পার্থ চট্টোপাধ্যায়
এসএসসি ‘দুর্নীতি-কাণ্ডে’ ধৃত পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে শুক্রবার দু’ঘণ্টা জেরা করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগে ‘দুর্নীতি’র অভিযোগের মামলায় বিচারক তাঁর জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়ার পর থেকে প্রেসিডেন্সি জেলে রয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ। শুক্রবার সকালে সেখানে গিয়েই তাঁর সঙ্গে কথা বলেন তদন্তকারীরা। পার্থের সঙ্গে ইডি আধিকারিকদের কী নিয়ে কথা হয়েছে, তাঁর কাছ থেকে কী জানতে চাওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট ভাবে কিছু জানা না গেলেও তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে দাবি, শুক্রবার তাঁকে সপ্রতিভই দেখিয়েছে। অন্তত দৃশ্যত।
গত ১৮ অগস্ট পার্থকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতার বিশেষ ইডি আদালতের বিচারক। তার পর থেকে প্রেসিডেন্সি জেলের ‘পহেলা বাইশ’ ওয়ার্ডের দু’নম্বর সেলের বাসিন্দা পার্থ। সূত্রের খবর, শুরুতে সহবন্দিদের থেকে ‘কয়েদি’ তকমা পেয়ে কার্যত ভেঙে পড়েছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী। কারারক্ষীদের একটি অসমর্থিত সূত্র মারফত খবর মিলেছিল, পার্থকে দেখলেই ‘চোর’, ‘লম্পট’, ‘চিটিংবাজ’, ‘দুশ্চরিত্র’ বলে কটাক্ষ করছেন অন্য বন্দিরা। যা শুনে প্রথম ক’দিন কার্যত বিধ্বস্ত ছিলেন তিনি। পাশাপাশিই, দলের সঙ্গে ‘দূরত্ব’ এবং সংবাদমাধ্যমে তাঁকে নিয়ে কাটাছেঁড়ার অভিঘাতে বেশ ‘বিচলিত’ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। কথা বলার লোক খুঁজছিলেন। ওই সূত্রের দাবি, সম্ভবত সেই কারণেই গরু পাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার পর কারারক্ষীদের কাছে পার্থ জানতে চেয়েছিলেন, বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা প্রেসিডেন্সি জেলেই আসছেন কি না। সেটা অবশ্য হয়নি। অনুব্রতকে পাঠানো হয়েছে আসানসোল সংশোধনাগারে। আপাতত সেখানেই আছেন তিনি।
এখন অবশ্য ইডি সূত্রের দাবি, পার্থের ওই মানসিক অবস্থা অনেকটা কেটে গিয়েছে। জেলের পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে কিছুটা সক্ষম হয়েছেন তিনি। তাঁর কথাবার্তা এবং চালচলনে তা স্পষ্ট। মানসিক ভাবে আগের চেয়ে সুস্থ আছেন বলে তার প্রভাব পার্থের শরীরেও পড়েছে। আগের চেয়ে শারীরিক ভাবেও সুস্থ আছেন তিনি। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার পার্থকে প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে জেরা করা হয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছে। এই গোটা সময়েই পার্থকে ‘শান্ত’ দেখিয়েছে। ধীরেসুস্থে ইডি আধিকারিকদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। ওই সূত্রের কথায়, ‘‘আট দিন ধরে জেলে রয়েছেন পার্থ। এই ক’দিনে জেলের পরিবেশের সঙ্গে খানিক মানিয়ে নিতে পেরেছেন উনি। পুরো বিষয়টা নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছেন। ’’
আগামী ৩১ অগস্ট পার্থের জেল হেফাজতের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ওই দিনই তাঁকে আবার বিশেষ ইডি আদালতে হাজির করানো হবে। তবে নিরাপত্তার কারণে সশরীরের নয়, ভার্চুয়ালি হাজির করানো হবে পার্থকে। সূত্রের খবর, তার আগে কিছু বিষয় পার্থের থেকে জানতে চাইছিলেন তদন্তকারীরা। ইডি সূত্রেই দাবি, তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই চোখ কপালে ওঠার মতো ‘দুর্নীতি’র টাকার অঙ্ক বাড়ছে। শুরুতে পার্থ ও তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ মডেল-অভিনেত্রী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের (অর্পিতাও এসএসসি ‘দুর্নীতি’ মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন এবং বর্তমানে আলিপুর মহিলা জেলে রয়েছেন) দু’টি সংস্থার (‘অপা ইউটিলিটি সার্ভিস’ এবং ‘অনন্ত টেক্সফ্যাব প্রাইভেট লিমিটেড’) ন’টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিস মিলেছিল। এখন তদন্তকারীদের আতশকাচের তলায় ১৩১টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট! ২০১৬ সালে নোটবন্দির সময়ে এই সমস্ত অ্যাকাউন্টের একাংশের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করা হয়েছিল বলেও দাবি ইডি আধিকারিকদের।
তদন্তকারীরা মনে করছেন, দুর্নীতির শিকড় অনেক গভীরে। সেখানে পৌঁছনো সম্ভব হলে দুর্নীতির টাকার অঙ্ক বাড়তে বাড়তে ৩০০ কোটির কাছে পৌঁছে যেতে পারে। শুধু তা-ই নয়, পার্থ-অর্পিতা ছাড়া যাঁদের কাছে ওই টাকা পৌঁছেছে, তাঁদের হদিসও সহজেই মিলবে। নতুন যে সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিস মিলেছে, সে ব্যাপারেই শুক্রবার পার্থকে জেরা করা হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও ইডির তরফে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু জানানো হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy