এ রাজ্যে জাল পাসপোর্ট এবং নাগরিকত্বের নথি তৈরির জাল কত দূর ছড়িয়েছে, তা জানতে উত্তর শহরতলির বিশরপাড়া থেকে ধৃত আজাদ মল্লিক ওরফে আহমেদ হোসেনকে জেরা করছে ইডি। গত মঙ্গলবার তাঁকে পাকড়াও করেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। সে দিন কলকাতার বেকবাগান এবং নদিয়ার গেদে-সহ আটটি জায়গায় তল্লাশিও হয়। ইডি সূত্রের খবর, তল্লাশিতে প্রাপ্ত নথি ও ১০টি মোবাইল ফোনের তথ্য যাচাই করে এই চক্র সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য মিলেছে। বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে এই চক্র ছড়িয়ে আছে। সেই চক্রের চাঁইয়েরা লক্ষ-লক্ষ টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের পাসপোর্ট এবং জাল নাগরিকত্ব পাইয়ে দিয়েছে। এই কারবার থেকে আয় হওয়া টাকা বিভিন্ন ব্যবসা এবং সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করা হয়েছে।
ইডি সূত্রের খবর, আজাদের অধীনে থাকা একাধিক দালালও আদতে বাংলাদেশি নাগরিক। বছর দশেক আগে থেকে তাদের নিয়ে আজাদ রীতিমতো ‘বাহিনী’ তৈরি করে এই ব্যবসা শুরু করে। বাংলাদেশেও একাধিক দালাল আছে আজাদের। সব মিলিয়েই এই চক্র পাকাপোক্ত ‘নেটওয়ার্ক’ গড়ে তুলেছে। তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, এই চক্র ধরে শুধু সাধারণ নাগরিক নয়, বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠনের সদস্যেরাও সীমান্ত টপকে এ দেশে ঢুকে বিভিন্ন পরিচয়পত্র হাতিয়ে নিয়েছে। এই কারবারে হাওয়ালা এবং বেআইনি ডিজিটাল লেনদেনের সূত্রও মিলেছে বলে তদন্তকারীদের একাংশ দাবি করেছে। সেই টাকা লেনদেনের সঙ্গে জঙ্গি সংস্রবও আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইডি-র এক কর্তার দাবি, ‘‘ওই ফোনগুলি থেকে কিছু সন্দেহজনক কথাবার্তা বা চ্যাট উদ্ধার হয়েছে। সেগুলি যাচাই করছেন তদন্তকারীরা।’’
তদন্তকারীদের দাবি, বাংলাদেশ থেকে এ-পারে আসার পরে মাথাপিছু এক থেকে দেড় লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন পরিচয়পত্র এবং মাস ছয়েকের থাকার ব্যবস্থা করা হত। তবে নাগরিকত্বের নথি ও পাসপোর্ট তৈরির জন্য আলাদা টাকা নেওয়া হত। জাল পাসপোর্ট তৈরির জন্য মাথাপিছু ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা ‘চার্জ’ ছিল। বহু বাংলাদেশি নাগরিক ওই ভারতীয় পাসপোর্ট ব্যবহার করে এ রাজ্য থেকে বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন বলেও তদন্তকারীদের দাবি। ইডি-র একাংশ বলছে, এই চক্রের সঙ্গে পূর্বাঞ্চলীয় পাসপোর্ট অফিসের একাধিক আধিকারিক, কর্মী এবং রাজ্য ও কলকাতা পুলিশের নিচুতলার যোগ মিলেছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)