগের জমির সঙ্গে সুজয়কৃষ্ণের লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থার যোগ আছে কিনা, সেটাও ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Enforcement Directorate ED Bishnupur Political interference

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}